বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টরের পদত্যাগ

গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় উপচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদে এক সহকারী প্রক্টর পদত্যাগ করেছেন।

মনোজ সাহা গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Sept 2019, 06:17 PM
Updated : 21 Sept 2019, 06:18 PM

শনিবার সহকারী প্রক্টর সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মো. হুমায়ুন কবির গদত্যাগপত্র জমা দেন।

এদিকে, আন্দোলরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ।

এছাড়া উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকবৃন্দের ব্যাপারে কয়েকজন শিক্ষক শনিবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

গত ১১ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাংবাদিক ফাতেমা-তুজ-জিনিয়াকে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তার ফেইসবুক পোস্টকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ দাবি করে তাকে বহিষ্কার করা হয়। জিনিয়া ডেইলি সান পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি।

জিনিয়াকে বহিষ্কারের প্রতিবাদ করেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-সাংবাদিকরা। এরপর বুধবার জিনিয়ার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে বিশ্ববিদ্যালয়। এ ঘটনার পর ব্যাপক আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ১৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১৪টি সিদ্ধান্ত নেয়, যা রেজিস্ট্রার মো. নুরউদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত একটি আদেশে প্রকাশ করা হয়। ওই আদেশে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বাক্‌স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেওয়া হবে এবং ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ ছাড়া বহিষ্কার করা হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। এছাড়া সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের ডেকে এনে অপমান করা হবে না এবং ফেসবুকে স্ট্যাটাস ও কমেন্টকে কেন্দ্র করে কোনো শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হবে না বলেও প্রতিশ্রুত দেওয়া হয়।

কিন্তু আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এরপর উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে অনশনসহ আন্দোলন অব্যাহত রাখেন।

এরপর শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালানো হয়। উপাচার্যের সমর্থক বহিরাগতরা এসব হামলা চালায় বলে আহত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ।

তবে উপাচার্য এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।  

সহকারী প্রক্টর হুমায়ুন কবির বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর ভিসির সমর্থকদের হামলার ধিক্কার ও নিন্দা জানিয়ে তিনি প্রক্টরিয়াল বডি থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

তিনি রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। কিন্তু শনিবার অফিস বন্ধ থাকায় পদত্যাগপত্র এখনও গৃহীত হয়নি বলে তিনি জানান। 

এদিকে, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আব্দুল হামিদ ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রফিক স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারীর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানো হয়। তারা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণাও করেন বিবৃতিতে।

অপরদিকে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাধারণ শিক্ষকবৃন্দের ব্যানারে কয়েকজন শিক্ষক সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

শনিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কোয়ার্টার প্রাঙ্গণে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ১১৫ জন শিক্ষকের স্বাক্ষর সম্বলিত লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কৃষি বিভাগের প্রভাষক মো. গোলাম ফেরদৌস।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের ১৪টি দাবি মেনে নেওয়ার পরেও কতিপয় স্বার্থান্বেষী শিক্ষকদের সরাসরি ইন্ধনে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলমান রাখা অনভিপ্রেত বলে সাধারণ শিক্ষকগণ মনে করেন।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে গোলাম ফেরদৌস বলেন, “বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।”

সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর মো. বশিরউদ্দিন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলা

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলায় তিন সাংবাদিকসহ ২০ জন আহত হয়েছেন। 

শনিবার বেলা ১২টার দিকে বাইরে থেকে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে প্রবেশের সময় তাদের ওপর অতর্কিতে হামলা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরে উপজেলার মোড়, গোবরা, হাসপাতাল মোড়, নীলার মাঠ, নবীনবাগ, সোবহান সড়ক, সোনাকুড় এলাকায় এসব হামলা হয়েছে।  

হামলায় আহত শিক্ষার্থীরা হলেন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২য় বর্ষের আঁখি, কৃষি বিভাগের ২য় বর্ষের মাসুকুর রহমান, ৩য় বর্ষের সীমান্ত, অর্থনীতি চতুর্থ বর্ষের নাফিস, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ২য় বর্ষের ফাহাদ, রসায়ন ৩য় বর্ষের মো. রাকিব হোসেন, আশিকুর রহমান, ফিসারিজ ২য় বর্ষের সৈকত, লোক প্রশাসন ২য় বর্ষের রুদ্র, পদার্থবিজ্ঞান ৩য় বর্ষের মাসুদ, শাহরিয়ার মিজান, আল-আমিন প্রমুখ।

আহত শিক্ষার্থীরা বলেন, হামলাকারীরা স্থানীয় ভাড়াটে সন্ত্রাসী। তবে তাদের সুনির্দিষ্ট পরিচয় পাওয়া যায়নি। উপাচার্যের নির্দেশেই এই হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন আহত এই শিক্ষার্থী ও আন্দোলনকারীরা।

আহতদের মধ্যে ১০-১২ জনকে গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। গুরুতর আহত কয়েকজনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. অসিত কুমার মল্লিক বলেন, “হামলার শিকার ১৭ শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। এদের মধ্যে ১০ জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন। বর্তমানে সাত জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।”

রাতে জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা আহত শিক্ষার্থীদের দেখতে হাসপতালে এসেছিলেন বলে তিনি জানান।

হামলার ব্যাপারে খোন্দকার নাসিরউদ্দিন বলেন, “ছাত্ররা আমার সন্তানের মতো। তাদের উপর কেন আমি হামলা চালাব? তারা কিছু দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। তাদের সব দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। এরপরও তারা আন্দোলন করছে। তারা এক সময় আন্দোলন থেকে সরে যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।”

গোপালগঞ্জ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন বলেন, “আমরা ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করছি। বাইরের লোকজন যাতে হামলা চালাতে না পারে, সেজন্য শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দেওয়ার চেষ্টা করছি।”