নুসরাত হত্যা: সাবেক ওসি ও সাংবাদিকের পাল্টাপাল্টি জিডি

ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির শ্লীলতাহানি ও পুড়িয়ে হত্যার পরবর্তী ঘটনা নিয়ে সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি ও স্থানীয় এক সাংবাদিক পাল্টাপাল্টি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।

ফেনী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 May 2019, 02:36 PM
Updated : 26 May 2019, 03:53 PM

বৃহস্পতিবার দুপুরে নিরাপত্তা চেয়ে ফেনী মডেল থানায় জিডি করেন বেসরকারি টেলিভিশন সময় সংবাদের ফেনী ব্যুরো অফিসের প্রতিবেদক আতিয়ার হাওলাদার সজল।

এর আগে গত ১৪ এপ্রিল সজলের বিরুদ্ধে সোনাগাজী মডেল থানায় জিডি করেছিলেন ওই থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন।

গত ৬ এপ্রিল সকালে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত আলিমের আরবি প্রথমপত্র পরীক্ষা দিতে গেলে দুর্বৃত্তরা তাকে ডেকে কৌশলে মাদ্রাসার ছাদে নিয়ে যায়। পরে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০ এপ্রিল রাতে তার মৃত্যু হয়।

নুসরাতের হত্যার ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে (এপিবিএন) বদলি করা হয়েছে।

সোনাগাজী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কামাল হোসেন বলেন, সোনাগাজী মডেল থানায় সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন গত ১৪ এপ্রিল নিজের মোবাইল থেকে দুটি ভিডিও অজ্ঞাতসারে স্থানান্তরের অভিযোগ করে জিডি করেন।

জিডিতে তিনি অভিযোগ করেন, অফিসে মোবাইল ফোন রেখে তিনি ওয়াশরুম ও নামাজের জন্য বের হলে ওই সুযোগে সাংবাদিক সজল তার মোবাইল ফোন থেকে ভিডিওটি নিয়ে যান, যা তিনি তার মোবাইল হিস্ট্রির মাধ্যমে জানতে পারেন। এটা পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

“তাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ও সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এমনটি করা হয়েছে বলে তিনি জিডিতে অভিযোগ করেন।”

সাংবাদিক আতিয়ার সজল জিডিতে উল্লেখ করেন, গত ১৪ এপ্রিল সোনাগাজী মডেল থানায় দায়ের করা জিডিতে ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন সম্পূর্ণ অসত্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ উত্থাপন করেছেন।

সজল জিডিতে বলেন, গত ৬ এপ্রিল মাদ্রাসার কেন্দ্রে নুসরাতকে অগ্নিদগ্ধ করার পর সাংবাদিক সজলসহ গণমাধ্যমকর্মীরা একাধিকবার সোনাগাজী মডেল থানায় যান। গত ৮ এপ্রিল ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বক্তব্য নিতে চাইলে তিনি নুসরাতের ঘটনাকে আত্মহত্যা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে নিজে থেকে আগের ধারণ করা দুটি ভিডিও দেখান।

পরে ওই ভিডিও টেলিভিশনে দেখানোর অনুমতি নিয়ে সাংবাদিক সজল ওইদিন দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ১টার মধ্যে ওসি মোয়াজ্জেমের কাছ থেকে ভিডিও সংগ্রহ করেন। সেদিন রাত ৯টায় নুসরাতের চেহারা ঝাপসা করে ভিডিও দুটি সময় টেলিভিশনে প্রচারও করা হয় বলে সজলের জিডিতে বলা হয়।

সজলের দাবি, ওই ভিডিও তিনি (সাংবাদিক সজল) কাউকে সরবরাহ করেননি, এমনকি সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রচার করেননি। ওসির অজ্ঞাতসারে তার মোবাইল থেকে ভিডিও নেওয়ার বিষয়টিও সত্য নয়।

থানায় জিডি করার সময় ফেনীতে কর্মরত প্রিন্ট, ইলেক্ট্র্রনিক ও অনলাইন গণমাধ্যমের সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

ফেনী প্রেস ক্লাব সভাপতি আসাদুজ্জামান দারা বলেন, ওসি মোয়াজ্জেম প্রথমে নুসরাতের ঘটনাটি আত্মহত্যার ঘটনা বলে চেষ্টা চালাতে সাংবাদিককে তার কাছে থাকা আগের ভিডিও দেন। পরে তার বিরুদ্ধে পুলিশ তদন্ত করলে তিনি উল্টো সাংবাদিককে দোষারোপ করেন।