খাগড়াছড়িতে বিনামূল্যের সোলার প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ, বিতরণ বন্ধ

অভিযোগের কোনো নিষ্পত্তি না করলেও নতুন তালিকা করার নির্দেশ দিয়েছে বোর্ড। ফলে আবারও অনিয়মের শঙ্কা করছেন উপকারভোগীরা।

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 May 2023, 10:46 AM
Updated : 3 May 2023, 10:46 AM

খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পে সোলার প্যানেল বিনামূল্যে দেওয়ার কথা থাকলেও অর্থ আদায়ের অভিযোগ ওঠায় সেগুলো বিতরণ স্থগিত রেখেছে উন্নয়ন বোর্ড।

তবে এর মধ্যেই মানিকছড়ির বাটনাতলী ইউনিয়নে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে একটি চক্র অন্তত ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সেই অভিযোগের কোনো নিষ্পত্তি না করলেও নতুন তালিকা করার নির্দেশ দিয়েছে বোর্ড। ফলে আবারও অনিয়মের শঙ্কা করছেন উপকারভোগীরা।

জানা যায়, ‘সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রকল্প (দ্বিতীয় পর্যায়)’-এর আওতায় বাটনাতলী ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডে ৬৪টি, ২ নম্বর ওয়ার্ডে ১৩৯টি, ৩ নম্বর ওয়ার্ডে ১৬৯টি, ৭ নম্বর ওয়ার্ডে ২৮৩টি, ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ২৪৫টি, ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ৫৪টি সোলার প্যানেল পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড থেকে বরাদ্দ পায়।

গত ২১ মার্চ সোলার বিতরণের জন্য মানিকছড়ির ছদুরখীল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে আসেন উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা।

কিন্তু নাম তালিকাভুক্তির জন্য উপকারভোগীদের কাছ থেকে দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করার বিষয়টি জানার পর তিনি বিতরণ কার্যক্রম স্থগিত করে চলে যান। নির্দেশ দেন নতুন করে তালিকা প্রণয়নের।

পরে সোলার প্যানেলগুলি বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে তালাবদ্ধ অবস্থায় রাখা হয়েছে।

দুর্গম এলাকায় অবস্থানের কারণে এতদিন বিষয়টি জানা যায়নি, সম্প্রতি সরেজমিনে ছদুরখীলে গেলে স্থানীয় বাসিন্দা বজলু মিঞা বলেন, “তালিকায় নাম দেওয়ার জন্য আমার বড় ছেলে সোলারের জন্য ছয় হাজার টাকা দিয়েছে, ছোট ছেলে ১ হাজার টাকা দিয়েছে আর আমি দিয়েছি ৮০০ টাকা।”

টাকা দিয়েও সোলার প্যানেল না পাওয়ায় নতুন তালিকায় তাদের নাম থাকবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কার কথা জানান তিনি।

সেদিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা বাটনাতলী ইউনিয়ন পরিষদের নারী ইউপি সদস্য বিলকিস আক্তার বলেন, “সোলার বিতরণের জন্য উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান আসলেও অনিয়মের বিষয়টি জানতে পেরে তিনি সোলার বিতরণ না করে চলে যান। ”

উপকারভোগীদের অভিযোগ, সোলার প্যানেল বিতরণের জন্য তালিকা প্রস্তুত করেছেন বাটনাতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যরা। সে সময় অফিস খরচের নামে সোলার প্যানেল নিতে ইচ্ছুকদের কাছ থেকে দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মানিক ত্রিপুরাসহ একাধিক ইউপি সদস্য এর সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ উপকারভোগীদের।  

৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য অংগ জাই মারমা জানান, “দুর্গম এলাকায় সোলারে মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহের উদ্যোগ নেয় উন্নয়ন বোর্ড। কিন্ত পরিষদের মেম্বারদের দুর্নীতির কারণে সোলার বিতরণ কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়। সোলার দেওয়ার কথা বলে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করেছে অনেকে।”

নিজেদের নাম তালিকাভুক্তির বিনিময়ে ইউপি সদস্য মানিক ত্রিপুরাকে টাকা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন ছদুরখীলের বাসিন্দা মো. আমির আলী, তানিমং মারমা, অংশেপ্রু মারমা ও পাইতু মারমা।

তারা জানান, সোলার প্যানেল দেওয়ার কথা বলে তাদের কাছ থেকে তিন হাজার টাকা করে আদায় করা হয়েছে।

তবে ঘটনার সাথে নিজের সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি সদস্য মানিক ত্রিপুরা বলেন, “আমার বিরুদ্ধে অর্থ আদায়ের অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট।”

বাটনাতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রহিম বলেন, “উন্নয়ন বোর্ডের সোলার বিতরণ প্রকল্পে যে অনিয়ম হয়েছে সেটার সাথে আমি এবং ইউপি সদস্যরা জড়িত না।”

মানিকছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন বলেন, “সোলার বিতরণে অনিয়ম হওয়ার কারণে নতুন করে তালিকা করার জন্য উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নির্দেশ দিয়েছে।”

এই বিষয়ে জানতে উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা এবং প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদকে একাধিকবার কল ও খুদে বার্তা দেওয়ার পরও কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি।