“হিসাব মতো এক লাখ ২০ হাজারের বেশি পর্যটক কক্সবাজারে অবস্থান করছেন। এই পর্যটকরা রোববার পর্যন্ত থাকবেন।”
Published : 12 Oct 2024, 01:21 AM
টানা চার দিনের ছুটিতে পর্যটকের ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে কক্সবাজার।
শরতের মিষ্টি রোদে আকাশে সাদা মেঘের সঙ্গে সাগরের ঢেউয়ের মিতালীর অপরূপ রূপে বিমোহিত লাখো পর্যটকের উপস্থিতিতে সৈকত জুড়ে যেন আনন্দ-উচ্ছ্বাসের মেলা বসেছে।
কক্সবাজারের আবাসিক হোটেল-মোটেল প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের ধারণা, এক লাখের বেশি মানুষ ঘুরতে এসেছে।
শুক্রবার সকাল থেকে দীর্ঘ সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টসহ নানা পর্যটন স্পট ঘিরে মানুষের উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। সৈকতের বালিয়াড়িতে মুক্তভাবে ঘোরাফেরা, সৈকতে সাজানো বিচ ছাতায় বসে শীতল হওয়া উপভোগ করতে যেমন দেখা মিলেছে তেমনি সাগরের লোনা জলে শরীর ভাসিয়ে স্নানমগ্ন ছিলেন সবাই।
অনেকেই সৈকতের ঘোড়ার পিঠে উঠে ছবি তোলায় ব্যস্ত ছিলেন, কাউকে আবার বিচ বাইকে চড়ে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়।
দরিয়ানগর, হিমছড়ি, ইনানী ও পাটুয়ারটেক সৈকত জুড়েও ছিল দিনভর পর্যটকের আনাগোনা।
কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার বলেন, “জেলার পাঁচ শতাধিক আবাসিক প্রতিষ্ঠানের প্রায় কক্ষেই বুকিং রয়েছে। শুক্রবার এক লাখ ২০ হাজারের বেশি পর্যটক কক্সবাজারে অবস্থান করছেন। তারা রোববার পর্যন্ত থাকবেন।”
হোটেল ব্যবসায়ীরা জানান, ১০ থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত ৯০ থেকে ৯৮ শতাংশ হোটেল রুম বুকিং রয়েছে। ১৪ থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত রুম বুকিং হয়েছে ৮৫ শতাংশ।
হোটেল ওশান প্যারাডাইস লিমিটেডের বিপণন বিভাগের কক্সবাজার অফিস প্রধান ইমতিয়াজ নূর সুমেল বলেন, “চার দিনের ছুটিতে আমরা এখন পর্যন্ত ৯৫ শতাংশ বুকিং পেয়েছি।”
স্যান্ডি বিচ হোটেল ও রেস্তোরাঁর ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও বৃহত্তর বিচ ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি আবদুর রহমান বলেন, “অনেকদিন পর টানা ছুটিতে পর্যটকে মুখরিত কক্সবাজার চেনা রূপে ফিরেছে। পর্যটক আসায় ব্যবসায়ীরা খুশি।”
হোটেল দি কক্স টু-ডের সহকারী মহাব্যবস্থাপক আবু তালেব শাহ বলেন, “আমাদের প্রতিষ্ঠানে সব কক্ষ বুকিং রয়েছে।”
তবে পর্যটক বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু আবাসিক প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছেন পর্যটকরা।
ঢাকা থেকে আসা স্কুল শিক্ষক রকিবুল ইসলাম জানান, শুক্রবার সকালে তারা সহকর্মীরা মিলে ৩০ জন কক্সবাজার এসেছেন।
“সবাই সৈকতের পরিবেশ ও প্রকৃতি উপভোগ করছেন নিজেদের মত। তবে স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে হোটেল ভাড়া একটু বেশি নেওয়া হচ্ছে।”
পাহাড়ের ঝর্ণা হিমছড়ি, সৈকতের আকাশ জুড়ে শরতের বিমুগ্ধ কথন দেখছিলেন ঢাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আফাজুল খানম। তিনি বলেন, “কক্সবাজার সত্যিই প্রকৃতির রহস্য ঘেরা। একেক ঋতুতে একেক পরিবেশ।”
চিকিৎসক দম্পতি আরিফুল আনোয়ার বলেন, “সন্তানসহ কক্সবাজার এসে সত্যিই আনন্দিত। ছেলে-মেয়েরা নিজেরা প্রকৃতি উপভোগ করছে।”
পর্যটক আগমন বেশি হওয়ায় আগে নিরাপত্তা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের এসপি মাহফুজুল ইসলাম।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “সৈকতে পোশাকধারী পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে টহল ও সাদা পোশাকের পুলিশ রয়েছে।
“টেকনাফ ও ইনানীসহ সব পর্যটন স্পটে ট্যুরিস্ট পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে অবস্থান ও কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে পুরো সৈকত নজরদারির আওতায় রয়েছে।”
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রবেশপথে তল্লাশি চৌকি স্থাপন, পোশাকধারীর পাশাপাশি সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ। এখনও কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।”
কক্সবাজারের ডিসি মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, “ভ্রমণপিপাসুদের বিচরণ নির্বিঘ্ন করতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছেন। কোথাও অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণের নিদের্শ দেওয়া আছে।”