শ্রীপুর উপজেলায় এইচ ডি এফ অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা এই বিক্ষোভ করেন।
Published : 14 Nov 2024, 07:56 PM
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় এইচ ডি এফ অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের নোটিশ দেখে শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন।
বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের জৈনাবাজার কলেজ রোড এলাকায় জৈনাবাজার-কাওরাইদ আঞ্চলিক সড়কে কারখানার সামনে শ্রমিকরা অবস্থান নিয়ে দুই ঘণ্টা বিক্ষোভকালে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে যাত্রীরা দুর্ভোগের শিকার হন।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের পরিদর্শক আব্দুল লতিফ বলেন, “শ্রমিকরা সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখে। পরে শিল্প ও থানা পুলিশ এসে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে বেতনের আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা সাড়ে ১০টার দিকে সড়ক ছেড়ে চলে যান।”
কারখানার ফিনিশিং সেকশনের অপারেটর তাসলিমা বেগম ও রোজিনা বেগম বলেন, প্রায় ৪০০ শ্রমিক এ কারখানায় কাজ করেন। সকালে তারা কাজ করতে এসে দেখতে পান গেইটে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধের নোটিশ টানিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কোনো পূর্ব নোটিশ না দিয়ে কর্তৃপক্ষ অক্টোবর এবং চলতি মাসের ১৫ দিনের বেতন না দিয়ে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে।
কারখানার নিটিং সেকশনের শ্রমিক কোকিলা অভিযোগ করে বলেন, তাদের ন্যায্য পাওনা নাইট বিল, টিফিন বিল, ইনসেনটিভ বোনাস, উৎপাদন বোনাসসহ কোনো সুযোগ-সুবিধা কারখানা থেকে দেওয়া হয় না।
একই সেকশনের শ্রমিক নাসরিন আক্তার বলেন, “বর্তমান সময়ে আশপাশের কারখানাগুলোতে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা হাজিরা বোনাস দিচ্ছে। এই কারখানায় ৫০০ টাকা হাজিরা বোনাস দেয়। প্রতি মাসে সপ্তম কর্মদিবসে বেতন দেওয়ার কথা থাকলেও গত তিন বছর যাবত ১৫ তারিখের পর বেতন দেয়।”
সুইং সেকশনের শ্রমিক সানোয়ার হোসেন বলেন, “আমাদের দোকান বাকি, বাড়িভাড়া বাকি, ছেলেমেয়েদের স্কুল-কলেজের বার্ষিক পরীক্ষার বেতন দিতে হবে। দেড় মাসের বেতন না দিয়ে কারখানা হঠাৎ করে বন্ধ ঘোষণা করায় আমরা দোকানের বাকি এবং বাসাভাড়া দিতে পারছি না।”
এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে এইচ ডি এফ অ্যাপারেলস লিমিটেডের প্রশাসনিক ব্যবস্থাপক (অ্যাডমিন ম্যানেজার) শিপু চৌধুরী বলেন, “শ্রমিকদের এক মাসের বেতন বকেয়া আছে। প্রায় চার মাস যাবত কারখানায় কোনো অর্ডার নেই। আমরা সাব-কন্ট্রাকের অর্ডার এনে কাজ করাচ্ছিলাম।
“শ্রমিকদের বলেছি, ১৮ থেকে ২০ নভেম্বরের মধ্যে তাদের বেতন দিয়ে দেওয়া হবে। শ্রমিকেরা কর্তৃপক্ষের বৈধ নির্দেশ অমান্য করে অযৈাক্তিক দাবি তুলে কারখানার কাজ বন্ধ করে। তাদেরকে কাজে যোগ দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষ অনুরোধ করলেও তারা নিজ নিজ কাজ বন্ধ রাখে এবং অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে। যা বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ মোতাবেক অবৈধ ধর্মঘটের শামিল।”
শিপু চৌধুরী বলেন, “অলস সময় বসে থেকে শ্রমিকরা কারখানার জেনারেটর বিল, বিদ্যুৎ বিল এবং ডিজেল খরচ করেছে। সার্বিক দিক বিবেচনা করে হেড অফিস থেকে কর্মকর্তারা এসে বুধবার রাতে সাব-কন্ট্রাক্টের মালগুলো ফেরত দিয়ে কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে নোটিশ টানিয়ে দেয়।”
নোটিশে বলা হয়েছে, “বতর্মানে উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় শ্রমিক ও প্রতিষ্ঠানের সার্বিক নিরাপত্তায় বাধা হওয়ায় বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ১৩ (১) ধারা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার থেকে কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হল।”
এতে আরও বলা হয়, পরবর্তীতে কাজের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হলে কারখানা খোলার তারিখ নোটিশের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের পরিদর্শক আব্দুল লতিফ বলেন, “অক্টোবর মাসের বকেয়া বেতন ২৫ নভেম্বর পরিশোধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। নভেম্বর মাসের ১৫ দিনের বেতন ওইদিন শ্রমিকদের জানিয়ে দেওয়া হবে।”