উত্তরা গণভবনে সেই কর্মচারী ফিরেছেন সাংসদের সহায়তায়

নাটোরের উত্তরা গণভবনের ‘গ্র্যান্ড মাদার হাউস’ থেকে বের করে দেওয়া কর্মচারী আবুল কাশেম আবার সেখানে ফিরে গেছেন।

নাটোর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Oct 2017, 05:19 PM
Updated : 19 Oct 2017, 05:19 PM

জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) অনিন্দ্য মণ্ডল বলেন, নাটোর-২ (সদর-নলডাঙ্গা) আসনের সাংসদ শফিকুল ইসলামের অনুরোধে বুধবার রাতে জেলা প্রশাসন তাকে আরও এক সপ্তাহ সেখানে থাকার অনুমতি দিয়েছে।  

সম্প্রতি উত্তরা গণভবনের ভেতরের কিছু মরা গাছ ও ডালপালা বিক্রির জন্য নিলাম বিজ্ঞপ্তি দেয় গণপূর্ত বিভাগ। রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ায় গণপূর্ত বিভাগ বন বিভাগের কর্মকর্তাদের দিয়ে গাছগুলি শনাক্ত করে মূল্য নির্ধারণ করে।

কিন্তু ঠিকাদার নির্ধারিত গাছের বাইরেও বেশ কিছু শতবর্ষী তাজা আমগাছ কেটে বাইরে নিয়ে যাচ্ছিল। জেলা প্রশাসন বিষয়টি জানার পর গাছকাটা বন্ধ করে দেয়।

অনিন্দ্য মণ্ডল জানান, এ ঘটনার পর মঙ্গলবার সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে উত্তরা গণভবন ব্যবস্থাপনা কমিটির এক সভায় গণপূর্ত বিভাগের কর্মচারী আবুল কাশেম ও সবুর হোসেনকে বুধবার সকালের মধ্যে ‘গ্র্যান্ড মাদার হাউস’ ছেড়ে যেতে বলা হয়। সে মোতাবেক আবুল কাশেম ও তার স্ত্রী শামিম আরা শিল্পী ব্যক্তিগত মালামাল নিয়ে সন্ধ্যার মধ্যে গ্র্যান্ড মাদার হাউস ছেড়ে যান।  

অনিন্দ্য জানান, বুধবার রাত ৯টার দিকে হটাৎ আবুল কাশেম ও তাঁর স্ত্রী আবার সেখানে ফিরে আসেন। এর পরপরই সাংসদ শফিকুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোর্তুজা আলী বাবলু সেখানে আসেন।

মালামাল সরানোর তদারক করতে আগে থেকেই সেখানে অনিন্দ্য মন্ডল ও তার কার্যালয়ের নাজির আব্দুল কুদ্দুস অবস্থান করছিলেন বলে অনিন্দ্য জানান।

সাংসদ এসে নাজিরকে আবুল কাশেমের বাসায় তালা না লাগানোর নির্দেশ দেন। এনডিসি ও নাজির তাতে সম্মত না হলে সাংসদ ও আওয়ামী লীগ নেতা বাবলু তাদের সঙ্গে রাগারাগি করেন বলে অনিন্দ্য বলেন।  

অনিন্দ্য বলেন, এক পর্যায়ে তিনি জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুনকে ফোন করে ঘটনা খুলে বলেন এবং আবুল কাশেমকে আরও সাতদিন ওই বাসায় থাকার সুযোগ দিয়ে সেখান থেকে চলে যান।

বৃহস্পতিবার গ্র্যান্ড মাদার হাউসে গিয়ে আবুল কাশেমকে সেখানে দেখা গেছে।  

এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় কয়েকজন বলেন, কর্মচারী সবুর হোসেন ও আবুল কাশেমকে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে গ্র্যান্ড হাইস ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তারা ছেড়েও গেছেন। আবার কী কারণে আবুল কাশেমকে সেখানে তুলে দেওয়া হলো তা সবার জানা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, আবুল কাশেমের স্ত্রী শামিম আরা শিল্পী নাটোর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তার অনুরোধে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।

একাত্তর পরিষদ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সভাপতি কথাসাহিত্যিক জাকির তালুকদার বলেন, একজন সাংসদ একজন নানা অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তির পক্ষে অবস্থান নিয়ে আইন বিরোধী, রাষ্ট্রের স্বার্থবিরোধী কাজ করতে পারেন না।

“আবুল কাশেমকে তিনি গ্র্যান্ড মাদার হাউসে তুলে দিয়ে এ ধরনের কাজ করাতে তিনি লজ্জিত হয়েছেন কি না জানি না, তবে আমি ও আমরা নাটোরবাসী লজ্জিত হয়েছি।”

এ ব্যাপারে আবুল কাশেমের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি। বাসায় গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।

উত্তরা গণভবন ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব অনিন্দ্য মন্ডল বুধবার রাতে গণমাধ্যমকে বলেন, সাংসদের অনুরোধে মানবিক কারণে আবুল কাশেমকে গ্র্যান্ড মাদার হাউসে আরও সাত দিনের জন্য থাকতে দেওয়া হয়েছে।

সাংসদ শফিকুল ইসলাম বলেন, আবুল কাশেম ২৭ বছর ধরে গ্র্যান্ড মাদার হাউসে ছিলেন। তাকে হটাৎ করে সেখান থেকে উচ্ছেদ করা উচিত না। তাই তাকে সাতদিন সময় দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, “কাশেম সাহেবের থাকার ব্যাপারটার চেয়েও বড় ব্যাপার এখন পর্যন্ত গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশীর বিরুদ্ধে মামলা না হওয়া। জেলা প্রশাসক বাইরে আছেন। আমি তাকে বলে দিয়েছি নির্বাহী প্রকৌশলীকে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য।”

শতবর্ষী গাছগুলো কাটার ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে।