গত দুই দিনেই বিলীন হয়েছে ঐতিহ্যবাহী মূলফৎগঞ্জ বাজারের তিন শতাধিক দোকানপাট; ঝুঁকিতে পড়েছে আরও নয় শতাধিক।
নড়িয়ার একমাত্র সরকারি হাসপাতালটি যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে যেতে পারে এই আশঙ্কায় মালপত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সানজিদা ইয়াসমিন বলেন, এখন পর্যন্ত সাড়ে তিন হাজার পরিবারের বাড়িঘর নদীতে বিলীন হওয়ার তথ্য লিপিবদ্ধ হয়েছে।
এর বাইরে নড়িয়া-সুরেশ্বর সড়ক, একটি স্কুল, মসজিদ, ওয়াপদা বাজার, বাঁশতলা বাজার, চরজুজিরা, সাধুর বাজার, পৌর এলাকার শুভগ্রাম, পাচঁগাওসহ কয়েকটি এলাকা নদীতে বিলীন হওয়ার তথ্য রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ওই এলাকায় পদ্মাতীরের মানুষের চোখে ঘুম নেই। তারা দিনরাত তাদের শেষ সম্বল ঘরবাড়ি, দোকান-পাট ভেঙে সিরেয় নিতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু চোখের সামনেই বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
বিলীন হয়ে যাওয়া তিনতালাবিশিষ্ট চারটি ভবনের মালিক ছিলেন নূর হোসেন দেওয়ান ও ইমাম হোসেন দেওয়ান।
ইমাম হোসেন দেওয়ান কেদারপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। শুধু বাড়িঘর নয়, তিনি তার জমিজমাও হারিয়েছেন।
ঈমাম হোসেন বলেন, “এলাকায় মহাদুর্যোগ চলছে। আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমাদের দেখার কেউ নেই। আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদের জন্য কিছুই রেখে যেতে পারলাম না। আমরা এখন ভূমিহীনদের কাতারে চলে এসেছি।”
ইব্রাহীম ঢালী বলেন, “চোখের পানি ফেলা ছাড়া আমাদের আর যেন কিছুই করার নেই।”
আবুল হোসেন বেপারী, রহমান মাদবর, হাসেম দেওয়ান, তোতা খানসহ নদীর তীরে দাঁড়িয়ে থাকা যার সঙ্গে কথা হয়েছে, সবার মুখে একটাই বাক্য, চোখের সামনে বসতবাড়ি, দোকানপাট পদ্মায় তলিয়ে গেলে। হাজার হাজার মানুষের বাড়িঘর বিলীন হয়ে নিঃস্ব হয়ে গেল।
অবশেষে এ বছর জানুয়ারিতে হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকে পাসও হয়। কিন্তু কাজ শুরুর আগেই এলাকাবাসীকে এই দুর্যোগের মুখোমুখি হতে হল।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ১ হাজার ৯৭ কোটি টাকার এই বরাদ্দ দিয়ে ভাঙনরোধের জন্য খুব শিগরিরই তীর রক্ষা বাঁধের কাজ শুরু হবে। আপাতত জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে, কিন্তু তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না।
পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার বিষয়ে ইউএনও সানজিদা বলেন, ভাঙন সরকারি হাসপাতালের কাছে এসে পড়ায় ওপরমহলের নির্দেশে মালপত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আবাসিক দুটি ভবনে জরুরি চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য আপাতত ৩৫০ পরিবারকে দুই বান্ডেল করে টিন ও নগদ ছয় হাজার করে টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।