ফেনীতে আওয়ামী লীগ নেতাকে ডেকে রড দিয়ে পেটাল প্রতিপক্ষ

অনাদি রঞ্জন বলেন, “আমার ওপর যারা হামলা করেছে তারা সবাই মেয়র নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর অনুসারী।”

ফেনী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Feb 2023, 11:37 AM
Updated : 3 Feb 2023, 11:37 AM

ফেনীর পরশুরাম উপজেলায় দলীয় কোন্দলের জেরে বয়োবৃদ্ধ এক আওয়ামী লীগ নেতাকে মোবাইল ফোনে কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে রড় দিয়ে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় নয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার রাতে পরশুরাম উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনার পর আহত আওয়ামী লীগ নেতা বাদী হয়ে মামলা করেন। তারপর অভিযান চালিয়ে নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান পরশুরাম মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।

আহত ৬৫ বছরের অনাদি রঞ্জন সাহা পরশুরাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। তিনি এখন ফেনী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এ ঘটনায় গ্রেপ্তার আটজন হলেন- উপজেলার দক্ষিণ কোলাপাড়া গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমান (৩৫), সলিয়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম (৫১), উত্তর বাউরখুমা গ্রামের মোহাম্মদ ইব্রাহিম (৪৫), বেড়াবাড়িয়া গ্রামের মোহাম্মদ এয়াকুব ওরফে ভুট্টু (৩৮), উত্তর গুথুমা গ্রামের মিজানুর রহমান চৌধুরী (৪৪), উত্তর গুথুমা গ্রামের জাহিদুল ইসলাম (২৮), সলিয়া গ্রামের আবদুল মান্নান (৩৪) এবং একরামুল হক চৌধুরী পিয়াস।

তারা সবাই স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পরশুরাম পৌরসভার মেয়র নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান, সম্প্রতি একটি জানাজায় অংশ নিতে গিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন মজুমদারের সঙ্গে বিরোধে জড়ান মেয়র নিজাম উদ্দিন। এরপর লাঞ্ছিত করা ও প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ এনে দুজনই থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। একে অপরকে দোষারোপ করে সংবাদ সম্মেলনও করেছেন।

অনাদি রঞ্জন সাহা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। দুই নেতার বিরোধের জেরে তার ওপর হামলা করা হতে পারে বলে ধারণা নেতাকর্মীদের।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অনাদি রঞ্জন সাহা বলেন, “মোবাইল ফোনে উপজেলার সলিয়া এলাকার একজন কর্মী আমাকে ফোন দিয়ে বলেন, মেয়র সাহেব দলীয় কার্যালয়ে আমাকে ডেকেছেন। কার্যালয়ের সামনে আসতেই আনোয়ার হোসেন নামের একজনের নেতৃত্বে আমার ওপর হামলা করা হয়। তারা আমাকে লোহার রড দিয়ে পেটাতে শুরু করে।”

“তখন আমি চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন আসে। তখন হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। লোকজন আমাকে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে।”

কী কারণে হামলা হয়েছে এ নিয়ে কিছু না বললেও অনাদি রঞ্জন বলেন, “আমার ওপর যারা হামলা করেছে তারা সবাই মেয়র নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর অনুসারী।”

তবে অভিযোগের বিষয়ে জানতে মেয়র নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। খুদে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া মেলেনি।

পরশুরাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন মজুমদারের নিকটাত্মীয় ও ঘনিষ্ঠ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ইয়াসিন শরীফ মজুমদার।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “হামলাকারী আনোয়ার হোসেন একজন মাদক কারবারী। তাকে সবাই পরশুরাম পৌরসভার মেয়র সাজেলের (মেয়রের ডাক নাম) সহযোগী হিসেবেই জানে। সে হামলার নেতৃত্ব দিয়েছে।”

পরশুরাম মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম শুক্রবার বলেন, এ ঘটনায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন অনাদি রঞ্জন সাহা। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের শুক্রবার সকালে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অপর আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

আহত অনাদি রঞ্জন সাহাকে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে তাকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

আওয়ামী লীগ নেতার স্বাস্থ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) রবিউল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “অনাদি রঞ্জন সাহাকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়েছিল। তার পায়ের একাধিক স্থানে রড দিয়ে পিটিয়ে জখম করার আঘাত রয়েছে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফেনী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।”