পঞ্চগড়ে সালিশে ‘মারধর’, তরুণের আত্মহত্যা

পঞ্চগড় সদরে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে সালিশের পর এক তরুণ আত্মহত্যা করেছেন, যাকে সালিশে মারধর ও আ্ত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়া হয় বলে স্বজনের অভিযোগ।

সাইফুল আলম বাবু পঞ্চগড় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 April 2020, 08:10 PM
Updated : 25 April 2020, 12:02 PM

উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নের সোনারবান বাঁশবাড়ি গ্রামে বৃহস্পতিবার এ ঘটনা ঘটে বলে সদর থানার ওসি আবু আক্কাস আহমদ জানান।   

এ ঘটনায় ১৭ বছর বয়সী ওই তরুণের বাবা বাদী হয়ে শুক্রবার সদর থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা করেছেন। মামলায় নয় জনকে আসামি করা হয়েছে।

ওই তরুণের বাবা সাংবাদিকদের বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে স্থানীয় মসজিদের সামনে তার ছেলেকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে সালিশ বসানো হয়। ছয় বছর বয়সী এক শিশুকে গত ২০ এপ্রিল দুপুরে তার ছেলে ধর্ষণ করে বলে মেয়েটির মা সালিশে অভিযোগ তোলেন।

“এজন্য শুরুতেই তাকে এক দফা মারধর করা হয়। তবে, ধর্ষণের বিষয়টি অস্বীকার করে আমার ছেলে ও তার মামাত ভাই আজিতের সাথে শিশুটি বসে ছিল বলে সালিশে জানায়।”

মৃত তরুণের বাবা বলেন, “সালিশের লোকজন আমাকেও গালিগালাজ করে। অপমান সইতে না পেরে আমি নিজেই ছেলেকে জুতাপেটা করি। পরে বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে আমি সালিশকারীদের অনুরোধ করি।”

তবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা মৃত তরুণের মামাত ভাই আজিতের কোনো বিচার করা হয়নি উল্লেখ করে মৃত তরুণের বাবা বলেন, “এ নিয়ে আজিতের চাচাত ভাই দেলোয়ারের সঙ্গেেআমার ছেলের তর্ক হয়। এক পর্যায়ে দেলোয়ার আমার ছেলেকে লাথি মেরে বাড়ি গিয়ে আত্মহত্যা করতে বলে।

“কিছুক্ষণ পর বাড়ি গিয়ে দেখি আমার ছেলে তার ঘরে গলায় বোনের ওড়না দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।” 

তিনি জানান, ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি কদম আলী, ৩, ৫, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্যের স্বামী আক্কাস আলীসহ গ্রামের গণ্যমান্য আরও কয়েকজন সালিশে উপস্থিত ছিলেন।

মৃত তরুণের প্রতিবেশী আব্দুল জলিল বলেন, “আমরা শুনেছি ঘটনার দিন সে (মৃত তরুণ) তার মামাত ভাই আজিতের সাথে বাড়ির পাশের বসে ছিল। ওই শিশুটিও তাদের সাথে বসে ছিল। কিছুক্ষণ পর স্থানীয় এক মেয়ে শিশুটিকে ডেকে বাড়ি নিয়ে যায়। কিন্তু কয়েকদিন পরে হঠাৎ তার বিরুদ্ধে তারা ধর্ষণের অভিযোগ তোলে। এরপর তাকে সালিশে নিয়ে ‘শরিয়তি পদ্ধতিতে’ মারধর করে।”

ঘটনার সময় সেখানে আজিত উপস্থিত থাকলেও সালিশে তার বিচার হয়নি বলে অভিযোগ করে জলিল।  

সালিশকারী আওয়ামী লীগ নেতা কদম আলী বলেন, “আমরা তার বাবাকে বলেছি তার ছেলের বিচার যেন সে নিজেই করে। ওর বাবা জুতা দিয়ে কয়েকটা মাইর দিয়েছে। পরে আমি চলে যাই। এরপর কী হয়েছে তা আমি জানি না।”

আজিতের বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ তোলেনি; তাই তাকে নিয়ে কথা উঠেনি বলে তিনি জানান।

৩, ৫, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিদ মহিলা সদস্য শাহনাজ পারভীন বিউটি বলেন, “আমি ব্যস্তার কারণে ওই সালিশে যেতে না পারায় আমার স্বামী উপস্থিত ছিল। ওই যুবককে অন্য কেউ মারধর করেনি। তার বাবাই তাকে মারধর করেছে। তবে দেলোয়ার তাকে আত্মহত্যা করতে বলেছিল বলে শুনেছি।”

পঞ্চগড় সদর থানার ওসি আবু আক্কাস আহমদ বলেন, ছেলেটির বাবা থানায় মামলা করেছেন। মামলা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।