ময়মনসিংহে কিডনির পাথরের অপসারণে অস্ত্রোপচারের পর এক অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে নগরীর চর ব্রাহ্মপল্লী এলাকার পেশেন্ট কেয়ার হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে বলে কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ফারুক হোসেন জানান।
নিহত রেখা আক্তার (২০) জেলার ত্রিশাল উপজেলার বালিপাড়ার মাহবুল আলমের স্ত্রী।
মাহবুল বলেন, তার স্ত্রী ১৫ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। তার গর্ভে দুটি সন্তান ছিল। সম্প্রতি পরীক্ষা করে তার কিডনিতে পাথর আছে বলে জানতে পারেন তিনি। এ অবস্থায় একজনের পরামর্শে তিনি স্ত্রীকে পেশেন্ট কেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যান।
গর্ভাবস্থাতেই কিডনির পাথর অপসারণ করা যাবে, কোনো সমস্যা না হওয়ার কথা ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল বলে নিহতের স্বামী মাহবুলের ভাষ্য।
তিনি আরও জানান, বৃহস্পতিবার রাতে রেখাকে পেশেন্ট ক্লিনিকে ভর্তি করান। প্রথমে রাত ৮টায় অপারেশন করার কথা ছিল। পরে ১০টায় অপারেশন করবে বলে জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু রাত ১০টায় অপারেশন না করে ১টার দিকে অপারেশন করে।
“অপারেশন শুরুর পর ওটির ভেতরে থেকে চিৎকার করার শব্দ শুনতে পাই। একজন নার্সের কাছে চিৎকারের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, অজ্ঞান করার ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে তাই এমন চিৎকার করছে। এরপর বহুবার আমরা ওটির ভেতর থেকে চিৎকার করার শব্দ শুনতে পাই।”
অপারেশনের পর পোস্ট-অপারেটিভ রুমে রেখে চিকিৎসকসহ সবাই চলে যান বলে মাহবুলের অভিযোগ।
তিনি আরও বলেন, “পরে রাত ৩টার দিকে আমি পোস্ট-অপারেটিভ রুমে গিয়ে রেখার কোনো সাড়া-শব্দ না পেয়ে নার্সকে বিষয়টি জানাই। নার্স এসে দেখে অন্য আরেকজনকে ডেকে আনেন। তিনি এসে দেখেই নার্সকে বলেন – রোগীকে তো মেরে ফেলছিস।”
মাহবুল জানান, পরে হাসপাতালের লোকজন তড়িঘড়ি অ্যাম্বুলেন্স ডেকে চুরখাই সিবিএমসিবি হাসপাতালে পাঠায়। সেখান নেওয়ার পর চিকিৎসক রেখাকে মৃত ঘোষণা করেন।
“সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে লাশ পেশেন্ট কেয়ার হাসপাতালে নিয়ে আসি। ভোর হলে এখানকার চিকিৎসকরা লাশ হাসপাতাল থেকে নিয়ে চলে যেতে বলেন। বিষয়টি জানাজানি হলে আশপাশের লোকজন জড়ো হয়। তখন মালিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হাসপাতালে তালা লাগিয়ে চলে যান।”
খবর পেয়ে পুলিশ এসে মরদেহ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
রেখার বড়ভাই আব্দুল জব্বার বলেন, “ওই হাসপাতালে অজ্ঞান করা ছাড়াই আমার বোনের অপারেশন করে। পরে অবস্থা খারাপ হলে আরেক হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। সেখানে নেওয়ার পথেই আমার বোন মারা গেছে। তার পেটের দুটি সন্তানও মারা গেছে। আমরা এর বিচার চাই।”
পেশেন্ট কেয়ার হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল ইসলাম রফিক।
তিনি বলেন, “কোন ডাক্তার অপারেশন করেছেন তা আমার জানা নেই। রোগীর লোকজন বিষয়টি বলতে পারবেন। আমি ঢাকায় আছি, ফিরে বিস্তারিত জানানো যাবে।”
অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়েছেন কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ফারুক হোসেন।
অবস্থা বেশি খারাপ না হলে গর্ভাবস্থায় কিডনির পাথর অপসারণে অস্ত্রোপচারের কোনো সুযোগ নেই বলে জানান জেলা সিভিল সার্জন ডা. নজরুল ইসলাম।