শক্তিমানের শেষকৃত্যে যাওয়ার পথে গাড়িতে গুলি, নিহত ৫

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) নেতা শক্তিমান চাকমার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে যাওয়ার পথে রাঙামাটিতে একটি মাইক্রোবাসে গুলি চালিয়ে পাঁচজনকে হত্যা করা হয়েছে।

খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 May 2018, 08:34 AM
Updated : 5 May 2018, 04:33 AM

শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সীমান্তের কাছে বেতছড়ি এলাকায় ওই হামলায় আরও আটজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন জেএসএস (এমএন লারমা) এর খাগড়াছড়ি জেলার রাজনৈতিক সম্পাদক বিভূরঞ্জন চাকমা।

রাঙামাটির পুলিশ সুপার আলমগীর কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঘটনাস্থলেই তিনজন নিহত হন। আর আহতদের খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখানে মারা যান দুজন।”

রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমা খুন হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নতুন করে এই হত্যাকাণ্ডে পাহাড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

নিহতদের মধ্যে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক) আহ্বায়ক তপনজ্যোতি চাকমা বর্মা, জনসংহতি সমিতির সহযোগী সংগঠন যুব সমিতির  (এমএন লারমা) মহালছড়ি শাখার সভাপতি সুজন চাকমা এবং সদস্য তনয় চাকমা ঘটনাস্থলেই মারা যান।

মাইক্রোবাসের চালক সজীব এবং যুব সমিতির (এমএন লারমা) সদস্য রবিন চাকমা খাগড়াছড়ি হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান বলে জেএসএসের (এমএন লারমা) কেন্দ্রীয় ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক বাঘাইছড়ি উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান সুদর্শন চাকমা জানান।

বিভুরঞ্জন চাকমা বলেন, শক্তিমানের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে সংগঠনের মোট ১২ জন নেতাকর্মী খাগড়াছড়ি থেকে ওই মাইক্রোবাসে করে রাঙামাটির নানিয়ারচরের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন। পথে বেতছড়ি এলাকায় তাদের গাড়িতে ‘ব্রাশফায়ার’ করা হয়।

অ্যাডভোকেট শক্তিমান চাকমা ২০১০ সালে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি থেকে বেরিয়ে গিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা) নামে গঠিত নতুন দলে যোগ দেন। তিনি ছিলেন ওই সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি।

বৃহস্পতিবার বাসা থেকে মোটরসাইকেলে করে উপজেলা পরিষদে নিজের কার্যালয়ে যাওয়ার সময় গুলি করে হত্যা করা হয় শক্তিমানকে। সে সময় তার সঙ্গে থাকা জেএসএস (এমএন লারমা) নানিয়ারচর উপজেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রূপম চাকমাও গুলিবিদ্ধ হন।

শক্তিমানকে হত্যার জন্য ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টকে (ইউপিডিএফ) দায়ী করে তার সংগঠন। শুক্রবার পাঁচজনকে হত্যার ঘটনাতেও একই অভিযোগ করা হচ্ছে।

ইউপিডিএফের (গণতান্ত্রিক) মিডিয়া উইংয়ের দায়িত্বে থাকা লিটন চাকমা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শক্তিমান চাকমাকে হত্যা করার পর তপনজ্যোতি চাকমা বর্মাকে হত্যার মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে একক সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য তারা (ইউপিডিএফ) একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে।”

তপনজ্যোতি চাকমা বর্মা

ইউপিডিএফ থেকে বেরিয়ে গিয়ে নতুন দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা ইউপিডিএফের (গণতান্ত্রিক) নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন তপনজ্যোতি চাকমা বর্মা।

অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপিডিএফের প্রচার বিভাগের প্রধান নিরন চাকমা বলেন, “হামলার ঘটনার সঙ্গে আমাদের কেউ জড়িত নয়।  এটা তাদের নিজেদের কোন্দলের ফল হতে পারে। আমরা প্রশাসনকে এটা বের করার আহ্বান জানাচ্ছি।”

খাগড়াছড়ি সদর থানার ওসি শাহাদাত হোসেন টিটু জানান, আহতদের মধ্যে আটজনকে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর চারজনকে ভর্তি করে বাকি চারজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই আলাউদ্দিন তালুকদার জানান, খাগড়াছড়ি থেকে আসা অর্জুন চাকমা (২৪), দ্বিজেন্দ্র চাকমা (২৫), অরসিং চাকমা (৩৫) ও মিহির চাকমাকে (২৮) হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাদের মধ্যে দ্বিজেন্দ্রের অবস্থা আশঙ্কাজনক। 

খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক নয়নময় ত্রিপুরা জানান, নিহত পাঁচজনের লাশ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

গত মার্চে খাগড়াছড়ির ইউপিডিএফ নেত্রী মন্টি চাকমা ও দয়াসোনা চাকমাকে অপহরণের ঘটনায় যে মামলা হয়েছিল, সেখানে শক্তিমান চাকমা ও তপনজ্যোতি চাকমাসহ ১৯ জনকে আসামি করা হয়।

আর চলতি বছরের শুরু ইউপিডিএফ নেতা মিঠুন চাকমা হত্যা মামলার এজাহারেও আসামি হিসেবে ওই দুইজনের নাম ছিল।