চার হাজার পরিবারের সর্বস্ব পদ্মার পেটে

পদ্মার ভাঙনে গত এক সপ্তাহে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার চার শতাধিক বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে বলে উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে।

কে এম রায়হান কবীর শরীয়তপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Sept 2018, 06:29 AM
Updated : 18 Sept 2018, 06:48 AM

গত দুই মাসের অব্যাহত ভাঙনে উপজেলার মুক্তারের চর, কেদারপুর ইউনিয়ন ও নড়িয়া পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে।

এসব এলাকার প্রায় চার হাজার পরিবার সব হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছে বলে জানিয়েছেন নড়িয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা সানজিদা ইয়াসমিন।

তিনি জানান, স্থানীয় সাধুর বাজার ও ওয়াপদা বাজারের দুই শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মুলফৎগঞ্জ বাজারের দুই শতাধিক দোকানপাট নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

দুইশ বছরের পুরনো মূলফৎগঞ্জ বাজারের বড় একটি অংশ গত এক সপ্তাহে হারিয়ে গেছে নদীতে।

রোববার দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, মুলফৎ বাজার, চর জুজির গাঁও, দাসপাড়া, উত্তর কেদারপুর এলাকার ভাঙন আরও তীব্র হয়েছে। ঘরবাড়ির পাশাপাশি রাস্তা, ব্রিজ, কালভার্ট এবং বিভিন্ন বড় বড় স্থাপনা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বিলীন হয়ে গেছে হাজার হাজার একর আবাদি জমি।

ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে রয়েছে মুলফৎগঞ্জ বাজারের আরও আট শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নিচ্ছেন।

নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের হাসপাতাল মসজিদের একাংশ ইতোমধ্যে গ্রাস করে নিয়েছে নদী; এখন হাসপাতালটিও ভাঙনের মুখে।

হাসপাতালের চিকিৎসক গোলাম ফারুক বলেন, “ভাঙতে ভাঙতে পদ্মা এখন নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গেইটে। যে কোনো মূহুর্তে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। নড়িয়া উপজেলার মানুষের চিকিৎসা সেবা পাওয়া তখন কঠিন হয়ে যাবে। জরুরি ভিত্তিতে সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।”

হাসপাতালের স্টাফ নার্স রোজিনা আক্তার বলেন, “হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কার্যক্রম আবাসিক ভবনে পরিচালনা করা হচ্ছে। দুটি মূল ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। যে কোনো সময় পুরো হাসপতাল নদীতে চলে যাবে।”

এদিকে ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ, পদ্মার ভাঙনে তারা সব হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করলেও সরকারি কর্মকর্তাদের দেখা মিলছে না। সাহায্য যা এসেছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। 

চরজুজিরা গ্রামের খোকন খান বলেন, “পদ্মার ভাঙনে দোকান পাট বাড়িঘর জমিজমা হারিয়ে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। অনাহারে-অর্ধাহারে আমাদের থাকতে হচ্ছে।”

কেদারপর ইউনিয়ন চেয়াম্যান আলমগীর হোসেন বিদেশে থাকায় সদস্য হাফেজ ছানা উল্লাহ মিয়া ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন।

সাহায্য না পাওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ছানা উল্লাহ মিয়া বলেন, “ইউনিয়ন পরিষদের কোনো তহবিল নেই; তাই কোনো সাহায়্য করতে পারব না।”

নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা সানজিদা ইয়াসমিন বলেন, ইতোমধ্যে ভাঙন কবলিতদের মাঝে জেনারেল রিলিফের চাল, ঢেউটিন ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

সাধুর বাজার এলাকায় ভূমি ধসে আহতদের ২০টি পরিবারের মাঝে দশ হাজার টাকা করে বিতরণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।