উত্তরা গণভবনের গাছ কর্তন: তদন্তে কমিটি, মামলা হয়নি  

নাটোরে উত্তরা গণভবনের শতবর্ষী গাছ কাটার ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন।   

নাটোর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Oct 2017, 04:49 PM
Updated : 18 Oct 2017, 04:49 PM

এছাড়া জেলা প্রশাসন মামলা করার সিদ্ধান্ত নিলেও এখনও করা হয়নি।

মঙ্গলবার গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাজ্জাকুল ইসলাম। অপর সদস্যরা হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খাইরুল ইসলাম, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন আক্তার বানু, সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) শামিম ভুঁইয়া, নেজারত ডেপুটি কালেকক্টর (এনডিসি) অনিন্দ্য মণ্ডল

কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

এনডিসি অনিন্দ্য বলেন, মঙ্গলবার গণভবন ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে কমিটি প্রতিবেদন দাখিলে পর জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

“গণভবন ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে জড়িত গণপূর্তের দুই কর্মকর্তাসহ চার জনের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অনুমতি চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। অনুমতি পেলেই মামলা দায়ের করা হবে।”

উত্তরা গণভবনের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অনিন্দ্য মন্ডল বলেন, এ ঘটনায় দিঘাপতিয়া ইউনিয়নের তহশিলদার আব্দুল মান্নান বাদী হয়ে মামলা দায়ের করবেন।

মামলায় আসামিদের মধ্যে গণপূর্ত বিভাগ নাটোর কার্যালয়ের কিছু কর্মচারীকে আসামি করা হবে বলে জানালেও তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম বলেননি তিনি।  

বুধবার সন্ধ্যায় অনিন্দ্য জানান, সম্প্রতি উত্তরা গণভবনের ভেতরের কিছু মরা গাছ ও ডালপালা বিক্রির জন্য নিলাম বিজ্ঞপ্তি দেয় গণপূর্ত বিভাগ। রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ায় গণপূর্ত বিভাগ বন বিভাগের কর্মকর্তাদের দিয়ে গাছগুলি শনাক্ত করে মূল্য নির্ধারণ করে।

“কিন্তু ঠিকাদার নির্ধারিত গাছের বাইরেও বেশ কিছু শতবর্ষী তাজা আমগাছ কেটে বাইরে নিয়ে যাচ্ছিল। জেলা প্রশাসন বিষয়টি জানার পর গাছকাটা বন্ধ করে দেয়।”

অনিন্দ্য বলেন, ঘটনাটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে মঙ্গলবার সকালে গণপূর্ত বিভাগের রাজশাহী অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জিল্লুর রহমান গণভবনে আসেন এবং অভিযোগটি তদন্ত করে সত্যতা পান।

জিল্লুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, নিলাম করা গাছের মূল্য মাত্র ১৫ হাজার টাকা। অথচ কাটা গাছের যে অংশ গণভবনের আঙিনায় পড়ে আছে তার মূল্য আনুমানিক ১৫ লাখ টাকা।

“সবার উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর অস্থায়ী আবাসস্থলের আঙিনার গাছ কাটার এ ঘটনা সবাইকে বিস্মিত করেছে।”  

তিনি এ ব্যাপারে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

জেলা প্রশাসকের সভায় গণপূর্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ

এ ঘটনায় মঙ্গলবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি সভা হয়।

অনিন্দ্য বলেন, সভায় গণপূর্ত বিভাগ ও বনবিভাগের দায়িত্বহীনতার অভিযোগ ওঠে এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত হয়।

“মামলার বাদী হিসাবে বন বিভাগের সদর উপজেলা বনকর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।”

সভায় নাটোর-২ (সদর) আসনের সাংসদ শফিকুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহম্মদ মশিউর রহমান, এনডিসি অনিন্দ্য মন্ডল ও সদর উপজেলা বন কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে, বুধবার দুপুরের নাটোর শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে উত্তরা গণভবনের শতবর্ষী গাছ কাটার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে একাত্তর পরিষদ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

মানববন্ধন থেকে গাছ কাটার সঙ্গে জড়িত গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট সবার শাস্তি দাবি করা হয়।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে সংগঠনটির সভাপতি ও একুশে পদকপ্রাপ্ত কথা সাহিত্যিক জাকির তালুকদার বক্তব্য রাখেন।