উজানের ঢলে মৌলভীবাজারের শতাধিক গ্রাম প্লাবিত

টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মৌলভীবাজারের মনু ও ধলাই নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

মৌলভীবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 June 2018, 04:07 PM
Updated : 13 June 2018, 04:07 PM

বুধবার কুলাউড়ার শরীফপুরে মনু নদের পানি বিপদসীমার ১৭৫ সেন্টিমিটার এবং কমলগঞ্জে ধলাই নদের পানি ৫৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

দুই নদের পানি বেড়ে সৃষ্ট বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে দুই উপজেলার শতাধিক গ্রামের অন্তত চার হাজার পরিবার।

এদিকে পানি বাড়ায় ছাতলাপুর স্থলবন্দরের একমাত্র সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় আটকা পড়েছে স্থলবন্দর ব্যবহার করা দুই দেশের যাত্রীরা।

মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী পার্থ জানান, বেশ কয়েটিক স্থানে মনু ও ধলাই পাড় ভেঙে পানি ঢুকছে। গত তিন দিনে দুই নদীতে কোথাও ১১ ফুট কোথাও ১২ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

কুলাউড়ার মনু রেলসেতুতে বিপদসীমার ১৭৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মনুর পানির চাপে চাতলাপুর সড়কে একটি কালভার্ট দেবে গেছে বলে জানান তিনি।

কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী গোলাম রব্বানী জানান, টিলাগাঁও ইউনিয়নের পশ্চিমে বলিহারা গ্রামে প্রায় ৩০০ ফুট দীর্ঘ ভাঙন দেখা দিয়েছে। যেভাবে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে এতে ভাঙনের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পেতে পারে।

মৌলভীবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল মতলিব জানান, ত্রিপুরা থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বুধবার ভোরে মনু ও ধলই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে কুলাউড়া, কমলগঞ্জ ও রাজনগরের শতাধিক গ্রাম। ডুবে গেছে কমলগঞ্জ ব্রাহ্মণ বাজার সড়ক, কমলগঞ্জ-মৌলভীবাজার সড়ক ও সমশের নগর ছাতলাপুর সড়ক।

বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করায় অনেকে প্রতিরক্ষা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানান তিনি।

কুলাউড়া উপজেলা চেয়ারম্যান মো. কামরুল ইসলাম জানান, কুলাউড়া উপজেলার চাতলাপুর, বালিয়া ও তেলিবিল এলাকার প্রতিরক্ষা বাঁধ ও কমলগঞ্জ উপজেলার করিমপুর, বাদে করিমপুরসহ সাতটি স্থানে বাঁধ ভেঙেছে। বিভিন্ন জায়গায় নদীর পাড় উপচে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

কুলাউড়া শরিফপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জুনাব আলী জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে আমলা বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন মনু প্রতিরক্ষা বাঁধে ভাঙ্ন শুরু হলে গ্রামবাসী ও বিজিবি সদস্যরা শতাধিত বস্তা বালি দিয়ে এ স্থান রক্ষা করে। তবে রাত আড়াইটায় বাঘজুর ও তেলিবিল গ্রাম এলাকার প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে ঢলের পানি গ্রামে প্রবেশ করে।

পানি ঢুকে বাঘজুর, তেলিবিল, চাঁনপুর, খাম্বারঘাট, শরীফপুর, বটতলা, সঞ্জরপুর গ্রামের দুই হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে জানান তিনি।

একইসময় চাতলা সেতুর উত্তর দিকে কয়েক মাস আগে নির্মিত প্রতিরক্ষা বাঁধও ভেঙে ঢলের পানি গ্রামে প্রবেশ করে। ফলে নছিরগঞ্জ, ইটারঘাট, মনোহরপুর, নিশ্চিন্তপুর, মাদানগর গ্রামের এক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

অপরদিকে মনু নদীর আশ্রয়গ্রাম এলাকা, সন্দ্রাবাজ, খন্দখারের গ্রাম, ইছবপুর ও মিয়ারপাড়া এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে বলে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মালিক জানিয়েছেন।

কমলগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুর রহমান জানান, কমলগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদীর আটটি স্থানে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে ৩০টি গ্রাম। ভারতের ত্রিপুরা এলাকা থেকে পাহাড়ি ঢলে নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বুধবার সকাল পর্যন্ত কমলগঞ্জে প্রায় ৪০ হাজার লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যার পানিতে মুন্সীবাজার-কমলগঞ্জ-কুরমা সড়ক ও শমশেরনগর-কুলাউড়া সড়ক তলিয়ে গেছে।

মুন্সীবাজার ইউনিয়ন ও কমলগঞ্জ পৌর এলাকায় শতাধিক কাঁচা ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। সহস্রাধিক হেক্টর আউশ ফসল পানিতে নিমজ্জ্বিত রয়েছে। অপরদিকে ভানুগাছ বাজার সংলগ্ন, রামপাশা, আলেপুর এলাকায় আরও তিনটি স্থানে বাঁধ ঝুঁকির মুখে রয়েছে বলে জানান তিনি।

কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুল হক জানান, বুধবার দুপুরে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কমলগঞ্জ পৌরসভা ও মুন্সীবাজার ইউনিয়নের ১২৫টি পানিবন্দি পরিবারের মাঝে জরুরি ভিত্তিতে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে।