রূপগঞ্জে আ. লীগের দুইপক্ষের সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত

খালেদা জিয়ার দুর্নীতির মামলার রায় ঘিরে এলাকায় অবস্থান নেওয়াকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুইপক্ষ ও পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষে এক যুবলীগকর্মী নিহত হয়েছেন; আহত হয়েছে পুলিশসহ অর্ধশত।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Feb 2018, 07:42 AM
Updated : 8 Feb 2018, 03:26 PM

বৃহস্পতিবার দুপুরে ভুলতা-কুড়িল বিশ্বরোড সড়কে কাঞ্চন সেতু এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বলে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান জানান।

নিহত সুমন আহম্মেদ (৩০) রূপগঞ্জ উপজেলার গন্ধর্বপুর এলাকার মনু মিয়ার ছেলে। তিনি যুবলীগের কর্মী এবং সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজীর সমর্থক ছিলেন।

সুমন পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের এক পক্ষ থেকে দাবি করা হলেও পুলিশ তা অস্বীকার করেছে।

আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ সাত জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং অন্যদের রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

এ ঘটনায় পুলিশ লাঠিসোটা ও ধারাল অস্ত্রসহ উভয়পক্ষের ৪৫ জনকে আটক করেছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, দীর্ঘ দিন ধরে রূপগঞ্জে আওয়ামী লীগের সাংসদ গোলাম দস্তগীর গাজী ও কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম পক্ষের মধ্যে মাঝে প্রায়ই সংঘর্ষ হয়। সকাল থেকেই দুপক্ষ কাঞ্চন সেতুর পশ্চিম পাশে এলাকায় লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে অবস্থান নিয়ে এক পর্যায়ে তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

“পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়ে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরবর্তীতে আমরা জানতে পারি ঘটনাস্থল থেকে দূরে একটি মার্কেটে একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। আরও দুইজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।”

তিনি বলেন, “ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে আমরা জানতে পেরেছি গুলিবিদ্ধ হয়ে সুমন মারা গেছে। কী কারণে, কাদের গুলিতে সুমন মারা গেছে সেই বিষয়গুলো অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলার রায়কে কেন্দ্র করে বিএনপির নেতাকর্মীদের আন্দোলন ঠেকাতে অবস্থান দখলকে কেন্দ্র করে রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই পক্ষ কাঞ্চন সেতু সংলগ্ন হাবিবনগর এলাকায় অবস্থান নেয়। দুইপক্ষ সেতু এলাকায় অবস্থান নেওয়াকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা দেখা দেয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়।

এ সময় ঢাকা বাইপাস (মদনপুর-ভুলতা-জয়দেবপুর সড়ক) সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিপেটা, শটগানের ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়লে পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ বেধে যায় বলে তারা জানান।

এ ব্যাপারে সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, “রফিক চেয়ারম্যানের গানমানের অস্ত্র নিয়ে তার ছোট ভাই শফিক আমার লোকজনের উপর হামলা ও গুলি করেছে। গুলিতে যুবলীগ কর্মী সুমন নিহত হয়েছে।”

ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “কর্মসূচিতে আমি যেতে পারি নাই, সেখানে আমার গানম্যান যাবে কেন?  পুলিশের গুলিতে সুমন মারা গেছে। আমাকে ও আমার ছোট ভাই শফিককে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।”

তবে পুলিশের গুলিতে সুমন নিহতের অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়ে দুইপক্ষের সংঘর্ষ ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে। পুলিশ গুলি ছুড়েছে তিনশ ফুট সড়কে। যুবলীগ কর্মী সুমন মারা গেছে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৩০০ গজ দূরে।

“প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে, পুলিশের গুলিতে নয়, দুপক্ষের অভ্যন্তরীন গুলিতে সুমন নিহত হয়েছে।”