টাঙ্গাইলের ‘জঙ্গি আস্তানায়’ ড্রোন, দুই ভাই আটক

টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলায় এক বাড়ি ঘিরে প্রায় সাড়ে সাত ঘণ্টা অভিযানের পর জেএমবির সন্দেহভাজন জঙ্গি দুই ভাইকে আটক করেছে র‌্যাব।

টাঙ্গাইল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Sept 2017, 03:19 AM
Updated : 5 Sept 2017, 05:11 AM

এলেঙ্গার মসিন্দা এলাকার ওই বাড়ি থেকে একটি ড্রোন ও বেশ কিছু দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে বলে র‌্যাব-১২ এর অধিনায়ক সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর জানিয়েছেন।

এদিকে এলেঙ্গায় অভিযানের সূত্র ধরে ঢাকার মিরপুর মাজার রোডের একটি বাড়ি রাত থেকে ঘিরে রেখেছেন র‌্যাব সদস্যরা। ওই বাড়ি থেকে র‌্যাবের দিকে বোমাও ছোড়া হয়েছে।

র‌্যাব-১২ এর কোম্পানি কমান্ডার বীণা রানী দাস জানান, এলেঙ্গার মসিন্দা এলাকার সৈয়দ আবুল হোসেন চিশতির বাড়িতে জঙ্গিদের অবস্থানের খবর পেয়ে র‌্যাবের একটি দল সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে সেখানে নজর রাখা শুরু করে। ভেতরে জঙ্গি থাকার বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে রাত ১২টার দিকে ঘিরে ফেলা হয় ওই বাড়ি।

পরে গভীর রাতে বাড়ির মালিক চিশতির দুই ছেলে নুরুল হুদা মাছুম (৩০) ও মাজহারুল ইসলাম খোকনকে (২৫) আটক করা হয় এবং টিনশেড ওই বাড়ির ভেতরে তল্লাশি চালিয়ে একটি ড্রোন এবং চায়নিজ কুড়াল, ছুরি, চাপাতিসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র পাওয়া যায়।

সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ঘটনাস্থলে প্রেস ব্রিফিং করে অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করেন র‌্যাব-১২ অধিনায়ক জাহাঙ্গীর।

তিনি বলেন, ওই বাড়িতে বিস্ফোরক থাকতে পারে বলে খবর পেয়েছিলেন তারা। ভেতরে বোমা পাওয়া না গেলেও বোমা তৈরির সরঞ্জাম পাওয়া গেছে।

“আটকদের মধ্যে মাসুম একটি মাদ্রাসায় নবম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। তিনি অনেকদিন ধরেই জেএমবির সঙ্গে জড়িত এবং সক্রিয় সদস্য।

“আর তার ছোট ভাই খোকন বিদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ত। তবে তা শেষ না করেই ২০১২ সালে চলে আসে। সে ভাইকে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিত।”

এই র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, জঙ্গি দুই ভাই মিলেই একটি ড্রোন ‘প্রায়’ তৈরি করে ফেলেছিল।

“জিজ্ঞাসাবাদে তারা বলেছে, এই ড্রোন দিয়ে নাশকতা করার পরিকল্পনা ছিল তাদের। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ছিল তাদের টার্গেট।”

জাহাঙ্গীর বলেন, আটক দুই ভাইয়ের মধ্যে মাসুম ‘উঁচু পর্যায়ের সক্রিয়’ জঙ্গি সদস্য। তার সাংগঠনিক নাম কুফরা জামানা। তবে ওই পরিবারের আর কারও জঙ্গিবাদে জড়িত থাকার তথ্য আপাতত র‌্যাবের কাছে নেই।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আবুল হোসেন চিশতির ছেলে মাসুম বাড়ির কাছে মসিন্দা বাজারে একটি ফার্মেসি ও স্টেশনারি দোকান চালাতেন। আর খোকন টাঙ্গাইল শহরের ভিক্টোরিয়া রোডে ক্যাপসুল মার্কেটে কম্পিউটারের ব্যবসা করতেন।

রাজশাহী, খুলনা ও ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করা খোকন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য প্রায় নয় বছর মালয়েশিয়ায় ছিলেন। বছর তিনেক আগে তিনি দেশে ফিরে এলাকায় থাকতে শুরু করেন।

এক প্রতিবেশী জানান, চিশতি পরিবারের আদি বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ এলাকায়। প্রায় দুই যুগ আগে তারা এলেঙ্গার মসিন্দায় বসবাস শুরু করেন। প্রতিবছর ২৪ অক্টোবর ওই বাড়িতে ওরস হত।

বাড়ির মালিক সৈয়দ আবুল হোসেন চিশতি আড়াই বছর আগে মারা গেলেও তার আরেক ছেলে তাপস নিয়মিত ওরস পরিচালনা করে আসছিলেন বলে জানান ওই প্রতিবেশী।