‍গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠায় মুহিবুল্লাহ খুন: পুলিশ

রোহিঙ্গা নেতা মুহাম্মদ মুহিবুল্লাহ শরণার্থী শিবিরে দিন দিন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠায় তাকে ‘থামাতে’ পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

কক্সবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Oct 2021, 04:31 PM
Updated : 23 Oct 2021, 05:09 PM

মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ‘সন্দেহে’ গ্রেপ্তার একজনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে শনিবার সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ১৪ এপিবিএন (আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন) এর অধিনায়ক পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নইমুল হক।

শনিবার বিকালে কক্সবাজারের উখিয়ায় নিজেদের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি হত্যায় জড়িত সন্দেহে আরও চারজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানান।

তাদের মধ্যে একজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পুলিশ সুপার জানান, “জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আজিজুল হক জানিয়েছেন, মুহিবুল্লাহকে হত্যার দুই দিন আগে ২৭ সেপ্টেম্বর রাতে লম্বাশিয়া মরকজ পাহাড়ে একটা সভা হয়। সেখানে আজিজুলসহ আরও চারজন উপস্থিত ছিলেন।

“ওই সভায় ‘তথাকথিত দুর্বৃত্তদের’ শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা মুহিবুল্লাহকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ হিসেবে বলা হয় মুহিবুল্লাহ বড় নেতা হয়ে উঠেছেন। রোহিঙ্গাদের নিজের দেশে ফেরাতে তৎপর এই ব্যক্তি দিনে দিনে ‍গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন। তাকে থামাতে হবে। সেখানেই মুহিবুল্লাহকে হত্যার পরিকল্পনা হয়।“

গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে কক্সবাজারের উখিয়ায় লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ মুহিবুল্লাহকে তার নিজ কার্যালয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। তার সংগঠনটি রোহিঙ্গাদের সম্মানজনকভাবে দেশে প্রত্যাবাসন নিয়ে কাজ করছে।

প্রত্যাবাসনের পক্ষে কাজ করায় ৪৮ বছর বয়সী এ রোহিঙ্গা নেতাকে হত্যা করা হয়েছে বলে বিভিন্ন পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, শনিবার ভোর ৪টার দিকে উখিয়ার লম্বাশিয়া ক্যাম্প এলাকা থেকে ওয়ানশুটার গানসহ আজিজুল হক নামে এক রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করে এপিবিএন সদস্যরা। এ ব্যক্তি  সরাসরি মুহিবুল্লাহ হত্যায় অংশ নেয় বলে দাবি এপিবিএন অধিনায়কের।

আজিজুলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পরে মো. রশিদ ওরফে মুরশিদ আমিন, মো. আনাছ ও নূর মোহাম্মদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের বিশেষায়িত এ ইউনিট।

এদিন বিকালেই আজিজুল কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জেরিন সুলতানার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

রোহিঙ্গা নেতা মুহাম্মদ মুহিবুল্লাহ হত্যায় জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার মো. রশিদ ওরফে মুরশিদ আমিন, মো. আনাছ ও নূর মোহাম্মদ।

হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনায় অংশ নেওয়া ‘তথাকথিত দুর্বৃত্ত’ বলতে পুলিশ কাদের বুঝিয়েছে সে বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। তবে হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই মুহিবুল্লাহর স্বজন ও সহকর্মীরা বলে আসছেন ‘আরসা’ সন্ত্রাসীরা এই হত্যায় যুক্ত।

তাদের দাবি, আরসার নেতারা মুহিবুল্লাহকে অনেকদিন থেকেই হুমকি দিয়ে আসছে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে আরসার অস্তিত্ব স্বীকার করা হচ্ছে না। আরসা বা আরাকান রিপাবলিকান স্যালভেশন আর্মি মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র সংগঠন। আরসার নামে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে হত্যা, হুমকি, লুট, চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য দিয়ে এপিবিএন অধিনায়ক হত্যাকাণ্ডের সময়কার বর্ণনা তুলে ধরেন।

পুলিশের ভাষ্য, “২৯ সেপ্টেম্বর রাতে এশার নামাজ পরে মুহিবুল্লাহ ক্যাম্পে নিজের শেডে ফিরে এলে তাকে বাইরে ডেকে আনেন মুরশিদ আমিন (গ্রেপ্তার হওয়া)। মুহিবুল্লাহকে বলা হয় প্রত্যাবাসন বিষয়ে কিছু লোক কথা বলতে চান। এই রোহিঙ্গা নেতা নিজের শেড থেকে বেরিয়ে অফিসে এসে বসেন। এই তথ্য মো. আনাছ ও নূর মোহাম্মদকে জানিয়ে দেন মুরশিদ আমিন।

“এসময় আনাস ও নূর দলের মূল হত্যাকারীদের সংকেত দিয়ে মুহিবুল্লাহর অবস্থান জানিয়ে দেন। ওই দুর্বৃত্তরা একটি পেপে বাগানে আগে থেকেই অবস্থান করছিলেন। সংকেত পেয়ে মুখোশধারী সাতজন মুহিবুল্লাহর অফিসে চলে আসে। তিনজন অফিসের ভেতরে ঢোকেন, চারজন দরজায় অবস্থান নেন। মুহিবুল্লাহ তখন ১০/১৫ জন লোকসহ অফিসের ভেতরে চেয়ারে বসে ছিলেন। মুহিবুল্লাহ চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালে তিনজন অস্ত্রধারী চারটি গুলি করে।এরপর তারা আবার পেপেবাগানের ভেতর দিয়ে পালিয়ে যায়।“

পুলিশ বলছে, হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া সাতজনের কাছে পাঁচটি আগ্নেয়াস্ত্র ছিল।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মুহিবুল্লাহ হত্যায় এর আগে চারজন রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করে এপিবিএন। এর মধ্যে মো. ইলিয়াছ নামে একজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।