ভিসা পাওয়া ‘৬০ শতাংশ’ বাংলাদেশি ভারত গেছে বেনাপোল দিয়ে

বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে কলকাতার দূরত্ব কম এবং যোগাযোগ সহজ হওয়ায় এ পথে দুই দেশের পর্যটক যাতায়াতের হার বেশি।

আসাদুজ্জামান আসাদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Jan 2023, 01:35 PM
Updated : 15 Jan 2023, 01:35 PM

গত বছর ভারতের ভিসা পাওয়া ‘৬০ শতাংশ’ বাংলাদেশি বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারত গেছে বলে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে কলকাতার দূরত্ব ৮৫ কিলোমিটার। যোগাযোগ ব্যবস্থাও সহজ হওয়ায় এ পথে দুই দেশের পর্যটক যাতায়াতের হার বেশি।

প্রতি বছর কয়েক লাখ বাংলাদেশি ভিসা নিয়ে ভারতে যায়। আত্বীয়-স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে, দর্শনীয় স্থান ঘুরতে, চিকিৎসা করাতে এবং ব্যবসায়িকসহ নানা কাজে এ দেশের মানুষ ভারতে যায়।

বেনাপোল অভিভাসন পুলিশের ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ২০২২ সালে ১০ লাখের অধিক বাংলাদেশিকে ভারতীয় ভিসা দিয়েছে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় দূতাবাস। এর মধ্যে শুধু বেনাপোল আন্তর্জাতিক স্থলবন্দর চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে গেছে ৫ লাখ ৭১ হাজার ৯৩৪ জন বাংলাদেশি; যার মধ্যে ২ দশমিক ৭৩ লাখ রয়েছে মেডিকেল ভিসা।

বেনাপোল বন্দর মানিচেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আবুল বাশার বলেন, ভারতে যেসব বাংলাদেশি যায় তাদের ৬০ শতাংশ হলো ভ্রমণ ভিসা। তবে ভ্রমণ ভিসায় গিয়ে ডাক্তার দেখানোতে বাধা নেই। তাই মেডিকেল ভিসা না নিয়ে গেলে যে ডাক্তার দেখানো যাবে না তা নয়। ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়েও শতশত বাংলাদেশি চিকিৎসা নিয়ে ফিরছেন।

বাংলাদেশে ভারতীয় দূতাবাসের প্রেস রিলেশন বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ২০২০ ও ২০২১ সালে করোনাভাইরাসের কারণে দুদেশে লকডাউন থাকায় সাধারণ মানুষের যাতায়াত কম ছিল। তবে ২০২২ সালে সবচেয়ে বেশি ভিসা দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও জানান, কোভিড-১৯ মহামারীর আগে ২০১৯ সালে বাংলাদেশি নাগরিকদের ১৬ লাখেরও বেশি ভিসা প্রদান করা হয়। ২০২১ সালে লকডাউন সত্ত্বেও বাংলাদেশে ২ লাখ ৩০ হাজারের বেশি ভিসা ইস্যু করা হয়। এর মধ্যে মেডিকেল ভিসা ছিল সর্বাধিক। ২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ১ লাখ ৯৬ হাজার মেডিকেল ভিসা ইস্যু করা হয়। বাংলাদেশে লকডাউন থাকা সত্ত্বেও মেডিকেল ভিসার জন্য আবেদন করার সুযোগ থাকায় এমনটা হয় বলে মনে করেন তিনি।

এই কর্মকর্তা আরও জানান, ২০২২ সালের মার্চের শেষ থেকে স্থলবন্দর ব্যবহারের উপর বিধিনিষেধ শিথিল করার কারণে ভ্রমণের হার বেড়ে প্রাক-অতিমারি পর্যায়ে পৌঁছাতে শুরু করেছে; যার মধ্যে ভ্রমণ ভিসাও রয়েছে।

“বাংলাদেশে আমাদের মিশন ও পোস্টসমূহ থেকে গত বছর জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১০ লাখের বেশি ভিসা ইস্যু করা হয়েছে; যার মধ্যে ২ দশমিক ৭৩ লাখ মেডিকেল ভিসা রয়েছে।”

করোনাভাইরাসের কারণে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে স্থলপথের কয়েকটি চেকপোস্ট বন্ধ থাকায় বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে যাত্রী পারাপার বেড়েছে বলে জানান ইমিগ্রেশন পুলিশের ওসি আবুল কালাম আজাদ।

তিনি বলেন, গত বছর বেনাপোল দিয়ে পারাপার হয়েছে ১৩ লাখ ৩১ হাজার ৯৯১ জন পর্যটক। এর মধ্যে ৬ লাখ ৮৮ হাজার ৮৮১ জন বাংলাদেশ থেকে ভারতে গেছেন; যার মধ্যে ৫ লাখ ৭১ হাজার ৯৩৪ জন বাংলাদেশি ও ১ লাখ ১৬ হাজার ৯৪৭ জন ভারতীয় নাগরিক রয়েছে।

তিনি আরও জানান, একই সময়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছে ৬ লাখ ৪৩ হাজার ১১০ জন। এর মধ্যে ৫ লাখ ৩৯ হাজার ৭২২ জন বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন এবং ১ লাখ ৩ হাজার ৩৮৮ জন ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন।

যশোরের টেংরা গ্রামের আবুল কালাম বিশ্বাস পাঁচ বছর ধরে ক্যান্সারের চিকিৎসা নিচ্ছেন ভারতের ভেলোরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে।

কালাম বলেন, “দেশে অনেক ঘোরাঘুরি করিছি। ভেলোরে যেয়ে অন্তত সুস্থ আছি। ডাক্তাররা খুব আন্তরিক। তাদের ব্যবহারের কারণে রোগীরা দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে।

"ওখানে রোগীর সঙ্গীদের থাকা-খাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা করতি হয় না। সঙ্গে যারা থাকে তাদের থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত হাসপাতাল কতৃপক্ষ করায় নিশ্চিন্তে থাকা যায়।"

শনিবার বেনাপোল চেকপোস্টে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কথা হয় মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার ডাশার গ্রামের মুজিবুর রহমানের ছেলে আকতার হোসেন ও মাগুরার বিনোদপুর গ্রামের শহিদুল আলমের ছেলে নাজমুল হাসানের। তারা চিকিৎসার জন্য ভারত যাচ্ছিলেন।

নাজমুল হাসান বলেন, চেন্নাই যাব। সেখানে সবই অচেনা; তারপরও সেখানে পৌঁছানোর পর থাকা ও খাবারের ব্যবস্থা, চিকিৎসক বেছে দেওয়া, চিকিৎসা সেবা, এমনকি কথা বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য দোভাষির ব্যবস্থাও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করে থাকে।