নীলফামারীতে তেল সরবরাহে বিঘ্ন

নীলফামারী জেলায় ডিজেল, পেট্রোল ও অকটেনের সরবরাহ কমে যাওয়ায় নানা সমস্যায় পড়েছেন ব্যবহারকারীরা।

বিজয় চক্রবর্তী কাজল নীলফামারী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 March 2018, 05:05 PM
Updated : 21 March 2018, 05:05 PM

সেচনির্ভর বোরো চাষিরা বিপাকে পড়েছেন।

ডিমলা উপজেলার ডালিয়ায় অবস্থিত তিস্তা ফিলিং স্টেশনের মালিক আকতার হোসেন স্বপন বলেন, তারা জেলার ফিলিং স্টেশনের মালিকরা পার্বতীপুর ডিপো থেকে ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন উত্তোলন করে বিক্রি করেন। কিন্তু প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ওই ডিপো থেকে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ পাচ্ছেন না। ফলে গত মঙ্গলবার সকাল থেকে তার ফিলিং স্টেশন বন্ধ রাখতে হয়েছে।

ওই রাতে বাঘাবাড়ি ডিপোতে গাড়ি পাঠিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, কবে ফিরবে বলতে পারছেন না। গাড়ি ফিরলে ফিলিং স্টেশন চালু করা সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, পার্বতীপুর ডিপোতে ডিজে, পেট্রোল ও অকটেন না পেয়ে সিরাজগঞ্জ জেলার বাঘাবাড়ি ডিপো থেকে সংগ্রহ করছে উত্তরাঞ্চলের নীলফামারী, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, রংপুর, লালমনিরহাট জেলার সকল ফিলিং স্টেশন, ফলে সেখানে চাপ বেড়েছে।

এতে জ্বালানি সংগ্রহে সময় লাগছে, পরিবহন খরচও বেড়েছে বলে তার ভাষ্য।

জেলা শহরের অদূরে ইটাখোলা গ্রামে মুক্তা ফিলিং স্টেশনে গিয়ে ডিজেল ও অকটেন সংকটের কথা জানা গেছে।

সেখানে কর্তব্যরত মো. গোলাম ফারুক বলেন, “মঙ্গলবার রাতে ডিজেল ও অকটেন শেষ হয়েছে। এর আগে দুই দফায় পার্বতীপুর ডিপোতে গিয়ে তেলের গাড়ি ফেরৎ এসেছে। এখন বাঘাবাড়ি ডিপোতে পাঠানো হয়েছে। কখন ফিরবে জানা যায়নি।”

তিনি বলেন, স্টেশনে ডিজেল ও অকটেনের জন্য আগত ক্রেতারা ফেরৎ যাচ্ছেন। যে পরিমাণ পেট্রোল আছে তাতে সর্বোচ্চ একদিন চলবে। দ্রুত সরবরাহ না পেলে স্টেশন বন্ধ রাখতে হবে।

জেলা সদরের পলাশবাড়িতে অবস্থিত মেসার্স শামসুল ফিলিং স্টেশনের মালিক মো. সামসুল হক বলেন, তার স্টেশনে যেটুকু ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন মজুদ আছে তা বুধবার সন্ধ্যার মধ্যে শেষ হবে।

পার্বতীপুর ডিপোতে সরবরাহ না পেয়ে মঙ্গলবার রাতে বাঘাবাড়ি ডিপোতে গাড়ি পাঠিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, বুধবার রাতে ফেরার কথা আছে। সময়ের মধ্যে না ফিরলে ক্রেতাদের জ্বালানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে না।

তিনি জানান, একটি লড়িতে পার্বতীপুর ডিপো থেকে জ্বালানি সংগ্রহ করতে পরিবহন খরচ হয় চার হাজার টাকা। সেখানে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি ডিপো থেকে সংগ্রহ করতে পরিবহন খরচ হচ্ছে ১৭ হাজার টাকা। খরচ বাড়ায় ব্যবসায়ীরা লোকশানের মুখে পড়েছেন।

ব্যবসায়ীরা জানান, পার্বতীপুর ডিপো থেকে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা কোম্পানির জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হয়। এমন সরবরাহ সমস্যায় জেলার ৭০টি ফিলিং স্টেশন বন্ধের উপক্রম হয়েছে।

সদর উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের বাহালীপাড়া গ্রামের কৃষক তাইজুল ইসলাম (৪২) বলেন, “ডিজেল চালিত শ্যালো মেশিন দিয়ে এবারে তিন বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছি। সেচের ভরা মৌসুমে পাম্পে (ফিলিং স্টেশনে) গিয়ে চাহিদা অনুযায়ী ডিজেল পাওয়া যাচ্ছে না।”

একই গ্রামের কৃষক সাহাবুল ইসলাম (২৮) বলেন, “বুধবার সকালে শহরের একটি পাম্পে ডিজেল না পেয়ে অন্য পাম্পে যেতে হয়েছে। এ সময় এসব পাম্পের কর্মরতদের কাছে জানতে পেরেছি তারা ডিপো থেকে সরবরাহ পাচ্ছেন না।”

জেলা সদরের পলাশবাড়ি ইউনিয়নের ঢুলিয়া গ্রামের কৃষক নিহারঞ্জন রায় (৩৫) বলেন, “গত মঙ্গলবার পেট্রলপাম্পে গিয়ে ডিজেল পাইনি। এরপর এলাকার বাজারে খুচরা দোকানদারের কাছ থেকে বেশি দামে ডিজেল কিনে শ্যালো মেশিনে সেচ দিচ্ছি। দ্রুত এর সমাধান না হলে বোরো আবাদ নিয়ে সমস্যায় পড়ব আমরা।”

এ ব্যাপারে প্রকাশে অনিচ্ছুক পার্বতীপুর ডিপোর দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, রেলপথে জ্বালানি তেল বহনের ওয়াগানগুলো সিরাজগঞ্জের একটি পাওয়ার প্লান্টের জ্বালানি পরিবহনের কাজে ব্যস্ত আছে। এ কারণে এখানে সরবরাহ কমেছে। সেখানেও পরিবহনের কাজ প্রায় শেষের দিকে।

জ্বালনির কোনো ঘাটতি নেই। আপার পয়েন্টে পর্যাপ্ত মজুদ আছে বলে দাবি করে তিনি বলেন, “ইতিমধ্যে পার্বতীপুরের উদ্দেশে কয়েকটি ওয়াগান রওনা হয়েছে, আশা করছি দ্রুত পৌঁছে যাবে। এটি একটি সাময়িক সমস্যা, আগামী সপ্তাহের মধ্যে সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে যাবে।”