যমুনা নদীতে ভাসমান নৌকায় ‘জমজমাট’ পাটের হাট

সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে যমুনা নদীতে জমে উঠেছে ভাসমান নৌকায় পাটের হাট।

ইসরাইল হোসেন বাবু সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Sept 2021, 10:18 AM
Updated : 26 Sept 2021, 10:18 AM

কৃষকরা জানান, বর্তমানে বাজারে পাটের ‘দাম ভাল‘ থাকায় উৎপাদন খরচ পুসিয়ে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।

প্রতি সপ্তাহের শনি ও বুধবার পাটের এই হাট বসে। ভোর থেকে শুরু হয়ে চলে সকাল ১১টা পর্যন্ত। ক্রেতা ও বিক্রেতাদের আসা যাওয়া ও বেচাকেনা সব কিছুই চলে নৌকায়।

সকলের হাঁক ডাকে জমে উঠে বেচাকেনা। প্রতি মন পাট বিক্রি হয় আড়াই থেকে তিন হাজার টাকায়। 

জামালপুরের সরিষাবাড়ি, মাদারগঞ্জ, বগুড়ার সারিয়াকান্দি, ধুনট, শেরপুর, টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর, কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারি ও সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা থেকে কৃষক ও ব্যাপারীরা নৌকায় করে এই হাটে পাট ক্রয় বিক্রয় করতে আসেন।

নাটুয়ারপাড়ার কৃষক আবুল কাশেম জানান, তিনি ৫ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলেন; ফলন ভালো হয়েছে। বিক্রি করে ও ভাল দাম পেয়েছেন। ।

খাসরাজবাড়ি এলাকার কৃষক জমশের আলী বলেন, “এবার পাট বিক্রি করে ভাল দাম পেয়েছি। প্রতিমণ পাট আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।”

জামালপুর থেকে আসা পাটের পাইকার ফরিদ উদ্দিন বলেন, ভাসমান হাটে পাট কিনে এক নৌকা থেকে অন্য নৌকায় তোলা সহজ হয়। তবে নদীতে যোগাযোগ সুবিধা ভাল এবং পরিবহন খরচও কম হয়।

প্রতি হাটে ৪০/৬০ মণ পাট ক্রয়ের কথাও জানান তিনি।

হাট কমিটির সদস্য আব্দুর রহিম মাস্টার বলেন, “পাট ক্রয়-বিক্রয় করতে কাজিপুরের চরাঞ্চলের কৃষকদের পাশাপাশি টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর, কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারি ও জামালপুরের মাদারগঞ্জ থেকে অনেক পাইকার এই হাটে আসেন।

“কেনাবেচা এবং আসা যাওয়া সহজ হওয়ায় এই হাটের কদর দিনদিন বাড়ছে। এবার পাটের দাম ভাল থাকায় কৃষকরাও খুশি।”

হাট ইজারাদার ও নাটুয়ারপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান চাঁন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রতি হাটে প্রায় এক থেকে দেড় হাজার মণ পাট ক্রয়-বিক্রয় হয়। অগাস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর এই তিন মাস ভাসমান হাটে পাট ক্রয়-বিক্রয়ের প্রকৃত মৌসুম। নৌকা ছাড়া শুকনো স্থানেও এখানে হাট বসে।

প্রতি মণ পাটে ইজারা খরচ মাত্র ৫ টাকা নেওয়া হয় বলে জানান তিনি। 

এ বিষয়ে কাজিপুর উপজেলা কৃষি অফিসার রেজাউল করিম বলেন, চলতি বছর বন্যার আগেই কৃষকরা পাট কেটেছে। যে কারণে পাটের তেমন ক্ষতি হয়নি। আগের সময়ের তুলনায় দাম বেড়ে যাওয়ায় এ অঞ্চলের কৃষকরা এখন পাট চাষে মনোযোগী হচ্ছে।

“এ বছর উপজেলায় ৫ হাজার ৫৫৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। এতে ১২ হাজার ৭২৮ মেট্রিকটন পাট উৎপাদন হয়েছে।”

নাটুয়ারপাড়া হাট ছাড়াও উপজেলার সোনামুখী, ঢেকুরিয়া ও মেঘাই হাটেও লাখ লাখ টাকার পাট কেনাবেচা হয় বলেও জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।

গত বছরের তুলনায় এ বছর জেলায় ‘কয়েক গুণ বেশি’ পাট উৎপাদন হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আবু হানিফ।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এ বছর জেলার ৯টি উপজেলায় ১৫ হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। যা থেকে ৩৪ হাজার ৩৩০ মেট্রিক টন পাট সংগ্রহ হয়েছে।

“পরিবেশ বান্ধব পাটের মোড়কসহ বিভিন্ন কাজে পাট জাতীয় পণ্যের ব্যবহার বাড়লে পাটের চাহিদা যেমন বাড়বে, তেমনি চাষিরা লাভবান হবেন।”