হিমাগারে নষ্ট মিষ্টি-খেজুর, মামলা না করায় ক্ষোভ

কিশোরগঞ্জে একটি হিমাগারে বিপুল পরিমাণ মেয়াদোত্তীর্ণ মিষ্টি ও খেজুর জব্দের পর শুধু হিমাগার কর্তৃপক্ষকে জরিমানা করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিমারুফ  আহমেদ, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 May 2019, 05:36 PM
Updated : 2 May 2019, 05:37 PM

ওই মিষ্টি ও খেজুরের মালিকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশিষ্টজনেরা।

গত ২৮ এপ্রিল পাকুন্দিয়া উপজেলার ‘এগারসিন্দুর কোল্ড স্টোরেজ’ থেকে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মজুদ রাখা মেয়াদোত্তীর্ণ ২৪ মণ মিষ্টি ও ১৫ মণ খেজুর জব্দের পর ধ্বংস করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

ওই হিমাগারে ২৪টি প্লাস্টিকের ড্রামে ওই মিষ্টি মজুত রাখে জেলা সদরে অবস্থিত নামি ও সুপরিচিত মিষ্টির দোকান ‘মদন গোপাল সুইটস কেবিন’।

অভিযান পরিচালনাকারী জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কিশোরগঞ্জের সহকারী পরিচালক ইব্রাহিম হোসেন বলেন, আগামী ৬ মে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের সম্ভাব্য দিনে মিষ্টির ব্যাপক চাহিদাকে মাথায় রেখে অধিক মুনাফার আশায় এই বিপুল পরিমাণ মিষ্টি মজুত করা হয়।

এছাড়া আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে মুনাফার জন্য ভৈরব উপজেলার কয়েকজন ব্যবসায়ী ৬০টি কার্টনে ১৫ মণ মেয়াদোত্তীর্ণ খেজুর মজুত রাখেন বলে ইব্রাহিম জানান।

জব্দ করা মিষ্টি মাটিতে ফেলে বালি দিয়ে নষ্ট করা হয় এবং খেজুর আগুনে পুড়িয়ে নষ্ট করা হয়।

এ ঘটনায় ভোক্তা অধিকার আইনে এগারসিন্দুর কোল্ড স্টোরেজকে তাৎক্ষণিকভাবে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে তা আদায় করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কিশোরগঞ্জের সহকারী পরিচালক ইব্রাহিম হোসেন।

এদিকে, এগারসিন্দুর কোল্ড স্টোরেজকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হলেও মিষ্টি ও খেজুরের মালিকদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় জেলার নাগরিক মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

এর প্রতিবাদে ‘বিক্ষুদ্ধ নাগরিক সমাজ’-এর ব্যানারে একটি সংগঠন মঙ্গলবার জেলা শহরে মানববন্ধন করেছে এবং মিষ্টি ও খেজুরের মালিকের শাস্তির দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে।  

বিশিষ্ট চিকিৎক নারায়ণগঞ্জের সাবেক সিভিল সার্জন আতিকুল সারোয়ার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কোল্ড স্টোরেজে কোনোমতেই প্রসেসড খাবার রাখা যাবে না, “এটি স্বাস্থ্যবিধি বহির্ভূত; কারণ এর ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকির গুরুতর আশংকা থাকে।

“কোল্ড স্টোরেজে রাখা খাদ্যে অন্যান্য স্থানের তুলনায় জীবাণু সংক্রমনের ঝুঁকি শতগুণ বেশি।”

তাই জনস্বার্থে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে শৈথিল্য দেখানোর সুযোগ নেই বলে তিনি মনে করেন।

কিশোরগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মিয়া মোহাম্মদ ফেরদৌস বলেন, নষ্ট ও মেয়াদেত্তীর্ণ মিষ্টি ও খেজুরের মালিকানা নিশ্চিত হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানগুলির মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা কর্তব্য ছিল।

“কিন্তু তা না করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগে ব্যত্যয় ঘটিয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে দ্রুত আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।”

কনজ্যুমারস অ্যাসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কিশোরগঞ্জ সভাপতি আলম সারোয়ার টিটু মজুতকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নেওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। তিনি অবিলম্বে নিরাপদ খাদ্য আইনে মামলা দায়েরসহ কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। 

এ ব্যাপারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, কিশোরগঞ্জের সহকারী পরিচালক ইব্রাহিম হোসেন বলেন, “জব্দ করা মিষ্টি ও খেজুর মেয়াদোত্তীর্ণ ও নষ্ট ছিল এবং শস্যের হিমাগারে এগুলোর সংরক্ষণও যথাযথ ছিল না।”

কিন্তু মিষ্টি ও খেজুরের মালিকদের পরিচয় জানার পরও তাদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হলো না তার উত্তর না দিয়ে তিনি বলেন, অবৈধভাবে সংরক্ষণের অভিযোগে তাৎক্ষণিকভাবে কোল্ড স্টোরেজকে জরিমানা করে বিষয়টি ফয়সালা করা হয়েছে। ভবিষ্যতে মিষ্টি ও খেজুর মালিকদের দোকানে অভিযান চালিয়ে এ ধরনের প্রমাণ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।