পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য কমপক্ষে ১৫টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
সাভারের উলাইল, আশুলিয়া, কাঠগড়া, জিরাবো, নরসিংহপুরসহ কয়েকটি এলাকায় বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে অবরোধ সৃষ্টির চেষ্টা করলে সংঘর্ষের এসব ঘটনা ঘটে।
বেরন এলাকার নারী ও শিশু স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, তাদের চিকিৎসাকেন্দ্রে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অন্তত ১৫ শ্রমিক আহত অবস্থায় এসেছেন। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হলে তারা চলে যান।
তবে আহতরা কোথায় চিকিৎসা নিয়েছেন সে বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারেননি।
পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কায় কিছু কারখানা হঠাৎ করে ছুটি দেওয়া হয়।
শিল্প পুলিশ ১-এর পরিচালক সানা সামিনুর রহমান বলেন, হেমায়েতপুরের ডার্ড গ্রুপ, উলাইলের আনলিমা ও আল-মুসলিম গ্রুপসহ ১৫টি কারখানায় বুধবার ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া শ্রমিকদের ইট-পাটকেলে ‘বেশ কয়েকজন’ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, “সকাল থেকে সাভার-আশুলিয়ার বিভিন্ন স্থানে শ্রমিকরা সড়ক অবরোধের চেষ্টা করে।”
শ্রমিকরা চলে গেলে পরিস্থিততি স্বাভাবিক হয়। এরপর সড়কে জলকামান ও পুলিশের বিশেষ সাজোয়া যান এসে মহড়া দিতে দেখা গেছে।
এরআগে সকালে হেমায়েতপুরের স্টান্ডার্ড গ্রুপের শ্রমিকরা হেমায়েতপুর এলাকার ট্যানারি-হেমায়েতপুর সড়ক অবরোধ করে আগুন জ্বেলে বিক্ষোভ দেখান। তারা কিছু কারখানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। সেখানেও শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে কর্তৃপক্ষ কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শ্রমিক বলেয়, নতুন বেতন কাঠামোয় মজুরি বৈষম্যের কারণে তারা আন্দোলন করছেন।
শ্রমিকরা জানান, সকাল সাড়ে ১০টায় বেরন সরকার মার্কেট, ছয়তলা, জামগড়া, শিমুলতলা ও ইউনিক এলাকার কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রেখে রাস্তায় নেমে আসেন। তখনও পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। তখন দূরপাল্লার শাহ ফতেহ আলী পরিবহন, সিমেন্টভর্তি কভার্ড ভ্যান, পাজেরো জিপ, মিনিবাসসহ ১৫-২০টি গাড়ি ভাংচুর করেন শ্রমিকরা।
ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা একপর্যায়ে ইউনিক ও শিমুলতলা পলমল গ্রুপ এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জামগড়া চৌরাস্তায় গেলে পুলিশের একটি দল তাদের বাধা দেয়। পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করলে তারা চলে যান।
আশুলিয়া থানা পরিদর্শক (তদন্ত) জাভেদ মাসুদ বলেন, শ্রমিকরা তাদের দাবি নিয়ে রাস্তায় যান চলাচলে বাধা দেওয়ার পাশাপাশি ভাংচুর ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন। তবে পুলিশ তাদের শান্তিপূর্ণভাবে সড়ক থেকে সরিয়ে দিয়েছে।
এসব ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি বলে তিনি জানান।
গাজীপুরের গাজীপুরা ও নাওজোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।
পরে পুলিশ কাদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
জেলা প্রশাসক দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, “পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে চার প্লাটুন বিজিবি নামানো হয়েছে।”
টঙ্গীর বিসিক এলাকায় বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন বলে জানান টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি মো. কামাল হোসেন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সকালে লোহার রড, লাঠি, হকিস্টিক নিয়ে কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা বিভিন্ন কারখানার সামনে গিয়ে শ্রমিকদের তাদের সঙ্গে বিক্ষোভে যোগ দিতে বলেন।
“এ সময় টঙ্গী বিসিক শিল্প এলাকার নর্দান গার্মেন্ট কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলনে যোগ না দিয়ে বরং আন্দোলনরত শ্রমিকদের ধাওয়া দিয়ে বিসিক পানির ট্যাংকি পর্যন্ত নিয়ে যায়।”
এ সময় দুই পক্ষের শ্রমিকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয় জানিয়ে তিনি বলেন, সংঘর্ষে টিকতে না পেরে একপর্যায়ে নর্দানের শ্রমিকরা তাদের কারখানায় ভেতরে গিয়ে আশ্রয় নেয়। এ সময় বহিরাগত শ্রমিকরা নর্দানে হামলা চালাতে গেলে সেখানকার শ্রমিকরা কারখানার ছাদ থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গরম পানি ছুড়তে থাকে। একপর্যায়ে তারা বিকল্প পথে নর্দান কারখানা থেকে বের হয়ে চলে যাওয়ার সময় উত্তেজিত বহিরাগত শ্রমিকরা নর্দানে ব্যাপক ভাংচুর চালায় এবং আগুন দেয়।
“সেখানে দমকল বাহিনীর গাড়ি যেতেও বাধা দেয় উত্তেজিত শ্রমিকেরা। এর আগে পাশেই প্যাট্টিয়ট ইকো অ্যাপারেলস নামের একটি নতুন কারখানায় ব্যাপক ভাংচুর চালায় বহিরাগত শ্রমিকরা। কারখানার প্রধান ফটক ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে ভাংচুরের পর সেখানে একটি মোটরসাইকেলে আগুন দেয় তারা। দমকল বাহিনীর কর্মীরা যেতে না পারায় অবশেষে কারখানার নিজস্ব অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।”
পরে শিল্প পুলিশ গিয়ে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে বলে জানান ওসি কামাল হোসেন।