বাবা-মায়ের কষ্ট বুঝতে ধান কাটল পাহাড়ের শিশুশিক্ষার্থীরা

শহরের হোস্টেলে থেকে পড়ালেখা করা একদল শিশুশিক্ষার্থী বান্দরবান সদর উপজেলার একটি পাহাড়ে গিয়ে এক চাষির ধান কেটে দিয়েছে।

উসিথোয়াই মারমা বান্দরবান প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Sept 2019, 12:14 PM
Updated : 20 Sept 2019, 12:43 PM

স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এই শিশুশিক্ষার্থীদের ধানক্ষেতে নিয়ে যাওয়া হয়।

শুক্রবার সকালে জেলা শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে চিম্বুক পাহাড়ে গিয়ে দেখা গেছে, ক্ষেতটা খুব ঢালু ও খাড়া। সবার পিঠে ঝুলানো একটি করে থুরুং।

দশম শ্রেণি পড়ুয়া ক্যহলাচিং মারমা বলেন, “ধান না কাটলে বাবা-মায়ের কষ্ট বুঝতাম না। লেখাপড়া করে বাবা-মায়ের কষ্টের মর্যাদা রক্ষা করব।”

আরেক শিক্ষার্থী চোমেথুই মারমা। ছোটবেলা থেকেই বাবা-মায়েদের ধান কাটতে দেখেছেন।

“চাষের মাধ্যমেই আমাদের বাবা-মায়েরা কষ্ট করে লেখাপড়া করাচ্ছেন। প্রতিষ্ঠিত হয়ে যেকোনো জায়গায় গেলেও জুমচাষি বাবা-মায়ের কষ্টের কথা মনে রাখব।”

এই শিক্ষার্থীরা একজন চাষিকে তার ক্ষেতের ধান স্বেচ্ছাশ্রমে কেটে দেয়।

ক্ষেতের মালিক সিংচং বলেন, “এটি চার হাঁড়ির (৪০ কেজি) ধান লাগানো জুম। নিজেরা কাটলে তিন থেকে চার দিন লাগত। এখন একদিনেই কাটা শেষ।”

ধান কাটার সময় শিক্ষার্থীরা তাদের ঐতিহ্যবাহী গানও গেয়েছে।

তুমপ্রে ও রাওরি নামে দুই শিক্ষার্থী বলেন, ধান কাটা ও মাড়াই নিয়ে অনেক গান আছে। সেগুলো খুব আবেগের। অনেক গান তারা ভুলে গেছে। সংরক্ষণ করা হয়নি।

এই আয়োজন সম্পর্কে হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মং মং সিং মারমা বলেন, সুইজাল্যান্ডের একটি দাতা সংস্থা ও সংস্থার নিজস্ব উদ্যোগের হোস্টেল নির্মাণ করে প্রত্যন্ত এলাকার ৭৪ জন ছেলেমেয়েকে হাইস্কুলে লেখাপড়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। ওই শিক্ষার্থীদের বাড়ির ধারেকাছে হাইস্কুল নেই।

“লেখাপড়া করে প্রতিষ্ঠিত হলে কেউ যাতে নিজেদের শেকড় থেকে বিচ্ছিন্ন না হয়, এই উদ্দেশ্যে বছরে একবার হোস্টেলের শিক্ষার্থীদের দিয়ে জুমের ধান কেটে দেওয়া হয়।”

তারা ১০ বছর ধরে এমন উদ্যোগ নিচ্ছেন বলে তিনি জানান।