অধিক মূল্যে বিক্রির অভিযোগে ঠাকুরগাঁও ও নেত্রকোণায় তিন ব্যবসায়ীকে আটক করেছে জেলা প্রশাসন। এছাড়া নেত্রকোণায় তিন ব্যবসায়ীকে জরিমানাও করা হয়।
মঙ্গলবার দুপুরে ১২টার দিকে ঠাকুরগাঁও শহরের কালিবাড়ী ও পুরাতন বাসস্ট্যান্ড বাজার থেকে ব্যবসায়ী মাসুদ রানা (২৮) ও রফিকুল ইসলামকে (৪০) আটক করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসক কে এম কামরুজ্জামান সেলিম জানিয়েছেন।
পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি নিয়ে দেশে ব্যাপক তোলপাড়ের মধ্যেই লবণের মূল্য বৃদ্ধির গুজব ছড়ানোর চেষ্টা চলছে।
ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক কে এম কামরুজ্জামান সেলিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ে লবণসহ সকল নৃত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী সরবরাহ স্বাভাবিক ও পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। কিন্তু একটি কুচক্রি মহল লবণের দাম বৃদ্ধি পাবে বলে গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করছে।
“এই গুজবে কান দিয়ে শহরের বাজারগুলোতে অতিরিক্ত মূল্যে লবণ বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা।”
তিনি বলেন, সোমবারও যে লবণ ৩৫ টাকা কেজি মূল্যে বিক্রি হয়েছে; মঙ্গলবার তা ১০০ থেকে ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এমন অভিযোগ পেয়ে শহরের কালিবাড়ি ও পুরতান বাসষ্ট্যান্ড বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
“কালিবাড়ি বাজার থেকে মাসুদ রানা ও পুরাতন বাসষ্টান্ড বাজার থেকে রফিকুল ইসলামকে আটক করা হয়েছে। তারা ১০০ টাকা কেজি দরে লবণ বিক্রি করছিল।”
আটক দুইজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান জেলা প্রশাসক কামরুজ্জামান সেলিম।
সদর থানার ওসি আশিকুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সদর উপজেলার প্রত্যেকটি হাট-বাজারে পুলিশের মোবাইল টিম কাজ করছে। পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রত্যেকটি হাট বাজারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা বাজার মনিটরিং করার জন্য মাঠে নেমেছে। যারা ক্রেতাদের কাছে অতিরিক্ত মূল্যে লবণ বিক্রি করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পুরাতন বাসস্ট্যান্ড বাজারের ক্রেতা নুর আলম সোহাগ বলেন, “সারাদিন দিনমজুরি করে ২০০ টাকা আয় করি। আর এখন যতি ৩৫ টাকার লবণ যদি ১০০ টাকায় কিনতে হয় , তাহলে বউ বাচ্চা নিয়ে পথে না বসে উপায় নেই।”
তিনি অসাধু সিন্ডিকেট কঠোরভাবে দমন করার অনুরোধ করেন সরকারের প্রতি।
এদিকে, লবণের কেজি দুইশ টাকা হবে গুজাব ছড়ালে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার ঘাঘর বাজারে লবণ কেনার হিড়িক পড়েছে।
তবে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে উপজেলা প্রশাসন বাজার মনিটরিংয়ে নেমেছে।
সরেজমিনে জানা গেছে, সোমবার রাত থেকে কোটালীপাড়ায় লবণের দাম বাড়ার গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণে মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে ঘাঘর বাজারে লবণের ডিলার, পাইকারি বিক্রেতা ও খুচরা বিক্রেতাদের দোকানে লবণ ক্রয়ের জন্য ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়ে। দুপুর ১২টার মধ্যে ডিলার ও অনেক পাইকারির ব্যবসায়ীর গুদাম লবণ শূন্য হয়ে যায়।
হঠাৎ এভাবে লবণ ক্রয়ের কারণে অনেক ডিলার বা পাইকারি ব্যবসায়ীও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
লবণ ডিলার মধুমতি স্টোরের মালিক জালাল শেখ বলেন, “একটি গুজবের উপরে ভর করে মানুষ হঠাৎ এভাবে লবণ কেনা শুরু করেছে। আমরা আগের দামেই লবণ বিক্রি করছি। এই মুহূর্তে দাম বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।”
পাইকারি ব্যবসায়ী গণেশ সাহা বলেন, “সকাল থেকেই আমাদের দোকানে লবণ ক্রয়ের জন্য সাধারণ মানুষ ও খুচরা বিক্রেতারা ভিড় করছে। দুপুর ১২টার মধ্যে আমাদের দোকানের সমস্ত লবণ বিক্রি হয়ে যায়।”
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মহসিন উদ্দিন বলেন, “লবণের মূল্য বৃদ্ধির গুজবের কারণে ঘাঘর বাজারে মঙ্গলবার সকাল থেকেই লবণ ক্রয়ের হিড়িক পড়ে যায়। ডিলারদের বলে দিয়েছি পূর্বে তারা ব্যবসায়ীদের কাছে যে পরিমান লবণ বিক্রি করত এখন সেই পরিমাণ বিক্রি করতে হবে। এছাড়া খুচরা বিক্রেতাদেরকে ১ কেজি থেকে ২ কেজির উপরে লবণ বিক্রি করতে নিষেধ করেছি।”
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম মাহফুজুর রহমান বলেন, “এ মুহূর্তে লবণের কোনো সংকট নেই। তাই দাম বৃদ্ধির কোনো সম্ভবনাও নেই। যদি কোনো ডিলার বা ব্যবসায়ী বাজার মূল্যোর চেয়ে বেশি দামে লবণ বিক্রি করে তা হলে তার বিরুদ্ধে আইনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
এদিকে, গুজব ছড়িয়ে বেশি দামে লবণ বিক্রির অভিযোগে নেত্রকোণার খালিয়াজুরীতে একজনকে আটক ও কেন্দুয়ায় তিনজনকে অর্ধদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
আটক হয়েছেন খালিয়াজুরী সদরের ব্যবসায়ী হায়দার চৌধুরী।
অর্থদণ্ড দিয়েছেন কেন্দুয়া উপজেলা সদরের ব্যবসায়ী এরশাদ আলী ও বৈখেরহাটি বাজারের শাহীন মিয়া ও রামপুর বাজারের মোজাহিদ মিয়া।
“এ কারণে এরশাদ আলীকে ৫০ হাজার টাকা, শাহীন মিয়াকে ২০ হাজার টাকা ও মোজাহিদ মিয়াকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে ।“
খালিয়াজুরী উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা এএইচএম আরিফুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন খুচরা বা পাইকারি বাজারে লবণের দাম বেড়েছ বলে গুজব ছড়িয়েছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। এই গুজবে সরল ক্রেতাসাধারণ হুড়াহুড়ি করে লবণ কিনতে ভিড় জমিয়েছে বিভিন্ন দোকানে।
ক্রেতারা সর্বনিম্ন ৫ কেজি ও সর্বোচ্চ ২০ কেজি করে লবণ ক্রয় করেছেন।
“লবণ কৃত্রিম তৈরির চেষ্টা করায় সকাল ৯টার দিকে খালিয়াজুরী সদর এলাকা থেকে হায়দার চৌধুরী নামে একজন ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়।”
টাঙ্গাইলের বিভিন্ন বাজারেও ক্রেতারা ব্যাপকহারে লবণ কিনছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিনিধি এম এ রাজ্জাক জানিয়েছেন।