কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ‘হারালেন’ পরীক্ষার উত্তরপত্র

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের এক শিক্ষক পরীক্ষার উত্তরপত্র হারিয়ে ফেলার অভিযোগে শাস্তির মুখোমুখি হচ্ছেন।

কুমিল্লা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 June 2021, 06:19 PM
Updated : 29 June 2021, 06:19 PM

আর হারিয়ে যাওয়া কোর্সের ফলাফল একই সেমিস্টারের অন্য চারটি কোর্সের ফলাফলের গড় হিসাব করে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

গত রোববার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০তম সিন্ডিকেটে এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা জানান, গত বছরের ১ মার্চ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের এমটিএইচ-২২১: রিয়াল এনালাইসিস-২ কোর্সের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

পরীক্ষার পর এই কোর্সের শিক্ষক গণিত বিভাগের প্রভাষক মো. আতিকুর রহমান পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ে এই কোর্সের ফলাফল জমা দেন।

কিন্তু দ্বিতীয় পরীক্ষকের কাছে পাঠানোর জন্য উত্তরপত্র খুঁজতে গিয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে তা পাওয়া যায়নি। নিয়মানুযায়ী সংশ্লিষ্ট কোর্স শিক্ষককে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করে তা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ে জমা দিতে হয়। এরপর দ্বিতীয় পরীক্ষকের কাছে মূল্যায়নের জন্য ওই উত্তরপত্র পাঠানো হয়। উত্তরপত্র না পাওয়ায় পরীক্ষার দেড় বছরেও এই ব্যাচের ফলাফল প্রকাশ করা যায়নি।

এই ঘটনা তদন্তে চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি একাডেমিক কাউন্সিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আসাদুজ্জামানকে আহ্বায়ক, ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ নুরুল করিম চৌধুরীকে সদস্য সচিব, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. দুলাল চন্দ্র নন্দী এবং গণিত বিভাগের প্রধান খলিফা মোহাম্মদ হেলালকে সদস্য করে একটি কমিটি করা হয়। তদন্ত শেষে গত ২৩ জুন প্রতিবেদন জমা দেন তারা।

তদন্তে আতিকুর রহমানের দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে কমিটির সদস্যরা জানান।

তদন্ত কমিটির আহবায়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আসাদুজ্জামান বলেন, “উত্তরপত্র শিক্ষকের কাছ থেকে হারিয়েছে, এটা নিশ্চিত। ওই শিক্ষক যদি জমা দিয়েও থাকেন তার কাছে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কার্যালয় কর্তৃক পরীক্ষার খাতা রিসিভ করার ডকুমেন্ট নেই। এখানে তার রেসপনসিবিলিটি নিতে হবে যে তিনি হারিয়েছেন।”

তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০তম সিন্ডিকেট শিক্ষক আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেয় বলে জানান তিনি।

পাশাপাশি ওই সেমিস্টারের বাকি চার কোর্সের ফলাফলের গড় হিসাব করে হারিয়ে যাওয়া উত্তরপত্রের ফলাফল প্রকাশেরও ঘোষণা দেওয়া হয় বলে তিনি জানান।

অধ্যাপক আসাদুজ্জামান আরও বলেন, “খাতা যেহেতু জমা হয়নি সেহেতু নম্বরটা আদৌ খাতা দেখে দেওয়া হয়েছে কিনা তা স্পষ্ট নয়। তাই বাকি যে চার-পাঁচটা কোর্স আছে তার নম্বর এভারেজ করে এ কোর্সের রেজাল্ট দেওয়া হবে।”

রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো আবু তাহের বলেন, “আমাদের যেহেতু নিজস্ব শৃঙ্খলাবিধি নেই, তাই সিন্ডিকেটে সরকারি বিধিমালা ২০১৮ (শৃঙ্খলা ও আপিল) অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটা এখন বিভাগীয় প্রসিডিওরাল অনুযায়ী হবে।”

এ বিষয়ে মো. আতিকুর রহমান বলেন, “আমি এ বিষয়ে তদন্ত কমিটিকে লিখিত দিয়েছি। আর এ বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে কিছু জানায়নি এখনও, তাই কিছু বলতে পারছি না।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন সরকারি বিধিমালা ২০১৮ (শৃঙ্খলা ও আপিল) অনুসরণ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।