দূরপাল্লায় ঈদফিরতি মানুষের সঙ্গী ভোগান্তি

করোনাভাইরাস মহামারীতে বিধিনিষেধের মধ্যে দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ঈদ শেষে মানুষ নানা ভোগান্তি সঙ্গী করে ঢাকা ফিরছে।

আসাদুজ্জামান আসাদ, বেনাপোল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 May 2021, 05:11 PM
Updated : 18 May 2021, 05:11 PM

গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, পিক-আপসহ নানা যানবাহনে ভেঙে ভেঙে তাদের ঢাকা পৌঁছতে হচ্ছে। এজন্য তাদের গুনতে হচ্ছে তিন-চারগুণ ভাড়া।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলাগুলোর মানুষ ঈদের দুদিন পর থেকেই ফিরতে শুরু করেছে। কেউ কেউ ঢাকা হয়ে চট্টগ্রামসহ অন্য জেলায়ও যাচ্ছেন।

বেনাপোলে যাত্রীর অপেক্ষায় থাকা একটি মাইক্রোবাসে ওঠা এক যাত্রী মওদুদ আহমেদের সঙ্গে কথা হয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদকের।

মওদুদ বলেন, “যাওয়া তো লাগবেই। তাই যেমনে পারতাছি যাইতাছি। এই গাড়ি ঢাকা পর্যন্ত ক্যামনে যাইব সেটাই ভাবতাছি।”

'কে লাইন পরিবহনের' জামতলা কাউন্টারে বসেছিলেন শার্শার বেনেখড়ি গ্রামের মাজেদুল হক। তিনি চট্রগ্রামে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত আছেন। ঈদের দু'দিন আগে এসেছিলেন গ্রামের বাড়ি।

মাজেদুল বলেন, “বুধবার অফিস করতে হবে তাই বিকল্প পদ্ধতিতে যাওয়ার চেষ্টা করছি। বিমানের টিকিট পাইনি। সাতক্ষীরা থেকে আসা মাইক্রোবাসে একটা সিটের ব্যবস্থা করে দিয়েছে এই কাউন্টার। অন্তত ঢাকা পর্যন্ত যাই। ওখান পৌছে চট্রগ্রামের কথা ভাবব।”

ঢাকা-বেনাপোল মহাসড়কে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক তিনচাকার যানবাহন চলছে। এলাকার মধ্যে এগুলো একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত যাত্রী বহন করছে। গণপরিবহনের জায়গা নিয়েছে ট্রাক, পিকআপ, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার।

পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নাভারন মোড়ে গাড়ির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলেন আশরাফুল ইসলাম। তিনি ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। উদ্বেগ নিয়ে ঘণ্টাখানেক দাঁড়িয়ে ছিলেন গাড়ির আশায়।

আশরাফুল বলেন, “আজকে ছুটি শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাই যেতেই হবে। কাল থেকে অফিস করতে হবে। শেষ ভরসা হিসেবে অপেক্ষায় আছি কোনো মাইক্রোবাসের। না হলে পিকআপে পরিবার নিয়ে যেতেই হবে।”

ভোর থেকেই যশোর-সাতক্ষীরা ও যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক জুড়ে বহু প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।

অনেকে ব্যক্তিগত গাড়িতে ঢাকা ফিরছেন। কেউবা প্রাইভেট কার ভাড়া করেছেন। আবার অনেকে মাইক্রোবাসের মত যানে কয়েকজন মিলে শেয়ারে ঢাকার পথ ধরেছেন।

তবে এসব যানে সাধারণ সময়ের তুলনায় বর্তমানে দুই থেকে তিন গুন পর্যন্ত বেশি ভাড়া গুনতে হচ্ছে। অনেকে আবার মোটরসাইকেলের মত দুই চাকার যানে পাড়ি দিচ্ছেন দীর্ঘ পথ। সপরিবারেও অনেকে ঢাকার পথে রওনা দিয়েছেন মোটরসাইকেলে করে।

‘পথে কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা’ প্রশ্নে প্রাইভেটকার চালক জাকির হোসেন বলেন, “সমস্যা তো কিছু অইবই। পুলিশি ঝামেলা থাকবই। এরপরও যাইতে তো ওইব। করোনায় প্রায় এক মাস বওয়া আছিলাম। পরিবহন বন্ধ থাকায় কিছু ইনকাম হইল। আর মাইনষের কত উপকার অইল বলেন!”

তবে কোনো যানবাহনেই স্বাস্থ্যবিধি মানার লক্ষণ দেখা যায়নি। মানুষজন গায়ে গা ঘেঁষে দীর্ঘপথে যাত্রা করছে। কেউ কেউ মাস্ক পড়লেও অনেকের মুখে তাও নেই।

শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মাইক্রোবাস প্রতিজন যাত্রীর কাছ থেকে ঢাকার ভাড়া নিচ্ছে দুই হাজার টাকা; আর নন এসি মাইক্রোবাস নিচ্ছে দেড় হাজার টাকা। প্রাইভেটকার যাচ্ছে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকায়।