শতবর্ষী জীবিত ব্যক্তিকে মৃত দেখানোয় ভাতা বন্ধ

পাবনার সুজানগরে শতবর্ষী এক ব্যক্তি জীবিত থাকলেও ‘জাতীয় পরিচয়পত্রে মৃত দেখানোয়’ তাকে বয়ষ্ক ভাতা দেওয়া বন্ধ হয়ে গেছে।

পাবনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 June 2021, 02:06 PM
Updated : 3 June 2021, 04:56 PM

জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী ১৯১৭ সালের ১৮ অগাস্ট জন্মগ্রহণ করা লোকমান হোসেন মন্ডল সুজানগর উপজেলার সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের গুপিনপুর গ্রামের উজির মন্ডলের ছেলে।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের ভাতা বই থেকে জানা যায়, গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বয়ষ্ক ভাতা পেয়েছেন লোকমান হোসেন মন্ডল। তারপর থেকে তার ভাতা বন্ধ হয়ে যায়।

সুজানগর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নাজমুল হাসান বলেন, নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকার সার্ভারে লোকমান হোসেন মন্ডলের জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর দিয়ে অনুসন্ধান করলে তাকে পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ তাকে মৃত দেখানো হয়েছে। এজন্য তার বয়স্ক ভাতাও বন্ধ করা হয়েছে।

লোকমান হোসেন ভাতা বন্ধের পর ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন এনআইডিতে কাগজে-কলমে তিনি আর জীবিত নন। উপজেলা নির্বাচন অফিসসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেও তাকে নথি সংশোধন করাতে পারেননি তিনি।

বয়সের ভারে নুয়ে পড়া লোকমান হোসেন বলেন, “আমি জীবিত থাকতে কীভাবে মৃত দেখানো হল? কারা এমনটি করলেন কিছুই জানি না।”

কৃষক লোকমানের স্ত্রী মারা গেছেন অনেক আগেই। তার চার মেয়ে ও তিন ছেলে। মেয়েদের বিয়ে হয়ে সংসার পেতেছে। এক সময় তিন ছেলের সাথেই থাকতেন তিনি। গত বছর দুয়েক আগে তার এক ছেলে মারাও গেছেন।

লোকমান হোসেনের ছেলে ইব্রাহিম হোসেন বলেন, আমার ভাই রুকা হোসেন মারা যাওয়ার পর ভাবি আর তার মেয়ের সাথে বসবাস করেন বাবা।

গুপিনপুরের লোকমান হোসেন মন্ডল জীবিত আছেন তা স্বীকার করেন সাতবাড়ীয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামছুল আলম।

তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাকে কখনো মৃত ঘোষণা করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কীভাবে তাকে মৃত ভেবে ভাতা বন্ধ করেছে বিষয়টি আমার বোধগম্য নয়।

বয়ষ্করা এমনিতেই মানবেতর জীবন যাপন করে উল্লেখ করে চেয়ারম্যান জানান, বছর সাতেক আগে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে লোকমান হোসেনকে বয়স্ক ভাতার কার্ডটি করে দেওয়া হয়। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে তার ৫০০ টাকা ভাতা বন্ধ রয়েছে।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফাতেমা খাতুন বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সংগ্রহকারীরা নির্বাচন অফিসে ভুল তথ্য দেওয়ার কারণে এমনটি হয়েছে। তবে ভুক্তভোগী আবেদন করলে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করে দেওয়া হবে।

সুজানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রওশন আলী বলেন, “আমি বিষয়টি শোনার সাথে সাথেই উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলেছি।”

তবে শুধু লোকমান হোসেনই নন এমন আরও ঘটনার কথা জানালেন সুজানগর সমাজসেবা অফিসের ইউনিয়ন সমন্বয়কারী নূরে শাহরিন।

তিনি বলেন, “লোকমান হোসেন মন্ডলের মতো একই ইউনিয়নে শ্রী কণিকা রাণী সাহা নামে আরও এক নারীর ক্ষেত্রে এই ঘটনা ঘটেছে।”