“কারাগারে লাশ পাঠানোর ঘটনা সম্পূর্ণ আইনবিরোধী ও অমানবিক”, বলেন অবসরপ্রাপ্ত এক জেল সুপার।
Published : 30 Dec 2024, 11:27 PM
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার বুরুদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের কারাবন্দি চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা রুবেলের বাবা মারা গেলেও প্যারোলে মুক্তি মেলেনি।
সোমবার দুপুরে রুবেলকে শেষবারের মতো দেখাতে কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারে তার বাবার লাশ জেল গেইটে নেওয়া হয়। লাশ কারাগারে নেওয়ার ঘটনাকে নজিরবিহীন বলছেন অনেকেই।
রোববার রাতে রুবেলের বাবা মো. জিয়াউদ্দিন হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে মারা যান। টানা দু্ই মেয়াদে রুবেল চেয়ারম্যান থাকলেও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।
কিশোরগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি শহীদুল আলম শহীদ বলেন, “মানবিক কারণে জামিনে বা প্যারোলে মুক্তি পাওয়াটা একজন বিচারাধীন আসামির নৈতিক অধিকার। আমার দীর্ঘ ৪০ বছরের আইন পেশার অভিজ্ঞতায় কারাগারে লাশ পাঠানোর কথা কখনও শুনি নাই। এটা আইন সম্মত নয়।”
আসামিপক্ষের আইনজীবী ও স্বজনরা জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় মিছিলে হামলার ঘটনায় করা মামলাসহ তিন মামলায় ৩ নভেম্বর থেকে কারাগারে আটক আছেন রুবেল। রোববার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা যান তারা বাবা জিয়াউদ্দিন।
সোমবার বিকালে গ্রামের বাড়ি পাকুন্দিয়ার পুটিয়াতে বাবার জানাজায় অংশ নেওয়ার জন্য কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবর রুবেলের প্যারোলে মুক্তির আবেদন করেন তার আইনজীবী সুজিত কুমার দে।
পরে জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিজাবে রহমতকে নির্দেশ দেন। তবে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্যারোলে মুক্তির আবেদন না মঞ্জুর করে বাবার লাশ কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
স্বজনরা জানান, দুপুর ১২টার দিকে মরদেহবাহী অ্যাম্বুল্যান্স কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। মরদেহের সঙ্গে রুবেলের মা নূরজাহান বেগম ও অন্য স্বজনরাও সেখানে যান। তবে সব স্বজনকে রুবেলের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অ্যাম্বুল্যান্সটি কারাগারের ভেতরে নিয়ে যায় কারা কর্তৃপক্ষ। সেখানে বাবার মৃতদেহ শেষবারের মত দেখেন রুবেল। এরপর মা নূরজাহান বেগমকে ছেলের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয় কয়েক মিনিটের জন্য।
মা নূরজাহান বেগম বলেন, অনেক চেষ্টা করেও কিছুক্ষণের জন্য ছেলের মুক্তির ব্যবস্থা করা যায়নি। তাই জেলেই বাবার লাশ নিয়ে যাই ছেলেকে একনজর দেখানোর জন্য।
রুবেলের আইনজীবী সুজিত কুমার দে বলেন, “আমার পেশাগত জীবনে কারাগারে লাশ পাঠানোর ঘটনা আগে দেখি নাই।”
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিজাবে রহমত বলেন, “আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কায় রুবেলকে প্যারোলে মুক্তি না দিয়ে জেল গেইটে লাশ দেখানোর ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেওয়া হয়।”
অবসরপ্রাপ্ত জেল সুপার জাহাঙ্গির হোসেন বলেন, “প্রয়োজনে আসামিকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে পর্যাপ্ত পুলিশ পাহারায় জানাজায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া প্রশাসনের দায়িত্ব।
“কারাগারে লাশ পাঠানোর ঘটনা সম্পূর্ণ আইনবিরোধী ও অমানবিক। আমার চাকরি জীবনে এমন ঘটনা দেখিনি।”
কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারের জেল সুপার রীতেশ চাকমা বলেন, জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয় থেকে পাঠানো চিঠি অনুযায়ী কারাগারের গেইটে লাশ দেখানোর সুযোগ করে দেওয়া হয়। তবে এ ধরনের অভিজ্ঞতা এটাই প্রথম তার।