অভিযানপ্রিয়দের নতুন আকর্ষণ ‘তাবাক খ্য’ গুহা

পাহাড়ি বুনো নিসর্গে ভ্রমণ পিয়াসীদের জন্য খাগড়াছড়ি ‘তাবাক খ্য’ গুহা নতুন আকর্ষণ হতে যাচ্ছে বলে মনে করছে প্রশাসন ও স্থানীয়রা।

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধিআবু দাউদ, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Jan 2020, 03:43 PM
Updated : 27 Jan 2020, 03:43 PM

প্রাচীন হলেও পর্যটকদের কাছে আনকোরা এ গুহাকে পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ার কথা ভাবছে প্রশাসন।

একদল সংবাদকর্মী সেখানে ঘুরে আসার পর গত শনিবার জেলার দীঘিনালা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. কাশেম ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ উল্লাহ দেখতে যান তাবাক খ্য গুহা। গুহা ও আশপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশ দেখে তারা সবাই মুগ্ধ।

উপজেলা চেয়ারম্যান কাশেম এটিকে পর্যটন কেন্দ্র করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।  

ইউএনও মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, তাবাক খ্য গুহায় পর্যটকদের যাওয়ার জন্য শিগগিরই উন্নয়ন পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হবে।

তবে এক্ষেত্রে প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষা করেই যা করার করবেন বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

ত্রিপুরা ভাষায় ‘তাবাক’ অর্থ বাদুড় আর ‘খ্য’ অর্থ গুহা বা গর্ত। বাংলায় অর্থ দাঁড়ায় ‘বাদুড় গুহা।’ স্থানীয় ত্রিপুরাদের কাউকে কাউকে এটিকে দেবতা গুহাও বলতে শোনা যায়। তাবাক খ্য গুহা এরইমধ্যে স্থানীয়দের ভেতর কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে।

দীঘিনালা উপজেলার মেরুং ইউনিয়নের রথীচন্দ্র কারবারি পাড়ায় এ গুহার অবস্থান। জেলা সদর থেকে দূরত্ব প্রায় ১৮ কিলোমিটার।

জেলা শহর থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা সড়কের আটমাইল নামের স্থানটি সদর ও দীঘিনালা উপজেলার সীমানা। সেখান থেকে ডান দিকে ইটের সড়ক দিয়ে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে এ গুহা। প্রায় ছয় কিলোমিটার গাড়িতে যাওয়ার পর আধাঘণ্টার হাঁটা পথ। এ পথের তৃণলতা, গুল্ম, শেকড়, শিখর সবই পর্যটকের ঘুরে দেখার আনন্দকে বাড়িয়ে দেবে নিঃসন্দেহে।

কিছুদূর যেতেই ঝরনার ছলছল শব্দ কানে আসবে। বুনো পাহাড় বেয়ে চলা পানির প্রবাহ আছড়ে পড়ছে ‘মাইরুং তইসা’ ছড়ায়। এক ধরনের পাহাড়ি লতার সাহায্যে ঝরনার গা বেয়ে নামতে হয় সেখানে। এতে ঝুঁকিও আছে। ফলে ট্রেকিং করতে পছন্দ করেন যারা তাদের এটি বেশি পছন্দের হবে বলে মনে করছেন ঘুরে আসা সাংবাদিকরা। তবে এ বুনো পথে পরিবেশ ধ্বংসের চিহ্নও চোখে পড়েছে তাদের। অরণ্যের অনেক এলাকাই কেটে ফেলা হয়েছে।

পাহাড়ি এ ছড়া দিয়ে ৫০ গজের মতো সামনে এগুতেই (যেদিক থেকে পানি নামছে) সেই ‘তাবাক খ্য গুহা।’ গুহার মুখ চতুর্ভুজ আকৃতির। কিছুটা ঢুকতেই গা ছমছমে আবহ। পাথুরে পাহাড়ের ভিতর ছাদে কারুকাজ রয়েছে মনে হতে পারে। খাগড়াছড়ি শহরের কাছের আলুটিলা পাহাড়ের গুহাটির প্রায় দ্বিগুণ দৈর্ঘ্যের মনে হয়েছে ঘুরতে যাওয়া সাংবাদিকদের কাছে। তাদের হিসাবে গুহাটি আনুমানিক ১২৩ কদম (১৬০ ফুট) দীর্ঘ। আলুটিলা গুহায় অতিরিক্ত আলোর প্রয়োজন হলেও এই গুহার বৈশিষ্ট্য হলো এখানে কম আলোতেই আশপাশ এলাকা আলোকিত হয়ে ওঠে। মোবাইলের আলোতেও গুহা ঘুরে আসা যায়; যেখানে আলুটিলায় দরকার হয় মশালের আলো।

রথীচন্দ্র কারবারি পাড়ার কারবারি (পাড়া প্রধান) গুণধর ত্রিপুরা বলেন, জন্ম থেকেই তারা গুহাটি দেখে আসছেন। তাদের বিশ্বাস মতে আগে তাতে দেবতার বাস ছিল। সেজন্য এটিকে অনেকে দেবতার গুহাও বলেন।

স্থানীয় পরিবেশকর্মী হীরেন্দ্র কুমার ত্রিপুরা বলেন, শুধু নামেই নয়, এ গুহা বাদুড়ের বাসস্থানও। তবে অনেকের বাদুড়ের মাংস প্রিয় খাবার হওয়ায় প্রাণীটির সংখ্যা দিন দিন কমছে।

বাদুড়ের প্রতি ‘দয়াশীল’ হওয়ার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি ওখানকার প্রাকৃতিক ঝরনা ও ছড়াসহ বুনো পরিবেশ রক্ষায় সবাইকে সচেতন হওয়ারও অনুরোধও করেন তিনি।

স্থানীয় সাংবাদিক জাকির হোসেনের ধারণা- ‘তাবাক খ্য’ গুহাটি সময়ের সবচেয়ে আলোচিত পর্যটন স্পট হয়ে উঠতে পারে।

পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে গজানো ছনের মতো দেখতে তৃণ ‘নল খাগড়া’ থেকেই জেলার নাম ‘খাগড়াছড়ি’ বলে মনে করেন অনেকে। চারদিক পাহাড় বেষ্টিত সমতলের মাঝে একটি চমৎকার শহর খাগড়াছড়ি। এখানে রোমাঞ্চ প্রিয় যারা বেড়াতে আসেন তাদের ঘোরার তালিকায় বাদুড়ের এ গুহা থাকবেই- এমনটাই ভাবছেন স্থানীয়রা।