মামলার এজাহারে দাদাকে আসামি করা হলেও তদন্ত শেষে পুলিশ তার নাম বাদ দিয়ে তার নাতিকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্রে দেয়।
ওই অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে আদালত পরোয়ানা জারি করলে গত ৯ অগাস্ট রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় শিশুটিকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরদিন আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে জামিন দেন।
মামলার আসামি ওই শিশুর বাড়ি মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার পলাশীপাড়া গ্রামে। স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে সে।
তার বাবা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আইনের নামে অবিচারের কারণে আমার ছেলে এখন আসামি। ওর মা নেই। সারাদিন এখন ও পুলিশের আতঙ্কে থাকে।”
শিশুটির বিরুদ্ধে যেভাবে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে, যেভাবে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তার কোনেটিই আইনসিদ্ধ হয়নি বলে মত দিয়েছেন মেহেরপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি শফিকুল আলম।
ভুল স্বীকার করে মেহেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, আগামী ৯ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের শুনানির দিনে মামলাটি শিশু আদালতে স্থানান্তরের আবেদন করবেন তারা।
ওই গ্রামের দেলোয়ার হোসেন গতবছর ২৮ নভেম্বর মেহেরপুরের হাকিম আদালতে এ মামলা দায়ের করেন। সেখানে ঢিল মেরে তার মেয়ের চোখ নষ্ট করে দেওয়ার অভিযোগে প্রতিবেশী ইনজাল কারিকরকে (৬০) আসামি করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গতবছর ৫ মে দেলোয়ারের বাড়ির উঠানে তার প্রথম শ্রেণি পড়ুয়া মেযে এবং প্রতিবেশী ইনজাল কারিকরের দুই নাতি খেলছিল। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে ‘গণ্ডগোল’ বাঁধে। ইনজাল কারিকরের দুই নাতি তখন নিজেদের বাড়ির ভেতরে চলে যায়।
“ওই সময় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ইনজাল কারিকর ঘর থেকে বেরিয়ে এসে আমার মেয়েকে মারধর করে। আমার মেয়ে পালাতে গেলে আসামি ইটের টুকরো ছুড়ে মারে। তাতে তার ডান চোখ নষ্ট হয়ে গেছে।”
আদালত সে সময় মামলাটি গ্রহণ করে গাংনী থানা পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দেয়। তদন্ত শেষে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম ইনজাল কারিকরের নাম বাদ দিয়ে তার এক নাতিকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেন।
সেখানে বলা হয়, তদন্তে মামলার এজাহারের একমাত্র আসামির বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ না পাওয়ায় তাকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করা হল।
“তবে শিশুদের মধ্যে খেলাধুলার সময় আসামির নাতি পাকা রাস্তার পাথরের বালুকণা দিয়ে বাদীর মেয়েকে আঘাত করে, তাতে তার ডান চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয় “
এ কারণে দণ্ডবিধির ৩২৬ ধারায় ওই শিশুর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয় অভিযোগপত্রে। আদালত তা মঞ্জুর করলে পুলিশ গত ৯ অগাস্ট গ্রেপ্তার করে শিশুটিকে।
ছেলেটির বাবা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সেদিন গভীর রাতে পুলিশ বাড়ি ঘেরাও করে। ঘুমন্ত অবস্থায় আমার ছেলেকে ধরে নিয়ে যায়। সকালে গাংনী থানায় গেলে পুলিশ মামলার কথা জানায়।”
তিনি দাবি করেন, বাচ্চাদের খেলাধুলার সময় ইটের আঘাতে দেলোয়ার হোসেনের মেয়ের ডান চোখে আঘাত লাগে। তবে কিছু দিনের মধ্যেই তা ভালো হয়ে যায়।
ছেলেটির দাদা ইনজাল কারিকর সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, যেদিনের ঘটনায় মামলা হয়েছে সেদিন তিনি বাড়িতেই ছিলেন না। অভিযোগপত্রে তার নাম বাদ দিয়ে নাতির নাম যোগ করার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “উপরে আল্লাহ জানে আর নিচে পুলিশ জানে কেন এটা হল।”
মেহেরপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি শফিকুল আলমও মনে করছেন, শিশুটিকে যেভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা ঠিক হয়নি।
“শিশুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, ৩২৬ ধারায় অভিযোগ, সেটা আদালতে গ্রহণ কোনটিই আইনসিদ্ধ হয়নি। পুরো প্রক্রিয়াটিই ভুলে ভরা। আর এই ভুলের কারণে শিশুটির প্রতি অবিচার হল।”
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মেহেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, “এটা আইনি প্রক্রিয়াগত একটা ভুলের ঘটনা। পরবর্তী তারিখে মামলাটি শিশু আদালতে স্থানান্তরের আবেদন করা হবে।”