সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী হাটে টোল আদায়ের তালিকা টানানো বাধ্যতামূলক হলেও ডোমার উপজেলার গোমনাতী ইউনিয়নের এ হাটে ঝোলানো হয়নি কোনো তালিকা।
হাটে ছাগলের টোল আদায়কারী মফিজার রহমান বলেন,“আমরা ইজারাদারের নির্দেশ মতো কাজ করি। তাই ইজারাদার আমাদের যেভাবে টোল নিতে বলেছেন, আমরা সেভাবে নিই।”
অনিয়মের বিষয়ে হাটের ইজারাদার খাইরুল ইসলাম জানান, ১৪২৮ বাংলা সনের জন্য ৬৩ লাখ ৫৩ হাজার টাকায় হাটটি ইজারা নিয়েছেন। আশপাশের হাটগুলোতে যে হারে টোল নেয় তারাও সেই হারে নিচ্ছেন বলে দাবি করেন।
তবে সরকার নির্ধারিত হারের চেয়ে বেশি টোল কেন নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,“করোনার কারণে হাটে বেচাকেনা কম হওয়ায় লোকসান হচ্ছে। তাই সামান্য কিছু বেশি টোল নিচ্ছি।“
সপ্তাহে মঙ্গল ও শুক্রবার বসে এ হাট। গত মঙ্গল ও শুক্রবার সরেজমিনে আমবাড়ী হাটে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন স্থানে গরু, ছাগল, ধান, চাল, পাট, হাঁস, মুরগি, কবুতর, সুপারি ও বাইসাইকেলসহ নানা পণ্য ও পশুপাখি বেচাকেনা চলছে।
হাটের প্রবেশমুখে কথা হয় পঞ্চগড় জেলা থেকে আসা গরু ব্যবসায়ী দুই ভাই হেলাল উদ্দিন (৫০) ও মো. স্বপন হোসেনের (৪০) সাথে।
হেলাল উদ্দিন বলেন,“অন্যান্য হাটের চেয়ে এই আমবাড়ী হাটে গরু কিনলে টোলের পরিমাণ বেশি দিতে হয়। নতুন ইজারাদার চলতি সনে টোল বাড়িয়েছেন।”
স্বপন হোসেন বলেন,“আগেও এ হাটে এসে গরু কিনে নিয়ে গেছি। তখন যে ইজারাদার ছিলেন, তিনি সরকার নির্ধারিত টোল আদায় করতেন। কিন্তু এখন যিনি হাট ইজারা নিয়েছেন তিনি গরু প্রতি ৫০০ টাকা করে নিচ্ছেন।”
তিনি বলছেন, গরু প্রতি ৫০০ টাকা টোল অন্যান্য হাটের টোলের তুলনায় দ্বিগুণ।
ওই হাটে গরু কিনতে আসা পাঙ্গামটকপুর ইউনিয়নের পাঙ্গা গ্রাম শফিক উদ্দিন বলেন,“অন্যান্য হাটের থেকে এ হাটে টোলের পরিমাণ বেশি। একটি গরুর জন্য ক্রেতা ও বিক্রেতাকে মোট পাঁচশ’ টাকা টোল দিতে হয়।”
ডোমারের জোড়াবাড়ী গ্রামের গরু ব্যবসায়ী মো. ওয়ালি মাহমুদ (৩৬) বলেন,“আমরা দীর্ঘদিন থেকে এই হাটে যাতায়াত করি। কোথাও টোল তালিকা নেই। ইজারাদার যে পরিমাণ টোল দাবি করে আমরা তাই দিতে বাধ্য থাকি।”
ঠাকুরগাঁও জেলা থেকে গরু ক্রয় করতে আসা মহির উদ্দিন বলেন, “প্রশাসনের লোকজন এসব বিষয় জানার পরও এড়িয়ে যাচ্ছেন। ফলে টোল আদায়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন ইজারাদাসহ তার লোকজন।”
হাট ঘুরে এ রকম অনেক অসঙ্গতি ও অনিয়ম চোখে পড়ে।
এ নিয়ে আমবাড়ী হাট পরিচালনা কমিটির সভাপতি গোমনাতী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ বলেন,“পদাধিকার বলে আমি হাট কমিটির সভাপতি। প্রতি হাটে ক্রেতা-বিক্রেতারা ইজারাদারের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত টোল আদায় করার অভিযোগ করছেন আমার কাছে। মৌখিকভাবে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।”
ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনা শবনম বলেন,“এর আগেও অনেকেই আমাকে অভিযোগ করেছেন। খোঁজ নিয়ে দেখব যদি কেউ অতিরিক্ত টোল নিয়ে থাকেন তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”