১৬ হেক্টর জমিতে ১২ হাজার লেবু গাছ, কোটি টাকা ব্যবসা সামাউলের

একই জাতের আরও অন্তত ১০টি বাণিজ্যিক বাগান গড়ে উঠেছে; তারাও ভাল করছেন।  

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 March 2023, 06:01 AM
Updated : 27 March 2023, 06:01 AM

আগে কলা, পেয়ারা, মাল্টা, কুল চাষ করে সাফল্য পেয়েছিলেন; এবার লেবুতে বাজিমাত করেছেন গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার কদমপুর গ্রামের কৃষক মো. সামাউল ইসলাম।

১৬ হেক্টর জমির বাগানে প্রায় ১২ হাজার লেবু গাছ আছে। এগুলো বারি লেবু-৪ জাতের। সুগন্ধি ও সারা বছর ফলন ধরে। প্রতিটি গাছ থেকে গড়ে ৫০০ লেবু পান সামাউল।

সামাউল জানালেন, ফাল্গুন, চৈত্র ও বৈশাখ মাসে লেবুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। রমজানে সপ্তাহে পাঁচদিন তিনি লেবু তোলেন। তখন প্রতিদিন আট থেকে ১০ হাজার লেবু বিক্রি করেন।

আকার ভেদে প্রতিটি লেবু ছয় থেকে আট টাকা দরে পাইকারি বিক্রি করেন। এ মাসে যেহেতু লেবুর চাহিদা বেশি গড়ে ১৫ লাখ টাকার লেবু বিক্রি হবে বলে আশা করছেন তিনি। 

জমি লিজ নিয়ে বাগান করেছেন সামাউল। তার লেবু বাগানের বয়স তিন বছর। প্রথম বছর থেকেই তিনি ফলন পাচ্ছেন। এখন সেই ব্যবসা কোটি টাকার ঘরে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। 

পাইকাররা বাগানে এসে লেবু কিনে ঢাকা, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি করেন। সামাউলের দেখাদেখি এলাকা ও আশপাশের উপজেলায় একই জাতের আরও অন্তত ১০টি বাণিজ্যিক বাগান গড়ে উঠেছে। তারাও ভাল করছেন।   

সামাউল বলছিলেন, “আমার বাগানের লেবুর ফ্লেভার ভাল। লেবুতে বিচি নেই। এ ছাড়া প্রচুর রস আছে। লেবুটি সালাদ ও শরবতে বেশি ব্যবহৃত হয়। এই কারণে বাজারে এই লেবুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।“

গোপালগঞ্জ কৃষি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এম এম কামরুজ্জামান বলেন, “সামাউল তিন বছর আগে আমাদের উৎসাহে সিডলেস বারমাসী বারি লেবু-৪ চাষ শুরু করেন। আমরা তাকে চারা, সার, ছত্রাকনাশক প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছি। তিনি সফল চাষি।”

গোপালগঞ্জ কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এইচ এম খায়রুল বাশার বলেন, এই জাতের একটি গাছ ৩৬৫ দিনে ৫০০-৬০০ লেবু দিতে সক্ষম। প্রতিদিন গড়ে একটি গাছ থেকে দুটি লেবু সংগ্রহ করা যায়।

“লেবুটি সুগন্ধযুক্ত; তাই শরবত ও সালাদে এটি সবচেয়ে বেশি সমাদৃত। সারাদেশে বারমাসী এই লেবুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ কারণে গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুর অঞ্চলে লাভজনক এই লেবুর চাষ দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে।”

কদমপুর গ্রামের কৃষক মো. ওবায়দুর রহমান (৫২) বলেন, সামাউল একজন সফল কৃষক। তিনি ১৫ বছর আগে যশোর থেকে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে আসেন। লেবুতে তিনি বাজিমাত করেছেন।

“সামাউল একই জমিতে বারবার এক জাতীয় ফসল আবাদ করেন না। তাকে আমাদের এলাকার অনেক কৃষক অনুকরণ করে লাভবান হচ্ছেন।”

ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা সদর বাজারের আড়তদার টুটুল বলেন, “সামাউলের লেবুর সাইজ বড়, রস বেশি ও সুগন্ধি। এই কারণে তার লেবু একটু বেশি দামে বিক্রি করা যায়। বাজারে চাহিদাও বেশি। আমি তার লেবু বিভিন্ন জেলায় চালান করি।”