আমার জীবন আছর ও মাগরিবের মাঝামাঝিতে: রাষ্ট্রপতি

নিজের সমসাময়িক অনেককে হারিয়ে জীবনের শেষপ্রান্তে পৌঁছেছেন বলে মনে করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Oct 2019, 03:02 PM
Updated : 9 Oct 2019, 03:52 PM

সাত দিনের সফরে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ বুধবার দুপুরে কিশোরগঞ্জের তাড়াইল পৌঁছেন।

নিজের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের কথা বলতে গিয়ে দুপুরে তাড়াইলে এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি বলেন, “আমার জীবন এখন আছর ও মাগরিবের মাঝামাঝিতে অবস্থান করছে। আমার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মীদের বেশিরভাগই এখন পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন।”

এ সময় তিনি ১৯৭০ সালের সংসদ নির্বাচনে তাড়াইল, ইটনা, অষ্টগ্রাম ও নিকলী থানা নিয়ে গঠিত আসন থেকে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হওয়ার কথা উল্লেখ করেন।

তাড়াইল থেকে সর্বোচ্চ ভোট পাওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “কিন্তু এই এলাকার আমার সেই সময়কার রাজনৈতিক সহযোদ্ধাদের প্রায় সকলেই গত হয়েছেন। হয়ত আমার জীবনেও আছর ও মাগরিবের মাঝামাঝি সময়ের মতো সামান্য সময় বাকি আছে।”

মো. আবদুল হামিদ ১৯৪৪ সালের পহেলা জানুয়ারি কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

বিকালে তাড়াইল উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা সরকারি কলেজ মাঠে আয়োজিত সুধী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন রাষ্ট্রপতি হামিদ।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির ক্রমান্বয়ে উত্তরণ হচ্ছে, দুর্নীতির সাথে পাল্লা দিয়ে কুলিয়ে উঠতে পারছে না; তাই যেমন করেই হোক দুর্নীতি থামাতে হবে বলে তিনি মনে করেন।

“এটা প্রশংসনীয় যে সরকার নিজের ঘর থেকেই দুর্নীতি বিরোধী অভিযান শুরু করেছে। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ যে-ই অপরাধ করুক তাকে ধরতে হবে এবং সাজা দিতে হবে। দুর্নীতি করে কেউ যেন পার না পায়।”

দুর্নীতি বিরোধী এই অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। 

দেশে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ হচ্ছে এবং এর ধারাবাহিকতায় এক সময়ের অবহেলিত অনুন্নত হাওর এলাকাতেও অনেক উন্নয়ন হয়েছে উল্লেখ করে এই উন্নয়নে দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে এক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ শিক্ষার্থীদের মনযোগ দিয়ে লেখাপড়া করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, “তোমাদেরকে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বের জন্য নিজেকে উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে। মানুষের মতো মানুষ হতে হবে।”

রাষ্ট্রপতি তার বক্তব্যে তাড়াইল উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা সরকারি কলেজে নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণ, হাজী গোলাম হোসেন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়কে সরকারিকরণ ও স্টেডিয়াম নির্মাণসহ স্থানীয় কিছু দাবি-দাওয়া বাস্তবায়নে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। 

স্থানীয় সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু ও তাড়াইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম শাহিনের বক্তব্যের পর রাষ্ট্রপতি বক্তব্যে অনুষ্ঠান শেষ করা হয়।

সাড়ে ৩টায় রাষ্ট্রপতির ভাষণ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় তিনি ঘণ্টাখানেক কলেজের অধ্যক্ষের কক্ষে অবস্থান করেন।

হেলিকপ্টারযোগে কিশোরগঞ্জ জেলা সদরে পৌঁছার কর্মসূচি নিধারিত থাকলেও বৃষ্টির কারণে সাড়ে ৪টার দিকে সড়ক পথে তিনি সেখানে রওয়ানা দেন। 

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সাতদিনের সফরের অংশ হিসেবে দুপুর সোয়া ২টায় হেলিকপ্টারযোগে ঢাকা থেকে তাড়াইল পৌঁছেন। শিমুলহাটি হেলিপ্যাডে অবতরণের পর তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। এরপর রাষ্ট্রপতি উপজেলা পরিষদের সামনে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ভাস্কর্য স্বাধীনতা ‘৭১ উদ্বোধন করেন।

সফরে তাড়াইল ছাড়াও তিনি কিশোরগঞ্জ জেলা সদর, ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলায় বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেবেন।

১৫ই অক্টোবর তিনি ঢাকার উদ্দেশে কিশোরগঞ্জ ত্যাগ করবেন।