নানা সমস্যায় বেহাল কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল

চিকিৎসক সংকটসহ নানা সমস্যায় বেহাল হয়ে পড়েছে কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল।

মারুফ আহমেদ কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Nov 2020, 03:25 PM
Updated : 30 Nov 2020, 03:52 PM

এই হাসপাতালের প্রয়োজনীয় চিকিৎসকসহ অন্যান্য লোকবল নেই, সিসিইউ বন্ধ, একমাত্র অ্যাম্বুলেন্সটি জরাজীর্ণ হয়ে আছে।

কার্ডিওলজি, নাক, কান ও গলা, চর্ম ও যৌন এবং ডেন্টাল বিভাগ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এখানে চিকিৎসা নিতে আসা অনেক রোগী তাই বেসরকারি হাসপাতালে চলে যায়।   

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও উপ পরিচালক ডা. মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, “৬৫ জন চিকিৎসকের মধ্যে ৪২টি পদ শূন্য রয়েছে। মাত্র ২৩ জন চিকিৎসক দিয়ে খুঁড়িয়ে চলছে এই হাসপাতালের কার্যক্রম। এছাড়া উন্নয়ন খাতের চারজন চিকিৎসক রয়েছেন।”

তিনি বলেন, চিকিৎসক না থাকার কারণে কার্ডিয়াক, নাক, কান ও গলা, চর্ম ও যৌন এবং ডেন্টালের মত গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে।

“এছাড়াও যেসব বিভাগে চিকিৎসক আছে, সেগুলোতে প্রয়োজনের চেয়ে কনসালটেন্ট ও বিশেষজ্ঞসহ কম সংখ্যক চিকিৎসক থাকার কারণে হাসপাতালে ভর্তি ৪/৫ শত রোগী ও প্রতিদিন বহির্বিভাগে আসা দেড় থেকে দুই হাজার রোগীর চিকিৎসা সেবা সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।”

চিকিৎসক না থাকার কারণে অব্যবহৃত চিকিৎসা সরঞ্জামাদি নষ্ট হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

চিকিৎসক শুন্যতা ছাড়াও প্যাথলজিসহ বিভিন্ন বিভাগে মেডিকেল টেকনোলজিস্টসহ প্রয়োজনীয় লোকবল সংকটের কারণে প্রতিদিনই অনেক রোগী চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মচারী জানান।

ডা. হেলাল উদ্দিন জানান, চিকিৎসক সংকটের কারণে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে হৃদযন্ত্রের সমস্যাজনিত কার্ডিয়াক রোগীরা। কোনো চিকিৎসক না থাকায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ২০ শয্যাবিশিষ্ট কার্ডিয়াক বিভাগ বা সিসিইউ দশ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। এর ফলে কার্ডিয়াক রোগীরা ঝুঁকি নিয়ে হাসপাতালের অন্যান্য সাধারণ ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন অথবা বাধ্য হয়ে অন্য কোনো হাসপাতালে চলে যাচ্ছেন।

সিপিবির কিশোরগঞ্জ জেলা সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক বলেন, “আমার কার্ডিয়াক সমস্যা হওয়ায় আমি এই হাসপাতালে আসি। চিকিৎসকরা আমাকে হাসাপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু এই হাসপাতালের সিসিইউ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় এবং অন্য কোনো হাসপাতালে যাওয়ার সুযোগ না থাকায় আমি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখানেই সাধারণ ওয়ার্ডে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেই।”

শুধু তিনি নন, সিসিইউ বন্ধ থাকায় অনেক রোগী চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং অনেকেই বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে বলে তার ভাষ্য।

স্থানীয় একটি কলেজের প্রভাষক রিয়াদ রেজা বলেন, “আমার এক আত্মীয়ের স্ট্রোক [মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ] করায় এই হাসপাতালে নিয়ে আসি। কিন্তু সিসিইউ বন্ধ থাকায় প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করাতে বাধ্য হই।”

সদর উপজেলার পাবইকান্দি গ্রামের সরলা খাতুন বলেন, !চর্ম রোগের ডাক্তার দেখাতে তিনদিন এসে হাসপাতাল থেকে ঘুরে ফিরে গেছি। ডাক্তার না থাকায় চিকিৎসা পাচ্ছি না।”

মহিষাকান্দি গ্রামের যুবক আনার মিয়া বলেন, “দাঁতের ডাক্তার দেখাতে কয়েকদিন এসে ফিরে গেছি। ডাক্তার কবে আসবে তা জিজ্ঞোস করে কোনো সদুত্তর পাই না।”

অ্যাম্বুলেন্স চালক সাইফুল ইসলাম বলেন, চিকিৎসক সংকটের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ এই হাসপাতালটিতে একটি মাত্র অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও সেটি ১৭/১৮ বছরের পুরাতন হওয়ায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। এই কারণে এটি রাস্তায় যখন-তখন বিকল হয়ে পড়ার কারণে সময়মত মূমুর্ষু রোগী নিয়ে সময়মত হাসপাতালে পৌঁছানো যায় না।

একটি মাত্র অ্যাম্বুলেন্স হওয়ায় রোগী নিয়ে কোথাও চলে গেলে অন্যান্য মূমুর্ষু রোগীরা বিপাকে পড়েন বলে জানান তিনি।

তত্ত্বাবধায়ক ও উপ-পরিচালক হেলাল উদ্দিন আরও জানান, বিরাজমান সমস্যাগুলি সমাধানের ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ঊর্ধ্বতন মহলকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। সেখান থেকে দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস পাওয়া গেছে।