ফরিদপুরে ৩০০ কোটি টাকার পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনের আশা

চলতি মৌসুমে এ জেলায় এক হাজার ৮৯০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজের আবাদ হয়েছে বলে জানায় কৃষি বিভাগ।

ফরিদপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 March 2024, 04:14 PM
Updated : 15 March 2024, 04:14 PM

পেঁয়াজের সাদা কদম শুকিয়ে বের হয়ে কালো দানা বা বীজ; যার বাজার দর আকাশ ছোঁয়া। স্থানীয়রা এর নাম দিয়েছেন ‘কালো সোনা’।

একটা সময় পুরোপুরি আমদানি নির্ভর থাকলেও প্রতিনিয়ত দেশে কালো সোনা খ্যাত এই পেঁয়াজ বীজের আবাদ বাড়ছে। বর্তমানে দেশে পেঁয়াজ বীজের ৫০ শতাংশ জোগান দেয় ফরিদপুরের চাষীরা।

চলতি মৌসুমে এ জেলায় সবমিলিয়ে পেঁয়াজ বীজের উৎপাদন ৩০০ কোটি টাকার বাজার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা কৃষি বিভাগের।

যদিও পরাগায়নের অভাবে প্রত্যাশার তুলনায় পেঁয়াজ বীজের উৎপাদনের পরিমাণ কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে ফরিদপুরের ৯টি উপজেলায় পেঁয়াজ বীজের আবাদ হয়েছে এক হাজার ৮৯০ হেক্টর জমিতে। যা থেকে প্রায় সাড়ে সাত টনের বেশি পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে সদর উপজেলায়, প্রায় ২০৮ হেক্টর জমিতে।

গত বছর এ জেলায় এক হাজার ৮৬৭ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজের আবাদ হয়েছিল। সে হিসেবে এ বছর আবাদের পরিমাণ বেড়েছে। ভাল দাম পাওয়ায় কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে। এ ছাড়া সরকারের বিশেষ তদারকি থাকায় স্থানীয় কৃষি দপ্তরও এই পেঁয়াজ উৎপাদনে কৃষকদের নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করছে।

ফরিদপুরের অম্বিকাপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর এলাকার লাভলি আক্তার ও ইমতাজ মোল্লা দম্পতি এক যুগ ধরে পেঁয়াজ বীজ চাষাবাদ করছেন। দুই বিঘা দিয়ে শুরু করে এখন তা বাড়িয়ে ৪০ বিঘায় চাষ করেছেন।

এক সময় তাদের নুন আনতে পান্তা ফুরাত। কিন্তু এখন এই পরিবার কোটিপতি। নিজস্ব জমিতে বহুতল ভবনে নির্মাণের পাশাপাশি জীবনযাপনে এসেছে পরিবর্তন। দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক ছেলে আর চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া এক মেয়ে নিয়ে এখন তাদের ব্যয়বহুল সংসার। যা এই কালো সোনা খ্যাত পেঁয়াজ বীজের বদৌলতে ধরা দিয়েছে।

জীবন বদলে যাওয়ার গল্প শোনান লাভলি আক্তার। তিনি বলেন, “বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে এসে দেখি শ্বশুর বাড়ির লোকজন পেঁয়াজ বীজের চাষ করছেন। পরে স্বামীকে এ চাষে সহায়তা করি। এতে প্রথম বছর ভালো আয় হয়। পরে আর ফিরে তাকাতে হয়নি।”

লাভলী জানান, আবহাওয়া ভালো থাকলে এবার বিঘা প্রতি দুই থেকে আড়াই মণ পেঁয়াজ বীজ পাওয়া যাবে। প্রতি বিঘা জমিতে এই বীজের আবাদ করতে এক লাখ টাকারও বেশি খরচ হয়। সেই হিসাবে সবমিলিয়ে তাদের এবার প্রায় কোটি টাকার মতো লাভ থাকবে।

ফরিদপুর সদর কৃষি অফিসার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, বরাবরই এ জেলার মাটি ও আবহাওয়া পেঁয়াজ বীজ আবাদের জন্য উপযোগী। মূলত এখানে তিন ধরনের পেঁয়াজ আবাদ হয়। সারা দেশের মধ্যে পেঁয়াজ বীজ আবাদে ফরিদপুর সবসময় এগিয়ে; যা দেশের চাহিদার ৫০ শতাংশ মিটিয়ে থাকে।

চাষীরা জানান, এ বছর মৌমাছির অভাবে এই পেঁয়াজ বীজের গাছে পরাগায়নের মাত্রা কমে এসেছে। হাতের তালু বুলিয়ে এক ফুলের রেণুর সঙ্গে আরেক ফুলের রেণুর পরাগায়নের চেষ্টা করছেন তারা। কিন্তু এতে প্রাকৃতিক পরাগায়নের মতো ভালো ফলন হয়নি। আর তাই গত বছরের চেয়ে কিছু বেশি জমিতে চাষ হলেও এবার উৎপাদন কমে হবে বলে ধারণা তাদের। তবে এই সুযোগে পেঁয়াজ বীজ আমদানিরও আশঙ্কাও রয়েছে।

তবে কৃষকদের দাবি, ভারত থেকে পেঁয়াজ বীজ আমদানি করা হলে তা সার্বিকভাবেই ক্ষতি ডেকে আনবে; কেননা তাদের বীজ নিম্নমানের আর ফলনও ভালো হয় না।

ফরিদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, গত বছর দাম ভাল পাওয়ায় এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পেঁয়াজ বীজের আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া ঠিক থাকলে এবার সাড়ে সাতটন বীজ উৎপাদন হবে; যার বাজার মূল্য কমপক্ষে ৩০০ কোটি টাকা।

জেলার পেঁয়াজ বীজ চাষীদের সমস্যা নিরসনে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তাদের সব ধরনের পরামর্শসহ প্রয়োজনীয় সাহায্য-সহায়তা দিচ্ছে বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।