উপজেলার একমাত্র মহিলা কলেজটি ১৯৯৫ সালের ১লা জুলাইয়ে কার্যক্রম শুরু করে। ২১শে মে ১৯৯৬ সালে রাজশাহী বোর্ডের মঞ্জুরি লাভ করে। এরপর ফলাফলসহ সকল ক্ষেত্রে কলেজটি সামনের কাতারে আছে।
স্থানীয় শিক্ষানুরাগী ও তাইরুন্নেছা বালিকা বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মরহুম মাস্টার আব্দুল লতিফের দেওয়া ৩ দশমিক ০২ একর (প্রায় ১০ বিঘা) জমিতে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজ। এতে বর্তমানে প্রায় ৭০০ জন ছাত্রী আধাপাকা টিনসেড ঘরে পড়াশোনা করেন।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ঝুঁকিপূর্ণ শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করতে হয়। সেখানে মানসম্মত লাইব্রেরি, কম্পিউটার ল্যাব কিংবা অন্যান্য আধুনিক কোনো সুযোগসুবিধা নেই।
শিক্ষক ও কর্মচারীদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় কলেজটির ছাত্রীরা বিভিন্ন পরীক্ষায় ফলাফল, বির্তক প্রতিযোগিতা, উপস্থিত বক্তৃতা, রচনা প্রতিযোগিতাসহ পাঠ্য বহির্ভূত বিভিন্ন কার্যক্রমে কৃতিত্বের পরিচয় দিয়ে, উপজেলা, জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন পুরস্কারও পেয়েছেন।
এমপিওভুক্ত (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) কলেজটি ১লা অক্টোবর ২০০১ সালে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড এবং ৩রা জুলাই ২০০২ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক মঞ্জুরিপ্রাপ্ত হয়। বর্তমানে প্রায় ৭০ জন শিক্ষক ও কর্মচারী আছেন। উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ে রয়েছেন প্রায় ৭০০ ছাত্রী।
কলেজ কর্তৃপক্ষ জানায়, বর্তমানে কলেজটিতে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ১৯টি, স্নাতক শ্রেণীতে ১০টি বিষয়ে নিয়মিত পাঠদান চলছে। এছাড়া তিনটি বিষয়ে (সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ভূগোল) স্নাতক (সম্মান) খোলার অনুমতি পাওয়া গেছে।
নিজস্ব অর্থায়নে একটি তিন তলা ভবন নির্মাণ করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। তবে এখনও কলেজের নতুন ভবনটি পুরাপুরি ব্যবহার উপযোগী করতে পারেনি অর্থাভাবে।
কলেজের উপাধ্যক্ষ মিল্লাত হোসেন বলেন, বর্তমানে কলেজের জন্য যেখানে প্রায় ৩০টি শ্রেণিকক্ষ প্রয়োজন সেখানে শ্রেণিকক্ষ আছে ১৬/১৭টি। ফলে ছাত্রীদের ক্লাস করতে হয় আরেকটি ক্লাস শেষ হওয়ার পর। এজন্য তাদের ক্লাসের বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়।
কলেজে একাদশ শ্রেণির ছাত্রী আজমি, রুমিসহ অনেকে বলেছেন, উন্নত শ্রেণিকক্ষ, কম্পিউটার ল্যাব, সমৃদ্ধ লাইব্রেরি হলে তারা আরও ভালোভাবে পড়ালেখা করতে পারবেনব এবং আরও ভালো ফলাফল করতে পারবেন।
এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়া জাকিয়া খাতুন বলেন, “আমি এই কলেজে পড়াশুনা করে এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি।”
কলেজের শিক্ষক প্রতিনিধি ইংরেজির প্রভাষক মামুন-উর-রশিদ বলেন, কিছুদিন আগে শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসেন মহোদয় বগুড়া সার্কিট হাউজে বলেছিলেন বাংলাদেশের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি ভবন ছাড়া থাকবে না।
“তাই আশাকরি অতি শিঘ্রই আমরা একটি একাডেমিক ভবন পাব।”
কলেজের অধ্যক্ষ একেএম রেজাউল আখলাক বলেন, কলেজের সকল শিক্ষক কর্মচারী ও ছাত্রীগণ চরম কষ্টে তাদের নিজ নিজ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
“রাজশাহী বোর্ড ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে উপজেলায় গত ১০ বছরে সেরা ফলাফল করলেও আমরা কোনো একাডেমিক ভবন এখন পর্যন্ত পাইনি। বরং উপজেলার অন্যান্য চারটি কলেজ ২-৩টি করে ভবন ইতিমধ্যে পেয়েছে। যদিও আমরা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে অনেক আগেই আবেদন করেছি।”
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, শিক্ষাবান্ধব বর্তমান সরকার ওয়ান-স্টপ প্রকল্পের অধীনে একাডেমিক ভবনের জন্য ইতিমধ্যে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে; যা এখন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বিশেষ বিবেচনাধীন আছে।
“আশা করি অচিরেই একটি একাডেমিক ভবন উক্ত কলেজকে সরকার উপহার দিতে পারবে।”
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী আলতাফ হোসেন বলেন, যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে ডিও লেটারসহ আবেদন করলে অবশ্যই একাডেমিক ভবন পাওয়া যাবে।