কুড়িগ্রামে মাদ্রাসা সুপারের পদ দখলের অভিযোগ

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার দাসিয়ারছড়ায় এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মাদ্রাসা সুপারের পদ দখলের অভিযোগ তুলেছেন প্রতিষ্ঠানটির ‘বর্তমান সুপার’ বলে দাবিদার আরেকজন।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Nov 2020, 03:35 PM
Updated : 15 Nov 2020, 03:35 PM

রোববার কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন মো. শাহানুর আলম।

দাসিয়ারছড়ায় প্রধানমন্ত্রীর মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানের নাম ‘শেখ ফজিলাতুন্নেছা দাখিল মাদ্রাসা’।

শাহানুর আলমের অভিযোগ, এই প্রতিষ্ঠান থেকে ২০১৮ সালের ৩০ জুন স্বেচ্ছায় ইস্তফা দিয়েছিলেন তখনকার সুপার মো. আমিনুল ইসলাম। কিন্তু ২০২০ সালের ১৪ জানুয়ারি মাদ্রাসাটি জাতীয়করণ হলে ‘দুর্নীতির’ মাধ্যমে পেছনের তারিখে নিয়োগ পেয়েছেন দেখিয়ে তিনি এখন আবার সুপারের পদ দখল করেছেন। 

আমিনুল ইসলামের ইস্তফা দেওয়ার পর থেকে শাহনুর এই পদে দায়িত্ব পালন করছেন বলে তার দাবি।

একই সঙ্গে আমিনুল ইসলাম ২০০৪ সাল থেকে একই উপজেলার ‘মধ্যকাশিপুর দাখিল মাদ্রাসায়’ সহকারী মৌলভী পদে চাকরি করছেন বলেও শাহনুরের অভিযোগ।

লিখিত বক্তব্যে শাহনুর বলেন, ২০১৮ সালের পহেলা নভেম্বর শেখ ফজিলাতুন্নেছা দাখিল মাদ্রাসার যাত্রা শুরু হয়। ওই সময় মাদ্রাসাটির সুপার ছিলেন আমিনুল ইসলাম। এরপর ২০১৮ সালের জুন মাসে সুপার পদে ইস্তফা দেন।

এরপর থেকে এই পদে শাহনুর দায়িত্ব পালন করছেন বলে তিনি সংবাদ সম্মেলনে জানান।  

শেখ ফজিলাতুন্নেছা দাখিল মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি হলেন আমিনুল ইসলামের বাবা আব্দুর রহমান।

শাহনুর বলেন, ২০২০ সালে জাতীয়করণ হওয়ার পর মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও বাবা আব্দুর রহমানের সঙ্গে যোগসাজসে পিছনের তারিখে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ‘অবৈধ পন্থায়’ পুনরায় সুপার পদে নিয়োগ নেন আমিনুল।

“একইভাবে এই সময় নতুন করে আরও কয়েকজন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে মোটা অংকের টাকা নিয়েছেন আমিনুল,” অভিযোগ শাহনুরের।

শাহনুর জানান, এই বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার দুটি প্রতিবেদন মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের মহাপরিচালক বরাবর পাঠিয়েছেন। 

এখনও তার কোনো সমাধান না হওয়ায় বর্তমান সুপার ও শিক্ষকগণ মাদ্রাসায় ঢুকতে পারছেন না বলে শাহনুরের অভিযোগ।

সংবাদ সম্মেলনে আমিনুল ইসলামের শাস্তি ও মাদ্রাসাটিতে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানান শাহনুর।

আমিনুল ইসলাম ২০১৮ সালের জুন মাসে সুপার পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, “পরে ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটলে আবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলে আমি পুনরায় ওই বছরের ২৪ জুলাই সুপার পদে যোগদান করি। এই পর্যন্ত ওই পদে বহাল আছি। নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে টাকার লেনদেন ব্যবস্থাপনা কমিটি করেছে। আমি এই বিষয়ে কিছুই জানি না।”

ইস্তফা দেওয়ার ২৪ দিনের মাথায় এত দ্রুত গতিতে কীভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব হলো জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি তদন্ত করে দেখার পরামর্শ দেন সাংবাদিকদের।

তবে কোনো প্রকার অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে তাদের পিতা-পুত্রের কোনো যোগসাজস নেই বলে দাবি আমিনুলের।

তিনি আরও বলেন, মধ্যকাশিপুর দাখিল মাদ্রাসায় সহকারী মৌলভী পদে তিনি যোগদান করেন ২০০৪ সালে এবং বেতনভাতাদি উত্তোলন করে আসছিলেন। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে সর্বশেষ বেতন-ভাতা উত্তোলন করেছেন। এরপর থেকে আর কোনো সরকারি সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেননি।

এই ব্যাপারে আমিনুল ইসলামের বাবা ও এই মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

জেলা শিক্ষা অফিসার শামছুল আলম বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা অবস্থায় অন্য প্রতিষ্ঠানে যোগদান করতে গেলে পূর্ববর্তী প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র বাধ্যতামুলক। এক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। এ সংক্রান্ত অনেক অভিযোগ। অভিযোগের ভিত্তিতে মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের রংপুর অঞ্চলের উপ-পরিচালক আক্তারুজ্জামান ও কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পৃথক ভাবে তদন্ত করা হয়েছে। বিষয়টি এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দেখছে।