গাইবান্ধায় জাপার মিছিলে হামলা, ক্ষণ গণনার ঘড়ি ভাংচুর

গাইবান্ধায় এক সরকারি কর্মকর্তার অপসারণ দাবিতে জাতীয় পার্টির ঝাড়ু মিছিলে হামলার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।  

গাইবান্ধা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Feb 2020, 02:56 PM
Updated : 13 Feb 2020, 03:27 PM

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) নুরুন্নবী সরকারের অপসারণ দাবিতে বৃহস্পতিবার এ মিছিল হচ্ছিল সুন্দরগঞ্জ উপজেলা সদরে।
 
এ সময় মিছিলকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১১ জন নেতাকর্মী আহত হন।
 
এ সময় উপজেলা পরিষদের মূল ফটকে থাকা মুজিববর্ষের ক্ষণগণনা ঘড়িটি ভাঙচুর করা হয়।
 
পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।  জাতীয় পার্টির এক কর্মীকে পুলিশ আটক করেছে।

আহত রুবেল, শাহ্-সুলতান, সুজন, আবুল কাশেম, পিয়েল, সুমন মিয়া, জয়নাল আবেদীন, বাবলু মন্ডল, আমিনুল ইসলাম, জুয়েল ও খন্দকার মো. মাইদুল ইসলামকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
 
তবে হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে ছাত্রলীগ।
 
সুন্দরগঞ্জ পৌর জাতীয় পার্টির সভাপতি আবদুর রশিদ সরকার ডাবলু বলেন, উপজেলা জাতীয় পার্টি ব্যানারে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী পিআইওর বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিলসহ উপজেলা পরিষদ এলাকায় অবস্থান নেন জাতীয় পার্টি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।  এ সময় তারা পিআইওর অপসারণ ও শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন শ্লোগান দেন।

“হঠাৎ উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা সুমনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নেতাকর্মী ও পিআইওর ভাড়াটে লোকজন মিছিলেন ওপর হামলা চালান।  তারা আন্দোলনকারীদের হাত থেকে প্লে কার্ড ছিনিয়ে নিয়ে মারপিট শুরু করেন।”
রশিদ সরকার বলেন, তখন বিক্ষুদ্ধ জাপা নেতাকর্মীরা পরিষদের তালাবন্ধ মূল ফটকটি খুলে ভিতরের প্রবেশের চেষ্টা করেন।
 

“এই হামলার কারণে মূল ফটকে থাকা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর ক্ষণগণনা ঘড়িটি ভাঙচুর ও জাপার পাঁচজন নেতাকর্মী আহত হন।”
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান মন্ডলের দাবি, দুর্নীতিবাজ পিআইওর পক্ষ অবলম্বন করে তাকে সুন্দরগঞ্জে বহাল রাখতে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন আহবায়ক আশরাফুল আলম লেবুর নেতৃত্বে ছাত্রলীগ পরিকল্পিতভাবে এই হামলা চালিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এই ঘটনার পর হামলাকারীরা জাতীয় পার্টির উপজেলা দলীয় কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে চেয়ার-টেবিলসহ আসবাবপত্র ভাঙচুর করে ও উপজেলা ছাত্রসমাজের সভাপতি সুলতান সুজনকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে এবং নেতাকর্মীদেরকে হুমকি দেয়।
তবে উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সুমন  মিছিলে হামলার কথা অস্বীকার করে বলেন, মুজিববর্ষের ক্ষণগণনার ঘড়িটি ভাংচুর করার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের নেতাকর্মীরা ওই ঘটনার প্রতিবাদ করলে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরাই তাদের উপর হামলা চালিয়েছে।
সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি আব্দুল্লাহিল জামান বলেন, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় জাতীয় পার্টির কয়েকশ নেতা-কর্মী পিআইওর অপসারণ দাবিতে একটি ঝাড়ু মিছিল বের করেন।
“মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপজেলা পরিষদ এলাকায় এসে মূল ফটকটি (গেট) ও মুজিববর্ষের ক্ষণগণনার ঘড়িটি ভাংচুর করে। খবর পেয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ওই মিছিলে হামলা করে।”
তিনি বলেন, এরপর উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১১ জন আহত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও জাতীয় পার্টির কর্মী সাইফুল ইসলামকে আটক করে।
ওসি আরও বলেন, পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
ওসি জানান, মুজিববর্ষের ক্ষণগণনার ঘড়ি ভাংচুরের ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রশাসনিক কর্মকর্তা ফেরদৌস হোসেন বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ১০ জনের নাম উল্লেখ করে ১০০ থেকে ১৫০ জন অজ্ঞাত আসামির বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা করেছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সোলেমান আলী জানান, পিআইও নুরুন্নবী সরকারকে সম্প্রতি বদলি করা হয়েছে। কিন্তু মামলাজনিত কারণে তিনি এখনও সুন্দরগঞ্জে অবস্থান করছেন। এ কারণে আজকের এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। মুজিববর্ষের ক্ষণগণনা ঘড়ি ভাংচুরের ঘটনায় থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।
হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন আহবায়ক আশরাফুল আলম সরকার তাৎক্ষণিকভাবে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “মুজিববর্ষের ক্ষণগণনা ঘড়ি ভাংচুর ঘটনায় যারাই জড়িত থাক না কেন তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য যা যা করণীয় তা করা হবে।”
তবে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নুরুন্নবী সরকারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তা বন্ধ পাওয়া যায়।