উচ্ছিষ্ট দিয়ে সৌন্দর্যচর্চায় মৌলভীবাজারের দম্পতি

প্রয়োজন শেষে ফেলে দেওয়া উচ্ছিষ্ট দিয়ে সাজের জিনিস বানাচ্ছেন মৌলভীবাজারের দম্পতি ফেলিক্স আসংক্রা ও তার স্ত্রী জোছনা আরেং।

বিকুল চক্রবর্তী মৌলভীবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 July 2021, 09:09 AM
Updated : 6 July 2021, 09:11 AM

জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিদ্যাবিল চা বাগানের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী তারা।

ফেলিক্স বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চা বাগান থেকে অবসর নেওয়ার পর বাড়িতে বসেই ছিলেন। আর জোছনার শখ ছিল ফুলবাগান করার। বেকার সময় কাজে লাগাতে তারা কিছু করার উদ্যোগ নেন।

প্লাস্টিকের বোতল, নারকেলের ছোবড়া, নষ্ট বাইসাইকেলের রিং, ভাঙা মোড়া, দইয়ের পাতিলসহ বিভিন্ন উপাদান কাজে লাগিয়ে তৈরি করতে থাকেন দৃষ্টিনন্দন সাজের জিনিস।

ফেলিক্স বলেন, চা বাগানের ভেতরে অল্প একটু জায়গায় পাঁচ শতাধিক দৃষ্টি নন্দন চারা রোপণ করেছেন তারা। চারা রাখার কৌশলও তারা নান্দনিক করে তুলেছেন।

সরজমিনে দেখা গেছে, প্লাস্টিকের বোতল কেটে নকশা করেছেন তারা। সেগুলো রেখেছেন বারান্দায় ও ঘরের দেয়ালে। সাইকেলের রিং-এ ঝুলিয় দিয়েছেন ১৫-২০টি টব, যেগুলো উচ্ছিষ্ট দিয়েই তৈরি। নাড়া দিলে সব গাছ চরকির মতো ঘুরতে থাকে।

তারা জানান, তাদের বাড়িতে বিভিন্ন প্রজাতির ফুল, পাতাবাহার, গোলাপ, গাঁদা, চন্দ্র মল্লিকাসহ বিরল সব গাছ রয়েছে। রয়েছে বেশ কিছু বিরল অরকিড ও ক্যাকটাস।

এসব কাজে তাদের ছেলেমেয়ে ও নাতিরাও সাহায্য করেন। বেশির ভাগ গাছ স্থানান্তর করা সহজ হওয়ায় অনেকেই তাদের কাছ থেকে নিয়ে যান। অন্যদের দেওয়ার জন্য এখন তারা আলাদাভাবে চারা রোপণও শুরু করেছেন। তৈরি করেছেন ছোট একটি নার্সারি। নাম দিয়েছেন ‘জোছনালয়’।

জোছনা আরেং বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাগান করা তার শখ। তিনি যেখানে বেড়াতে যান, ভাল কোনো গাছ দেখেলে সংগ্রহের চেষ্টা করেন।

“মেঘালয় থেকেও বেশ কিছু বিরল ফুল ও পাতাবাহারের গাছ সংগ্রহ করেছি।”

শ্রীমঙ্গল উপজেলা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সমন্বয়ক তাজুল ইসলাম জাবেদ বলেন, “ফেলিক্স ও জোছনা এলাকায় সাড়া জাগানো কাজ করছেন। তাদের কাজ দেখলে মন ভাল হয়ে যায়। তাদের দেখাদেখি এখন অনেকেই ফেলনা জিনিস ব্যবহারে উৎসাহী হচ্ছেন।”

ফেলিক্স উৎসাহী ও উদ্যোগী কৃষক বলে জানান শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “তাদের যে সামান্য জমি রয়েছে তারই সর্বোত্তম ব্যবহার করে বিভিন্ন রকমের সবজি চাষ করছেন তারা। তারা ঘরের ফেলনা জিনিস যেমন কাজে লাগিয়েছেন তেমনি বাড়ির সব জায়গাও কাজে লাগিয়ে  সবজি ও ফুলের গাছ লাগিয়েছেন টবে।”

শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, “ফেলিক্স পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর প্লাস্টিকের পরিত্যক্ত সামগ্রী কাজে লাগিয়ে পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখছেন।”