‘বাহাদুরি থামান’, শাজাহান খানের উদ্দেশে মাদারীপুরের আওয়ামী লীগ নেতারা

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে এক বক্তব্যের জন্য নিজের এলাকা মাদারীপুরে আওয়ামী লীগের নেতাদের তোপের মুখে পড়েছেন ক্ষমতাসীন দলটির কেন্দ্রীয় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান।

মাদারীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Oct 2021, 06:57 PM
Updated : 19 Oct 2021, 06:58 PM

মঙ্গলবার মাদারীপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় জেলা নেতাদের সবাই একযোগে কেন্দ্রীয় নেতা ও স্থানীয় সংসদ সদস্য শাজাহান খানের সমালোচনা করেন।

জাসদ থেকে দীর্ঘদিন আগে আওয়ামী লীগে যোগ দিলেও শাজাহান খানকে নিয়ে মাদারীপুরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের সমালোচনা আগে থেকেই ছিল, যা নিয়ে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাকেও হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে।

গত ৯ সেপ্টেম্বর গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় শেখ হাসিনা মাদারীপুরে সাত নেতাকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশ দেন। তারপর শাজাহান খান অন্যদের নিয়ে সভার উদ্যোগ নিলেও তা এখনও ফলপ্রসূ হয়নি।

এর মধ্যে সম্প্রতি মাদারীপুরে একটি অনুষ্ঠানে শাজাহান খান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ার পক্ষে বক্তব্য দিলে তা নিয়ে নতুন করে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের রোষে পড়েন তিনি।

মঙ্গলবারের সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা বলেন, “তৃণমূল আওয়ামী লীগ এখন শক্তিশালী। তাই আপনি (শাজাহান খান) ভয় পাচ্ছেন? যদি নৌকা জিতে যায়, তাহলে বাহাদুরি থাকবে না।

“বাহাদুরি থামান! আর বাহাদুরি করা যাবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা রেখে তারপর নৌকার পক্ষে অবস্থান নিতে হবে আপনাকে। তা না হলে আপনি যখন সংসদ নির্বাচনে নৌকা চাইবেন, তখন কী হবে সেটা একবারও কি চিন্তা করেছেন?”

শাহাবুদ্দিন মোল্লা আরও বলেন, “নৌকা মার্কা দিয়ে ছয় বার এমপি হয়ে আপনি (শাহাজান খান) তার বিরোধিতা করছেন! এর রহস্য কী? এটা আমাদের জানা দরকার।

“নৌকার এমপি হয়ে লাভবান হয়েছেন। গাড়ি-বাড়ি, ধন-দৌলত কম হয়নি আপনার। আমাদের আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীর কিছু হয়নি। আপনার পরিবার ছাড়া আপনি কিছুই বোঝেন না। এখন দেখছেন নৌকা আপনার পরিবারের লোকজন আর আপনার দালালেরা পাবে না, তাই নৌকার বিরোধিতা শুরু করেছেন।”

শাজাহান খান। ফাইল ছবি

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে সভায় বলেন, “আপনার লোকজন নৌকা পাবে না সেটা ভেবে আপনার কাছে নৌকা এখন দুর্গন্ধ হয়েছে। নৌকা যেহেতু আপনার কাছে এতটাই দুর্গন্ধ হয়ে গেছে, আপনিও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কা চাওয়ার নৈতিক অধিকার রাখেন না।”

সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইউসুফ চৌকিদার বলেন, “তৃণমূলের মানুষ নৌকা চান, কিন্তু শাজাহান খান নৌকা চান না। তৃণমূলের ভোটে ও সমর্থনে তিনি বার বার নৌকায় নির্বাচিত সাংসদ, দুইবারের মন্ত্রী। তিনি এসব ভুলে গেছেন! তার ভুল না শোধরালে তৃণমূলের নেতা–কর্মীরা তাঁকে ক্ষমা করবেন না।”

ইউসুফ চোকদারের সভাপতিত্বে এই সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আজাদুর রহমান মুন্সি, পৌর মেয়র খালিদ হোসেন ইয়াদ বক্তব্য রাখেন। সদর উপজেলার ১৫ ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের নেতারা সভায় উপস্থিত ছিলেন।

মঙ্গলবারের সভায় আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগের বিষয়ে শাজাহান খানের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

তবে এর আগেও স্থানীয় নেতাদের এমন বিরোধিতার জবাবে তিনি বলেছিলেন, “আমি সব সময়ই দলের নিয়ম মেনে রাজনীতি করি। এখনও তাই করছি। জেলা আওয়ামী লীগ ও কিছু নেতাকর্মী আমার বিরোধিতা করে বক্তব্য দিচ্ছেন। এটাই তাদের কাজ। এসব নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই।”