উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে ফুটবল খেলেছে মৌ। ঢাকার ফুটবল লীগেও নিয়মিত খেলেছে।
Published : 09 Nov 2024, 12:13 AM
সুনামগঞ্জের হাওর উপজেলা দিরাইয়ের ফুটবল কন্যা মৌ রানী দাসের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে শুক্রবার দুপুরে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
তার মৃত্যুতে কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন স্বজন ও সহপাঠীরা।
১৭ বছর বয়সি মৌ রানী দাস দিরাই উপজেলার তাড়ল ইউনিয়নের ভাঙ্গাডহর গ্রামের সুষেন দাসের কনিষ্ঠ মেয়ে।
দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিল সে।
তার বাবা সুষেন দাস বলেন, “বৃহস্পতিবার সকালে একসঙ্গে পরিবারের সবাই নাস্তা করেছি। আমি পরে হাওরে কাজে চলে যাই। সকাল ১০টার দিকে শুনি, আমার মেয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
“ফুটবলই ছিল তার ধ্যানজ্ঞান। আমার দারিদ্রতার মধ্যেও তার ফুটবলের স্বপ্নপূরণের জন্য চেষ্টা করেছি। তার একমাত্র স্বপ্ন ছিল জাতীয় দলে খেলবে।”
“শুক্রবার চোখের জলে আমরা মেয়েকে শেষ বিদায় দিয়ে শেষকৃত্য সম্পন্ন করেছি,” বলেন তিনি।
শুক্রবার গ্রামের শ্মশানে তার শেষকৃত্য কার্যক্রমে অংশ নেন শত শত মানুষ।
এলাকাবাসী জানান, প্রত্যন্ত এলাকার মেয়ে মৌ প্রাথমিক স্কুল থেকেই ফুটবল খেলায় পারদর্শী ছিল। নিজ চেষ্টায় মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হওয়ার পরও খেলা চালিয়ে যায়। দিরাই উপজেলার স্বপ্নচূড়া স্পোটিং ক্লাব দিয়ে তার ফুটবলের যাত্রা শুরু হয়।
উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে ফুটবল খেলেছে মৌ।
সর্বশেষ ঢাকার ফুটবল লীগেও নিয়মিত খেলেছে।
জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন পূরণ করতে অজোপাড়া গাঁয়ে থেকেও সে কুমিল্লায় বিকেএসপিতে একমাস প্রশিক্ষণ নিয়ে ছিল।
নারী ফুটবলে উপেক্ষিত হাওরের প্রতিনিধিত্ব করার স্বপ্ন ছিল তার। সে সুনামগঞ্জ জেলা নারী ফুটবল দলের সদস্য ছিল। অনুধ্ব-১৭ নারী ফুটবল দলের বিভাগীয় দলে জাতীয়ভাবে খেলেছে।
দিরাই স্বপ্নচূড়া স্পোটিং ক্লাবের সদস্য ও সহযোগী খেলোয়াড় সুর্বনা আক্তার ইমা বলেন, “মৌ খুব ভালো ফুটবল খেলত। তার অনেক বড়ো স্বপ্ন ছিল জাতীয় দলে খেলবে। সেই স্বপ্নপূরণের সব সম্ভাবনা ছিল তার মধ্যে। কিন্তু কী অজানা অভিমানে সে নিজেকে শেষ করল জানি না। তার জন্য খারাপ লাগছে খুব।”
সুনামগঞ্জ জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল বখত সুমন বলেন, “মৌ খুবই ভালো খেলোয়াড় ছিল। জাতীয়ভাবে খেলার যোগ্যতা অর্জনের কাছাকাছি ছিল সে। উপজেলা থেকে জেলা, জেলা থেকে বিভাগীয় পর্যায়ে খেলেছে। আমরা তাকে নানাভাবে উৎসাহ দিয়েছিলাম। তার মৃত্যুতে হাওর এলাকায় নারী ফুটবলের ক্ষতি হয়েছে।”
দিরাই ভাটিবাংলা যুবকল্যাণ পরিষদের সভাপতি জিয়াউর রহমান লিটন বলেন, “মেয়েটির ফুটবলই ছিল ধ্যানজ্ঞান। পাড়া গাঁয়ে থেকে একজন নারী কিভাবে ফুটবলের জন্য অন্তঃপ্রাণ হয়ে ওঠেছিল তাকে না দেখলে বোঝা হত না। আমরা তাকে উৎসাহ দিতাম। সে নিজেকে জাতীয়ভাবে তুলে ধরার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিল।”
দিরাই থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “মৌ কিছুদিন আগেও ফুবল খেলেছে। মৃত্যুর খবর পেয়ে আমরা তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছি। পরে পারিবারিকভাবে শুক্রবার তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। এ ঘটনায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।”