‘মোবাইল ফোনের রেকর্ড দেখে’ স্বামী হত্যার অভিযোগে প্রেমিকসহ স্ত্রী গ্রেপ্তার

‘হারানো মোবাইল ফোনের রেকর্ডের সূত্র ধরে’ বরগুনায় এক স্কুল শিক্ষককে হত্যার অভিযোগে প্রেমিকসহ স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বরগুনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Feb 2021, 09:00 AM
Updated : 11 Feb 2021, 10:39 AM

সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের বড়ইতলা গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নাসির উদ্দিন হাওলাদারকে (৪০) খুনের অভিযোগে এ দুইজনকে বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তাররা হলেন, নিহতের স্ত্রী ফাতেমা মিতু (২৪) এবং তার পরকীয়া প্রেমিক রাজু মিয়া (২০)।

বৃহস্পতিবার সকালে সদর থানায় বরগুনার পুলিশ সুপার মুহম্মদ জাহাঙ্গীর মল্লিক জানিয়েছেন, ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিতে রাজি হয়েছেন। তারপরেই আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে কারাগারে পাঠানো হবে।

এ সময় সাংবাদিকদের সামনেও ২০২০ সালের ২৩ মে ঈদের আগের রাতে এ হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন মিতু এবং রাজু।

বরগুনা থানার ওসি তারিকুল ইসলাম বলেন, রাজুর হারিয়ে ফেলা মোবাইল ফোনটি ঢলুয়া ইউনিয়নের পোটকখালী বাজারের দোকানদার আরেক রাজু পান। ওই মোবাইল ফোনের কল রেকর্ডে হত্যার পরিকল্পনার কথা জানা যায়।

“তাদের কল রেকর্ডসহ মোবাইল ফোনটি ওসির হাতে চলে আসলে, বুধবার রাতেই মিতু ও রাজুকে গ্রেপ্তার করা হয়।”

এ ঘটনায় নাসিরের বড় ভাই আবদুল জলিল হাওলাদার বাদী হয়ে মিতু ও রাজুকে আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন।

বাদী আবদুল জলিল হাওলাদার জানিয়েছেন, তার ছোট ভাই নাসির উদ্দিন হাওলাদারের সাথে দশ বছর আগে বরগুনা পৌরসভার শহীদ স্মৃতি সড়কের দলিল লেখক মাহতাব হোসেন মৃধার মেয়ে ফাতেমা মিতুর বিয়ে হয়। এ দম্পতির ৮ বছরের একটি মেয়ে এবং ৫ বছরের একটি ছেলে রয়েছে।

“দুই বছর আগে ঢলুয়া ইউনিয়নের গোলবুনিয়া গ্রামের আবদুল বারেকের কলেজ পড়ুয়া ছেলে রাজুর সাথে মিতুর পরকীয়া শুরু হয়।

“বিষয়টি নাসির টের পেলে তাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেবার সিদ্ধান্ত নেয়।”

এদিকে, থানায় সাংবাদিকদের সামনে ফাতেমা মিতু তার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার কথা স্বীকার করে জানিয়েছেন, তাদের পরকীয়া সম্পর্ককে দীর্ঘস্থায়ী রূপ দিতে দুইজনে মিলে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।

তিনি জানান, ২৩ মে বিকালে রাজু ঘুমের ওষুধ কিনে তাকে দিয়ে আসেন।

“সন্ধ্যার পর নাসির মজা করে কাঁঠাল খায়। ঘুমের আগে কৌশলে নাসিরকে অতিরিক্ত পরিমাণ ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয়।”

রাত ১১টার পরে রাজুকে মোবাইল ফোনে তিনি নাসিরের ঘুমিয়ে পড়ার খবর দিয়ে লেখেন, ‘তুমি চলে আসো’ বলেন তিনি।

রাত সাড়ে ১১টার দিকে মিতু ও রাজু মিলে নাসিরকে কম্বল চাপা দিয়ে মেরে ফেলার কথা স্বীকার করে মিতু জানান, তার ইচ্ছে ছিল রাজুকে বিয়ে করে নতুন সংসার শুরু করবেন।

গ্রেপ্তার রাজু সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, নাসির তাদের সম্পর্কের কথা জেনে ফেলায় পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়।

তিনি বলেন, তাদের ধারনা ছিল ঈদের দিন সবাই ব্যস্ত থাকবে। কেউ পরিকল্পিত হত্যার বিষয়টি বুঝতে পারবে না।

রাজু আরও জানান, সপ্তাহ খানেক আগে তার মোবাইল ফোনটি হারিয়ে ফেলেন তিনি।

যে মোবাইল ফোনের রেকর্ড থেকেই এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শনাক্ত করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।