দেবীগঞ্জে পুরোহিত হত্যায় সময় লেগেছে ৫-৭ মিনিট

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার সোনাপোতা গ্রামে সন্তগৌরীয় মঠের অধ্যক্ষকে হত্যায় পাঁচ থেকে সাত মিনিট সময় লেগেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে।

সাইফুল আলম বাবু পঞ্চগড় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Feb 2016, 02:11 PM
Updated : 21 Feb 2016, 02:18 PM

রোববার সকালে যজ্ঞেশ্বর রায়কে (৫০) গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ওই সময় চিৎকার শুনে সেখানে যাওয়ার পর আরও দুজন হামলার শিকার হলেও প্রাণে বেঁচে যান।

তাদের মধ্যে গোপাল রায়কে (৩৫) রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং নির্মল চন্দ্র বর্ম্মণকে (৩৫) দেবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

গত বছরের অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বরে দেশের বেশ কয়েকটি স্থানে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির উপর হামলার পর অল্প বিরতিতে আবার এ ঘটনা ঘটল।

এ ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার দেবীগঞ্জ সদরে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভার কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে বলে জানান উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান পরিমল দে সরকার।

দেবীগঞ্জ থানার ওসি বাবুল আকতার জানান, মহারাজ যজ্ঞেশ্বর রায় (৫০) গৃহত্যাগী হয়ে ওই এলাকায় অবস্থিত শ্রী শ্রী সন্তগৌড়ীয় মঠের ধর্মগুরুর দায়িত্বে ছিলেন। ভক্তরা তাকে মহারাজ বা প্রভু বলে সম্বোধন করতেন।

ময়নাতদন্ত শেষে বিকাল পৌনে ৫টার দিকে করতোয়া নদীর শ্মশানঘাটে তার মৃতদেহ দাহ করা হয় বলে বলে জানান ওসি।

প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে ওসি জানান, সকালে পুরোহিত যগেশ্বর রায় মঠের লাগোয়া বাড়িতে পূজার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ সময় একটি মোটরসাইকেলে আসা তিন দুস্কৃতকারী মঠের সামনের সড়কে নেমে দুইজন ভিতরে ঢোকে।

“তাদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র ছিল। এদের একজন সরাসরি পুরোহিতের কাছে গিয়ে তাকে লাথি মেরে মাটিতে ফেলে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করে।”

ওই গোপাল চন্দ্র রায় ঘটনাস্থলে এসে পড়লে দুর্বৃত্তরা তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। গোপালের হাত ও পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়।

ওসি বলেন, গোপালের চিৎকারে মঠের আরেক ঘরে ঘুমিয়ে থাকা নির্মল চন্দ্র বাইরের বেরিয়ে আসেন। এ সময় এক হামলাকারী তার দিকে পিস্তল তাক করে। পরে তিনি ঘরের আরেক দরজা দিয়ে পাশের বাজারে পালিয়ে যান।

“দুর্বৃত্তরা ৫/৭ মিনিটের মধ্যে ঘটনা ঘটিয়ে মোটরসাইকেলে করে চলে যায়।

“ঘটনাস্থল থেকে একটি অবিস্ফোরিত বোমা, একটি গুলির খোসা ও একটি অব্যবহৃত গুলি (কার্তুজ) জব্দ করা হয়েছে।”

পরিবারের পক্ষে একটি মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। তবে কাউকে আটক করা হয়নি বলে জানান ওসি।

দেবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন নির্মল চন্দ্র বর্ম্মণ বলেন, “আমি চিৎকার শুনে ঘুমের ঘোরে দরজা দিয়ে বাইরে আসতে থাকি। দরজা খোলার শব্দে মন্দিরের সিঁড়ি দিয়ে পিস্তল হাতে উঠতে থাকা একজন নিচে আমার দিকে এগিয়ে আসে। পরে আমি কৌশলে আরেক দরজা দিয়ে পালিয়ে বাজারে আশ্রয় নিই।

“এর ফাঁকে দেখি একজন গুরুকে চাপাতি দিয়ে কোপাচ্ছে।”

দুর্বৃত্তদের মোটরসাইকেলে যেতে দেখেছেন স্থানীয় সৎ রায় (২১)।

তিনি বলেন, লোকজনের চিৎকার ও বিস্ফোরণের শব্দ শুনে আমি এগিয়ে যাই। দেখি একজন সড়কের উপর মোটরসাইকেলে বসে আছে। দুজন দ্রুত এসে তাতে বসল।”

মুহূর্তের মধ্যেই তারা পঞ্চগড়-বোদা সড়কের দিকে চলে যায় বলে জানান সৎ রায়।

পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার গিয়াস উদ্দিন আহাম্মেদ বলেন, জেলার সকল হিন্দু ধর্মশালায় নিরাপত্ত্বা জোড়দার ছিল। কারা হত্যাকারী এবং কী কারণে এমন হলো তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

তদন্তের মাধ্যমে দুস্কৃতকারীদের খুঁজে বের করা হবে এবং যত দ্রুত সম্ভব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান এসপি গিয়াস।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন বলেন, পঞ্চগড় শান্তিপ্রিয় জেলা। এখানে এমন ঘটনা এটাই প্রথম। এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড এবং নাশকতা চেষ্টা। দুস্কৃতকারীরা শান্তিপুর্ণ পরিবেশকে অস্থিতিশীল করতেই এই হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

গত বছরের ২৩ অক্টোবর পুরান ঢাকার হোসাইনী দালানে আশুরার তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির মধ্যে বোমা হামলায় দুইজন নিহত ও শতাধিক মানুষ আহত হন।

একমাস পর ২৬ নভেম্বর সন্ধ্যায় বগুড়ার শিবগঞ্জে শিয়া মুসলমানদের একটি মসজিদে ঢুকে নামাজরতদের উপর গুলি চালানো হলে মুয়াজ্জিন নিহত এবং তিনজন আহত হন।

১০ ডিসেম্বর রাতে দিনাজপুরে কাহারোল উপজেলার জয়নন্দ গ্রামে ইসকন মন্দিরে ধর্মসভা চলাকালে গুলি ও বোমা বিস্ফোরণে দুইজন আহত হন।

২৫ ডিসেম্বর ঈদ-ই-মিলাদুন্নবীর দিন রাজশাহীর বাগমারায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের একটি মসজিদে জুমার নামাজের সময় আত্মঘাতী বোমা হামলায় একজন নিহত হয়েছেন।