ভোগান্তি ছাড়া পাওনা চান চাকরিহারা পাটকলকর্মীরা

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর চাকরি হারানো শ্রমিক-কর্মচারীরা তাদের যাবতীয় পাওনা পেতে চান কোনো ধরনের ভোগান্তি ছাড়া।

শিকদার খালিদ যশোর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 July 2020, 04:25 PM
Updated : 7 July 2020, 07:29 PM

যশোরের অভয়নগরের দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল ‘যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রিজ’ (জেজেআই) ও ‘কার্পেটিং জুট মিল’ এর শ্রমিকরা তাদের এ মনোভাব প্রকাশ করেন।

সম্প্রতি সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর প্রায় ২৫ হাজার কর্মীকে স্বেচ্ছা-অবসরে (গোল্ডেন হ্যান্ডশ্যাক) পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরমধ্যে এই দু’টিসহ খুলনা অঞ্চলে নয়টি মিল রয়েছে।

সরকার সব কর্মচারীর পাওনা মিটিয়ে দেওয়ারও আশ্বাস দিয়েছে। এছাড়া পরবর্তীতে মিলগুলো সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) ‘ফের চালু করলে’ সেখানে বর্তমান কর্মচারীদের চাকরির সুযোগ থাকবেও বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

তবে শ্রমিক-কর্মচারীরা তাদের সব পাওনা ভোগান্তি ছাড়া পাওয়ার প্রত্যাশা করছেন।

যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রিজ (জেজেআই) ও কার্পেটিং জুট মিলের শ্রমিকরা এখন প্রতিদিন তাদের মিলের ফটকের বাইরে অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছেন।

জেজেআই মিলের প্রকল্প প্রধান সফিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এই মিলে স্থায়ী শ্রমিকের সংখ্যা এক হাজার ৮৬ জন। অস্থায়ী শ্রমিক রয়েছেন এক হাজার ১৭৭ জন। কর্মচারী ৭০ জন এবং কর্মকর্তা রয়েছেন ৪৫ জন।

“শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি, গ্রাচুইটি ও প্রভিডেন্ট ফান্ডের (পিএফ) পরিমাণ প্রায় ২০০ কোটি টাকা।

মিলটি বন্ধ হওয়ার আগে পাট থেকে উৎপাদিত প্রায় ২৮ কোটি টাকা মূল্য পণ্য মিলে মজুদ রয়েছে বলেন তিনি।

কার্পেটিং জুট মিলের প্রকল্প প্রধান আহম্মেদ হুসাইন বলেন, “মিলে স্থায়ী শ্রমিক ৩১৩ জন, অস্থায়ী শ্রমিক রয়েছে ৪৫০ জন। শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি, গ্রাচুইটি ও প্রভিডেন্ট ফান্ডের পরিমাণ প্রায় ৮৩ কোটি টাকা।

এ মিলেও উৎপাদিত ৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকার পাট পণ্য মজুদ রয়েছে জানান তিনি।

জেজেআই জুট মিলের সিবিএ-এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও নওয়াপাড়া পৌরসভার কাউন্সিলর জিয়াউদ্দিন পলাশ বলেন, বর্তমান সরকার শ্রমিকবান্ধব। শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণে পূনর্বিবেচনা করে পূনরায় রাষ্ট্রায়ত্ত মিলগুলো চালু করার দাবি জানাচ্ছি।

কার্পেটিং জুট মিল সিবিএ সাধারণ সম্পাদক ফারাজী নজরুল ইসলাম বলেন, শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা টাকা একসঙ্গে পরিশোধের আশ্বাস দিয়েছে সরকার। তারপরও শ্রমিকরা আশ্বস্ত হতে পারছে না। তারা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।

“শ্রমিক-কর্মচারীরা কোরো ভোগান্তি ছাড়াই অল্প সময়ের মধ্যে পাওনা টাকা পেতে চান।” 

মিল কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিক-কর্মচারীরা জানান, ১৯৬৭ সালের ৩০ মে যশোরের অভয়নগর উপজেলার রাজঘাট এলাকায় ভৈরব নদের তীরে প্রায় ৮২ একর জমির ওপর যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রিজ (জেজেআই) লিমিটেডের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ১৯৭০ সালের ২৭ জানুয়ারি ৩১০টি হেসিয়ান লুম, ১০০টি স্যাকিং লুম এবং ৫৬টি সিবিসি (ব্রড) লুম নিয়ে মিলটি যাত্রা শুরু করে। ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত মিলটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সফলতার স্বাক্ষর রাখে। বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশনের (বিজেএমসি) অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কয়েক বছর পর থেকে অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয় মিলটি।

একই এলাকায় ১৯৬৭ সালে ৩১ একর জমির ওপর কার্পেটিং জুট মিলস লিমিটেডের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ১৯৬৯ সালে ৮৬টি সিবিসি (ব্রড) লুম নিয়ে মিলটি উৎপাদন শুরু করে। ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত মিলটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সফলতার স্বাক্ষর রাখে। রাষ্ট্রায়ত্ত করার পর এটিও অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপ নেয়।