বান্দরবানে ৮ হত্যাকাণ্ডের পর বাড়ি ছেড়েছে আরও প্রায় ৩০০ পাড়াবাসী

“ভয়ে আশপাশের কয়েকটি পাড়া হতে ৪৬৬ জন রুমা ও রোয়াংছড়ি সদর এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন”, বলেছেন ইউএনও।

বান্দরবান প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 April 2023, 03:43 PM
Updated : 9 April 2023, 03:43 PM

বান্দরবানের রোয়াংছড়ির খামতাং পাড়ায় দুটি সশস্ত্র সংগঠনের মধ্যে গোলাগুলিতে আটজন নিহতের পর ভয় আর আতঙ্কের মধ্যে রোববার আরও অন্তত ৩০০ পাড়াবাসী ভিটেমাটি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে চলে গেছে; যাদের অধিকাংশই বম সম্প্রদায়ের মানুষ।   

বৃহস্পতিবার রাতে হত্যাকাণ্ডের পর শুক্রবার আড়াইশর বেশি খিয়াং সম্প্রদায়ের মানুষ নিজেদের পাড়া ছেড়ে রোয়াংছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এবং রুমা উপজেলা সদরের বম কমিউনিটি সেন্টারে এসে আশ্রয় নিয়েছিল। তারা এখনও সেখানেই আছে।

রোববার বিকালে রোয়াংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. খোরশেদ আলম চৌধুরী (যিনি রুমা উপজেলারও অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন) সাংবাদিকদের বলেন, “খামতাং পাড়া এলাকায় গুলিবিদ্ধ আট মরদেহ উদ্ধার ঘটনায় ভয়ে আশপাশের কয়েকটি পাড়া হতে ৪৬৬ জন রুমা ও রোয়াংছড়ি সদর এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন।”

“এর মধ্যে ২০টি পরিবারের ৬৪ জন রুমা সদরের বম স্যোশাল কমিউনিটি সেন্টারে, ৪৯ পরিবারের ১৯২ জন রোয়াংছড়ি  সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে আগেই আশ্রয় নিয়েছিল।

রোববার পাইক্ষ্যং পাড়া হতে ৬২ পরিবারের ২১০ পাড়াবাসী রোয়াংছড়ি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যলয়ে আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানান ইউএনও।

তবে বিকালে রোয়াংছড়ি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া সামং থান বম নামে এক পাড়াবাসী সাংবাদিকদের কাছে বলেন, “এর বাইরে ৩১টি পরিবার উপজেলা ও জেলা সদরের বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।

“এ ছাড়া পাশের ক্যপ্লং পাড়ার ৩২টি পরিবারও নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বাড়ি রোয়াংছড়ি সদরে আসতেছে। তারা হয়তো রাতে রোয়াংছড়ি সদরে পৌঁছবে।”

এসব পরিবারে মোট কতজন আছেন তা জানাতে পারেননি সামং থান বম।

রোয়াংছড়িতে আশ্রয় নেওয়া মুন সাং বম (৩২) জানান, রোয়াংছড়ি সদর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পাইংক্ষ্যং পাড়া থেকে ৯২টি বম সম্প্রদায় এবং এক পরিবার মারমা সকাল ১১টায় রওনা দিয়ে হেঁটে ও গাড়িতে করে দুপুর ১২টায় রোয়াংছড়িতে পৌঁছেছে। তবে সবাই সরকারি আশ্রয় শিবিরে যাননি। 

পাইংক্ষ্যং পাড়ার কারবারি (পাড়াপ্রধান) পিটর বম বলেন, “পাড়ার ৬২ পরিবারের প্রথমে ২১০ জনের দল দুপুরে রোয়াংছড়ি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পৌঁছেছে। আরও পরিবার আসতেছে।”

একই তথ্য জানান রোয়াংছড়ি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া লাল মুন সাং বম (৩২)।

রোয়াংছড়ি সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেহ্লা অং মারমা বলেন, রোয়াংছড়ি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং রোয়াংছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে যারা আশ্রয় নিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি সবার সমন্বয়ে সার্বিক সহযোগিতায় তাদের জন্য খাবার, কাপড়সহ প্রয়োজনীয় সব কিছু ব্যবস্থা করা হয়েছে।

পাহাড়ে আঞ্চলিক দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক বিভেদ ও হানাহানির মধ্যে গত বছর অক্টোবর থেকে রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলায় সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ, যা স্থানীয়ভাবে ‘বম পার্টি’নামে পরিচিত) এবং নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার হিল ফিন্দাল শারক্বীয়া’র বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান চালাচ্ছে সেনাবাহিনী ও পুলিশের এলিট ফোর্স র‌্যাব। মাঝে মধ্যে তাদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনাও ঘটছে।

এর জের ধরে জানুয়ারির শেষে রুমা উপজেলার কয়েকটি পাড়া থেকে মারমা ও বম জাতিগোষ্ঠীর লোকজন গহীন পাহাড়ের বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে শহরে চলে আসেন।

সেসময় পাইন্দু ইউনিয়নের অন্তত ৫১টি মারমা ও ২০টি বম পরিবার সব কিছু ফেলে রুমা বাজারের মারমা ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের হল রুমে এবং বম কমিউনিটি সেন্টারে আশ্রয় নেয়। চার-পাঁচদিন পরে তারা আবার পাড়ায় ফিরে যায়।

মার্চের শুরুর দিকে স্থানীয় কারবারি, উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন জানায়, অভিযানের মধ্যে ‘আতঙ্কে’ বান্দরবানের রুমা থানা ও আশপাশের এলাকা থেকে ৩০০ থেকে ৪০০ মানুষ ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেয়। অন্তত ছয়টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সে সময় বন্ধ হয়ে যায়। বাড়িছাড়া হওয়ায় অনেকে জুম চাষের ক্ষতির কথাও বলেছিলেন; যা পাহাড়ি মানুষদের সারা বছরের খাবারের সংস্থানের উপায়।