সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার বিয়াড়া গ্রামের আব্দুল কাদেরের মেয়ে চাঁদের কণা বুধবার সকাল থেকে ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নিয়েছেন।
তিনি জানান, নয় মাস বয়সে পোলিও আক্রান্ত হওয়ায় তার দুটি পা অচল হয়ে যায়। বাবা-মায়ের চেষ্টায় দুই হাতে ভর করেই তিনি প্রয়োজনীয় কাজ চালিয়ে নেন।
মা হাসনা হেনা বেগম ছিলেন স্কুলশিক্ষক। তিনি ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।
কণা বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যোগ্যতা অনুযায়ী আমার একটা সরকারি চাকরি খুব দরকার। প্রতিবন্ধী জীবনে আমি বেশিরভাগ সময় অসুস্থ থাকি, যে কারণে প্রাইভেট চাকরি করা আমার জন্য অনেক কঠিন হয়ে যাবে। সেই জন্য আমি একটা সরকারি চাকরি খুঁজছি।”
২০১৩ সালে পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর সরকারি চাকরির আশায় বহু পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “কোনো চাকরি আমার কপালে জুটলো না। চাকরির বয়সও শেষ হয়ে এসেছে। এখন আমি আমার পরিবার নিয়ে চোখেমুখে কিছুই দেখছি না।”
চাঁদের কণা যখন অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী, তখন তার মা মারা যান। কয়েক বছর পর ব্রেইন স্ট্রোক হলে অসুস্থ হয়ে পড়েন বাবা। ছোট দুই ভাই আছে; একজন এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে, আরেকজন এসএসসি পাস করেছে। আগামীতে তাদের পড়াশোনা কীভাবে হবে- তা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
তিনি বলেন, “একদিকে আমার প্রতিবন্ধিতা, আরেকদিকে বাবার অসুস্থতা। আবার নেই কোনো উপার্জনের নিশ্চয়তা। এই চরম দারিদ্র্য সত্ত্বেও আমি থেমে থাকিনি। টেলিভিশনের জন্য প্রোগ্রাম গ্রন্থনা, কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে বিভিন্ন কাজকর্ম করে জীবিকা চালাই।
“আমি যখন মাদার বক্স কলেজে পড়তাম, পঞ্চম তলায় আমার ক্লাস হত। ৯টার ক্লাসের জন্য আমি কলেজে যেতাম সকাল ৭টার দিকে। কারণ হাতে ভর দিয়ে পঞ্চম তলায় উঠতে দেড় ঘণ্টার মত সময় লাগত। স্কুলজীবন থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত এমন লক্ষ্য-কোটি বাধা পেরিয়ে প্রতিবন্ধিতা জয় করেছি। আমার স্বপ্ন শুধুমাত্র একজন সরকারি কর্মকর্তা হওয়া। যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি চাকরির জন্য বহু চেষ্টা করেছি।”
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা পার হতে আর চার মাস বাকি আছে জানিয়ে তিনি বলেন, “তাই বাধ্য হয়ে আমরণ অনশনে বসেছি। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে চাই। উনি আমার দুঃখ-কষ্ট বুঝবেন। আমি আশা করি, উনার সাথে দেখা হলে, আমার কথাগুলো বলতে পারলে, তিনি একটা সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করে দেবেন।”
কনার হুইল চেয়ার ঘিরে রয়েছে বিভিন্ন বার্তা লেখা গোটা বিশেক প্ল্যাকার্ড। গলায় ঝোলানো কার্ডে লেখা- “আমি আমার মা প্রধানমন্ত্রীর ভালবাসা চাই। তার সাথে দেখা করতে চাই।”
[প্রতিবেদনটি তৈরি করতে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন তাবারুল হক]