তিন ডিসিকে ‘হুমকি’ দিয়ে চিঠি

নির্বাচন কেন্দ্র করে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দিকা, মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুল ইসলাম ও বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাকে ‘হুমকি’ দিয়ে উড়ো চিঠি পাঠানো হয়েছে।

মাদারীপুর ও বাগেরহাট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Dec 2018, 10:11 AM
Updated : 21 Dec 2018, 05:49 PM

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ‘নিরপেক্ষভাবে কাজ না করলে’ জেলা প্রশাসক ও তার পরিবারের সদস্যদের ‘ক্ষতি করার হুমকি দেওয়া হয়েছে সেখানে।

প্রেরকের নাম-ঠিকানাবিহীন খামে ডাকে তিনটি চিঠিতেই হাতের লেখা ও ভাষা একই রকম।

হুমকির চিঠি পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের নিরাপত্তা জোরদার করার কথা জানানো হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। 

মাদারীপুর

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, খামের ওপর লাল কালিতে ‘অতীব গোপনীয়’ লেখা চিঠিটি বুধবার সন্ধ্যায় তার অফিসের ঠিকানায় আসে।  

“চিঠির শেষে কারও নাম লেখা ছিল না। শুধু লেখা ছিল ‘চলমান’। এর অর্থ হতে পারে তারা আবারও এ বিষয়ে হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠাতে চায়।”

চিঠিতে লেখা হয়েছে- “জনাব, আপনি আমাদের সালাম গ্রহণ করুন। আশা করি ভালো থাকবেন। তবে বর্তমান সময়ে আপনার সকল কার্যকলাপ, তৎপরতা আপত্তিকর, পক্ষপাতদুষ্ট। আপনি কি প্রজাতন্ত্রের?? আওয়ামী লীগের কর্মী?

“আপনারা হয়ত সব খবর রাখেন না। নির্বাচনের আগে পরে কিছু তো হবে। কেউ বসে নাই। তাই আপনার প্রতি অনুরোধ, আগামী ৩ দিনের মধ্যে ১০০% নিরপেক্ষ হয়ে যান। হতে হবে। অন্যথায় অ্যাকশন, আপনার পরিবার, পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, স্থাবর অস্থাবর সকল স্বার্থের ওপর চরমভাবে আঘাত করা হবে।”

এবার কৌশল পরিবর্তন করা হবে মন্তব্য করে চিঠিতে বলা হয়, “যেখানেই পাওয়া যাবে সেখানেই আক্রান্ত করা হবে। এবার আপনারাই টার্গেট, এবার আর ছাড় দেওয়া হবে না।

“আপনার প্রতিষ্ঠানের তৎপরতা মনিটর হচ্ছে। আপনার অপরাধ দিন দিন ভারী হচ্ছে। তাই টার্গেট থেকে বাদ পড়তে ১০০% নিরপেক্ষতা প্রমাণ করুন। অন্যথায় অ্যাকশন।”

ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, “অতীতেও বিভিন্ন সময়ে এমন চিঠি পেয়েছি।তাই এতে আমি ভীত নই। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে আমার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।”

ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানানোর পর বাসা ও অফিসে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে ডিসি জানান।

বাগেরহাট

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, “বৃহস্পতিবার প্রেরকের নাম-ঠিকানাবিহীন একটি চিঠি ডাকে করে আমার কাছে আসে। চিঠিটি হাতে লেখা তাতে আমাকে হুমকি ধামকি দেওয়া হয়েছে।”

চিঠিতে লেখা হয়েছে- “বর্তমান সময়ে আপনার সকল কার্যকলাপ তৎপরতা আপত্তিকর পক্ষপাতদুষ্ট।আপনি কি প্রজাতন্ত্রের? আওয়ামী লীগ কর্মী? আপনারা হয়ত সব খবর রাখেন না। নির্বাচনের আগে পরে কিছু তো হবে। কেউ বসে নেই, তাই আপনার প্রতি অনুরোধ আপনি আগামী তিনদিনের মধ্যে শতভাগ নিরপেক্ষ হয়ে যান। হতে হবে। অন্যথায় এ্যাকশন।

“আপনার পরিবার পরিজন, আত্মীয়-স্বজনের ওপর আঘাত করা হবে। এবার কৌশল পরিবর্তন, যেখানেই পাওয়া যাবে সেখানেই আক্রান্ত করা হবে। এবার আপনারাই (ডিসি) টার্গেট, এবার আর ছাড় দেওয়া হবে না।”

চিঠিতে আরও বলা হয়- “আপনার প্রতিদিনের তৎপরতা মনিটর হচ্ছে, আপনার অপরাধ দিনদিন ভারী হচ্ছে। তাই টার্গেট থেকে বাদ পড়তে নিজেকে শতভাগ নিরপেক্ষ প্রমাণ করুন। অন্যথায় অ্যাকশন।”

তপন বলেন, “আমি আসন্ন নির্বাচনে বাগেরহাটে একটি সুষ্ঠু অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করছি। আমি সবার প্রতি সমান আচরণ করছি।

“আমার মনোবল ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য এ চিঠি পাঠানো হয়ে থাকতে পারে।কিন্তু আমি মনোবল শক্ত রেখে কাজ করব।”

ঘটনাটি জেলার পুলিশ সুপারকে জানানোর পর তারা তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন বলে ডিসি জানান।  

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পঙ্কজ চন্দ্র রায় বলেন, এ ঘটনার পর জেলা প্রশাসকের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বেনামে পাঠানো চিঠিটি কারা  ও কি উদ্দেশ্যে দিয়েছে তা অনুসন্ধান করতে প্রশাসনের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ পুলিশের একাধিক দল কাজ শুরু করেছে।

বাগেরহাটের চারটি আসনে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে বলেও জানান তিনি।

কামরুন নাহার সিদ্দিকা

সিরাজগঞ্জ

শুক্রবার সন্ধ্যায় চিঠিটি প্রাপ্তির কথা জানান জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দিকা।

তিনি বলেন, প্রেরকের ঠিকানাবিহীন একটি চিঠিতে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও তার পরিবারকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে।

“বুধবার সকালে অফিসের ঠিকানায় এই চিঠিটি আসে। খাকি রঙের খামে এক পাতার ওই চিঠির ওপরের অংশ লাল কালিতে ও নিচের অংশ সবুজ কালিতে লেখা। তবে চিঠিতে প্রেরকের নাম-ঠিকানা নেই। বিষয়টি পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।”

শুক্রবার একযোগে কয়েকজন জেলা প্রশাসকের নামে উড়ো চিঠি আসার সংবাদ গণমাধ্যমে দেখার পর তিনিও সাংবাদিকদের বিষয়টি অবগত করেন বলে জানান।

তিনি বলেন, “চিঠিতে বলা হয়েছে, আমার কর্মকাণ্ড তারা খেয়াল করছে। তিন দিনের মধ্যে আমি যদি ঠিক না হই তাহলে তারা আমাকে দেখে নেবে। শুধু আমাকে না, আমার আত্মীয়-স্বজন, ছেলেমেয়ে সম্পত্তির ওপর তারা নজর রাখছে। ঠিক না হয়ে গেলে তারা আক্রমণ চালাবে। চিঠির শেষের অংশে লেখা আছে ‘চলমান’।”