সিরাজগঞ্জে নদীর বালু অবৈধ উত্তোলন রোধে ‘প্রশাসনের সাড়া নাই’

সিরাজগঞ্জে ফুলজোড় নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে ধন্না দিয়েও প্রশাসনের সহযোগিতা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে গ্রামবাসী।

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Nov 2019, 08:35 AM
Updated : 5 Nov 2019, 08:35 AM

ফুলজোড় নদীর সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার আলোকদিয়া, বাদুল্লাপুর ও আমডাঙ্গা এবং কামারখন্দ উপজেলার ধামকৈল ও দোগাছি এলাকা গত রোববার ঘুরে দেখা যায়, সরকারি বালুমহাল ছেড়ে আশপাশের আরও তিনটি মৌজা থেকেও বালু তোলা হচ্ছিল।

উল্লাপাড়া উপজেলার আলোকদিয়া গ্রামের আব্দুর রহমান, আমডাঙ্গা গ্রামের সম্বল হালদার, একই গ্রামের সোহাগ ও বেলাল অভিযোগ করেন, এই ‘অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে নদী তীরের চারটি মৌজার প্রায় ২০ বিঘা আবাদি জমি নদীতে পরিণত হয়েছে।’

কামারখন্দ উপজেলার দৌগাছি গ্রামের কৃষক মকবুল হোসেন বলেন, ইজারাদার উল্লাপাড়া উপজেলার আলোকদিয়া মৌজার বালুমহাল ইজারা নিয়েছে অথচ আমাদের এলাকায় এসে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় আবাদি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে।

ধামকৈল গ্রামের মোতালেব হোসেন জানান, পাশাপাশি ‘অন্তত ১৫টি স্থানে উত্তোলিত বালু স্তুপ করে’ রাখায় আরও ২০/২৫ বিঘা জমিতে চাষাবাদ করা যাচ্ছে না।

আলোকদিয়া গ্রামের মনিরুল ইসলাম মাস্টার বলেন, অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করতে গিয়ে নিজেসহ গ্রামের শতাধিক মানুষ তিনটি মামলার মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছি। কয়েকজন হাজতবাসও করেছে।

স্থানীয়রা জানান, সিরাজগঞ্জ শহরের রায়পুর মহল্লার হেলাল উদ্দিন জেলা প্রশাসন থেকে চলতি মৌসুমে বালু উত্তোলনের জন্য ফুলজোড় নদীর উল্লাপাড়া উপজেলার আলোকদিয়া মৌজার বালুমহাল ইজারা পান। তার কাছ থেকে বালুমহালটি কিনে নেয় ঢাকার সাভারের জাকির হোসেন।

ইজারাদার ‘মহালের বাইরে গিয়ে চারটি ড্রেজার দিয়ে’ বালু উত্তোলন করায়’ আশপাশের আবাদি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় গ্রামবাসী বিক্ষুব্ধ হয়।

আলোকদিয়া গ্রামের কোরবান আলীর ছেলে রফিকুল ইসলাম ও সোনা মিয়া ছেলে সাখওয়াত হোসেন জানান, ওই সময় বালু উত্তোলনে বাধা দিলে ইজারাদারের লোকজনের সাথে গ্রামবাসীর সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে পুলিশের সাথেও গ্রামবাসীর সংঘর্ষ বাধে।

এ ঘটনায় শতাধিক গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে পুলিশ একটি এবং ইজারাদারের পক্ষ থেকে আরও দুইটি মোট তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং এতে কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ বলে জানান তারা।

এ ঘটনার প্রতিবাদে সে সময় গ্রামবাসী উল্লাপাড়া উপজেলা সদরে গিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন এবং উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করে।

উল্লাপাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহবুব হাসান জানান, ওই পরিস্থিতিতে উপজেলা ভূমি অফিস সরেজমিন জরিপ করে ইজারাদারকে বালুমহালের সীমানা বুঝিয়ে দেন এবং সরকারি মহালের বাইরে গিয়ে বালু উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।

ইজারাদারও মহালের বাইরে গিয়ে বালু উত্তোলন করবে না মর্মে লিখিত দেয় বলে সেই সময় জানিয়েছিলেন তিনি।

ইজারাদার জাকির হোসেনের মোবাইল ফোনে চেষ্টা করেও তা ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে তার পক্ষে বালু মহালের দায়িত্বে নিয়োজিত শাহ আলম বলেন, “বালুমহাল এলাকায় ঝামেলার কারণে গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে মামলা করতে হয়েছে। যে কারণে কিছুদিন রাতের বেলায়ও বালু উত্তোলন করেছি।”

তবে চারটি ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের গ্রামবাসীর অভিযোগ এড়িয়ে গিয়ে তিনি দুইটি ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনে প্রশাসনের অনুমোদন রয়েছে বলে স্বীকার করেন।

গত রোববার থেকে দিনের বেলায়ও বালু উত্তোলন চলছে জানিয়ে গ্রামবাসী অভিযোগ করেছে-‘প্রকাশ্যে এমন কর্মকাণ্ড চললেও দুইটি উপজেলার প্রশাসনই নীরব রয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে উল্লাপাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহবুব হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সরেজমিন গেলে ড্রেজার মেশিন বা বালু উত্তোলনকারীদের ঘটনাস্থলে পাওয়া যায় না। যে কারণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সমস্যা হচ্ছে।”

তবে গ্রামবাসীরা ড্রেজার বা লোকজনকে আটকে রেখে প্রশাসনকে খবর দেয় তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হবে বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে কামারখন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহাঙ্গীর আলম তার উপজেলায় কোন বালুমহাল নেই উল্লেখ করে বলেন, “সার্ভেয়ার পাঠিয়ে বিষয়টি দেখা হবে। কেউ অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”