এমসি কলেজে ধর্ষণ: ২ দারোয়ান বরখাস্ত, তদন্ত কমিটি গঠন

সিলেটে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে আসা গৃহবধূকে  দলবেঁধে ধর্ষণের ঘটনায় দায়িত্ব  অবহেলার অভিযোগে দুই দারোয়ানকে সাময়িক বরখাস্ত করার পাশাপাশি তিন  সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সিলেট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Sept 2020, 03:19 PM
Updated : 26 Sept 2020, 03:19 PM

শনিবার কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন অধ্যক্ষ সালেহ আহমদ।

সাময়িক বরখাস্তকৃতরা হলেন- কলেজের প্রধান ফটকের দারোয়ান রাসেল মিয়া ও চৌকিদার সবুজ আহমদ রুহান।

শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে টিলাগড় এলাকার কলেজটিতে ছাত্রলীগ কর্মীসহ নয়জন এক গৃহবধূকে ক্যাম্পাস থেকে তুলে ছাত্রাবাসে নিয়ে দলবেঁধে ধর্ষণ করার পাশাপাশি তার স্বামীকে মারধর করে বলে অভিযোগ ওঠে।

পুলিশ রাত সাড়ে ১০টার দিকে ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করায়।

অধ্যক্ষ সালেহ আহমদ বলেন, “প্রাথমিকভাবে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দুই দারোয়ানকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তারা মাস্টার রোলে কর্মরত ছিলেন।”

তিনি বলেন, এছাড়া ঘটনা তদন্তে  কলেজের গণিত বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন চৌধুরীকে প্রধান করে তিন সদস্যের  কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন- রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শ্রীকান্ত ছাত্রাবাসের হোস্টেল সুপার জীবনকৃষ্ণ ও হোস্টেল সুপার জামাল উদ্দিন।

কমিটিকে এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলে তিনি জানান।

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার জ্যোতির্ময় সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই নববধূ তার স্বামীর সঙ্গে এমসি কলেজে ঘুরতে আসেন। এক পর্যায়ে তার স্বামী সিগারেট খাওয়ার জন্য কলেজের গেইটের বাইরে বের হন। এ সময় ছয় জন যুবক তরুণীকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে নিয়ে এমসি কলেজ ছাত্রাবাস এলাকায় নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে।”

এ সময় তার স্বামী প্রতিবাদ করলে তাকে মারধর করা হয় বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

খবর পেয়ে পুলিশ রাত সাড়ে ১০টার দিকে ওই তরুণীকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করায়।

পুলিশ আসামি ধরতে অভিযান শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা জ্যোতির্ময় সরকার।

এদিকে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ধর্ষণের এই ঘটনায় সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তারা ছাত্রলীগের কর্মী। এর মধ্যে সাইফুর রহমান নামে একজনের কক্ষ থেকে অস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ।

শনিবার ভোর রাতে ওই ছাত্রাবাসে সাইফুরের কক্ষ থেকে একটি পাইপগান, চারটি রামদা, একটি ছুরি ও দুটি লোহার পাইপ উদ্ধার করে বলে শাহপরাণ থানার ওসি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “রাতে এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত সাইফুর রহমানের কক্ষ থেকে এসব অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় অস্ত্র মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।”

এছাড়া কলেজের ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, মাহফুজুর রহমান মাছুম, অর্জুন, রাজন আহমদ এবং বহিরাগত ছাত্রলীগ কর্মী রবিউল এবং তারেক আহমদ এই ঘটনায় জড়িত বলে নাম এসেছে পুলিশের কাছে।

তাদের মধ্যে সাইফুর রহমানের গ্রামের বাড়ি বালাগঞ্জে, রবিউলের বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলায়, মাহফুজুর রহমান মাছুমের বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়, অর্জুনের বাড়ি সিলেটের জকিগঞ্জে, রনির বাড়ি হবিগঞ্জে এবং তারেক সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার বাসিন্দা।

শনিবার সকালে গৃহবধুর স্বামী বাদী হয়ে শাহপরাণ থানায় মামলা করেছেন বলে জানিয়েছেন ওসি কাইয়ুম।

তিনি বলেন, “মামলায় ছাত্রলীগকর্মী সাইফুর রহমানকে প্রধান আসামি করে ছয়জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আরও তিনজনকে আসামি করা হয়েছে।”

এদিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তরুণী আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন হাসাপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায়।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গাইনি বিভাগের একজন অধ্যাপকের তত্ত্বাবধানে ওই গৃহবধূর চিকিৎসা চলছে। তিনি শারীরিকভাবে এখন অনেকটা সুস্থ।”