গাজীপুর যেন যানজটের জেলা

বিভিন্ন জায়গায় নির্মাণকাজ, যত্রতত্র গাড়ি রাখা, রাস্তার পাশে দোকানপাটের কারণে গাজীপুর পরিণত হয়েছে যানজটের জেলায়।

আবুল হোসেন গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 May 2018, 06:56 AM
Updated : 23 May 2018, 09:54 AM

এ জেলার ওপর দিয়ে চলাচলরত টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ ও অন্যান্য জেলার মানুষকে নিত্য ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

আধাঘণ্টার পথ যেতে চার ঘণ্টা পর্যন্ত লেগে যাচ্ছে বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।

শহরের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঢাকার উত্তরায় তার অফিস।

“বাসা থেকে ভোরে রওনা হয়েও যানজটের কারণে অনেক সময়ই ১০টায় অফিসে পৌঁছাতে পারি না। আধা ঘণ্টার পথে তিন থেকে চার ঘণ্টা পর্যন্ত কাটাতে হয়।”

পুলিশ বিভিন্ন নির্মাণকাজকে যানজটের কারণ বলে চিহ্নিত করেছে।

জেলা ট্রাফিক পুলিশের এএসপি সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ছয়দানা, চান্দনা-চৌরাস্তা ও ভোগড়া বাইপাস মোড় এলাকায় নালা নির্মাণের কাজ চলছে। কাজ শুরুর আগে বিকল্প রাস্তার ব্যবস্থা করা হয়নি। রাস্তার প্রশস্ততা কমে যাওয়ায় এই জট।

“নালা নির্মাণ করতে গিয়ে রাস্তার ওপর মাটি ও ময়লা ফেলে রাখায় যানজট হচ্ছে। এছাড়া ওভার ব্রিজ ও বিআরটি রুট নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরুর আগে বিকল্প সড়ক বানানোর প্রস্তাবনা থাকলেও বাস্তবে তা না হওয়ায় জট লাগছে।”

নাওজোর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. অহিদুজ্জামান চিহ্নিত করেছেন আরও কয়েকটি কারণ।

তিনি বলেন, চান্দনা-চৌরাস্তায় ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ চলছে। ভোগড়া বাইপাস মোড়েও চলছে ফ্লাইওভারের কাজ। মহাসড়কের পাশে জলাবদ্ধতা আছে অনেক জায়গায়। মহাসড়কে ট্রাকস্ট্যান্ড আরেকটা কারণ। ফুটপথ দখল করে দোকানপাট বসানো হয়েছে বহু জায়গায়।

আর শিল্প এলাকা হওয়ায় লাখ লাখ শ্রমিক ও এলাকাবসী চলাচল করার সময় জট লেগে যায় বলে তিনি জানান।

শুকনো মৌসুমে এই জট মোটামুটি সহনীয় থাকলে বর্ষায় ভোগান্তি বেড়ে যায়। ভোগড়া বাইপাস, চৌধুরীবাড়ি, বাসন সড়ক, ছয়দানা, মালেকের বাড়ি, সাইনবোর্ড এলাকায় মহাসড়কের পাশে প্রায়ই জলাবদ্ধতা দেখা যায়।

অবৈধ পার্কিং

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাস্তার আশপাশে অসংখ্য পোশাক কারখানা থাকলেও তাদের গাড়ির জন্য কোনো পার্কিং ব্যবস্থা নেই। ফলে তাদের পণ্যবাহী গাড়ি, প্রাইভেট কার রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে কাজ সারে।

টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাড়কের দুই পাশে, চান্দনা চৌরাস্তা থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিয়াকৈরের চন্দ্রা পর্যন্ত, চান্দনা চৌরাস্তা থেকে জেলা শহরের শিববাড়ি পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে অসংখ্য ছোট-বড় কারখানা রয়েছে।

এছাড়া চান্দনা চৌরাস্তার পশ্চিমে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে রড-সিমেন্টের ছোট-বড় অসংখ্য দোকান রয়েছে। এসব দোকানের সামনে বড় বড় গাড়ি থামিয়ে লোড-আনলোড করতে গিয়েও মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি হয়।

মহাসড়কের ওপর ট্রাকস্ট্যান্ড

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ওপর গাজীপুরের তেলিপাড়া এলাকায় ট্রাকস্ট্যান্ড থাকায় চলাচলের পথ সংকীর্ণ হয়ে গেছে। প্রতিনিয়ত যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি  হচ্ছে এখানে।

ওভার ব্রিজ না থাকা

এএসপি সালেহ উদ্দিন বলেন, কারখানার কাছে মহাসড়কে ওভার ব্রিজ না থাকায় শ্রমিকদের রাস্তা পার হওয়ার সময় গাড়ির গতি কমাতে হয়, অনেক সময় থামতে হয়। এতে জট লাগে।

ফুটপথ ও মহাসড়কে দোকানপাট

গাজীপুরের চান্দনা-চৌরাস্তা, ছয়দানা ও সাইনবোর্ড এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাড়কের পাশের ফুটপথ ও মহাসড়ক দখল করে অবৈধ বাজার বসে। এসব বাজারের কারণে মহাসড়ক সংকীর্ণ হয়ে যায়। পথচারীরা মহাসড়কে চলতে গিয়ে যান চলাচল বিঘ্নিত হয়। অনেক সময়ই জট লাগে।

এএসপি সালেহ উদ্দিন বলেন, মাঝে মাঝে অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করা হলেও একদিন না যেতেই আবার সেখানে দোকান-পাট বসে যাচ্ছে। এজন্য প্রতিদিন সকাল-বিকেল মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা প্রয়োজন।

পুলিশের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ

পুলিশ চাঁদা আদায়ের জন্য চন্দ্রা, কোনাবাড়ি ও ভোগড়া বাইপাস মোড়ে পণ্যবাহী যান থামিয়ে রাখায় জট লাগে বলে পরিবর্হন শ্রমিকরা অভিযোগ করেছেন।

মেসার্স সিফাত এন্টারপ্রাইজের কভার্ড ভ্যানচালক মো. সোহেল বলেন, তিনি ওই পথে ১০ বছর ধরে গাড়ি চালাচ্ছেন।

“অন্য সব কারণের পাশাপাশি ওই তিনটি স্পটে পুলিশ পণ্যবাহী গাড়ি থামিয়ে চাঁদা আদায় করে থাকে। এতেও দীর্ঘ জট সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে ঈদে এর মাত্রা বেড়ে যায়।”

বগুড়া থেকে চট্টগ্রামগামী পণ্যবাহী ট্রাকের চালক রুবেলও একই অভিযোগ করেন।

এ বিষয়ে পুলিশ কর্মকর্তা সালেহ উদ্দিন বলেন, “পুলিশের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ আরও পেয়েছি। এজন্য ওইসব এলাকায় মনিটরিং আরও জোরদার করা হবে।”

বিকল্প রাস্তার বিষয়ে গাজীপুর সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাহিন রেজা বলেন, সালনা থেকে শিমুলতলী পর্যন্ত রাস্তা গাজীপুর সিটি করপোরেশন ও এলজিইডির আওতায়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি পাওয়ার পর ওই রাস্তার কাজ শুরু করা যাবে। টঙ্গীর আমতলী থেকে বনমালা রেলওয়ের জমিতে রাস্তা নির্মাণে রেল কর্তৃপক্ষের অনুমতি না থাকায় কাজ করা যাচ্ছে না। বনমালা থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত রাস্তার কাজ চলমান রয়েছে।